বিনু বালা রানী
- এস আই তানভী ১৯-০৪-২০২৪
একযুগ সমান বয়স নিয়ে
এসেছিলো সে এই সংসারে,
মোট বয়স এখন দুই যুগ তার
অর্ধেক কেটে গেছে ভীষণ ঘোরে।
দুই ছেলে এক মেয়ে মরেছে
আঁতুড়ঘরে, জন্মের সাথে সাথে,
বাকী দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে
বেঁচে আছে সে; 'বিনু বালা রানী'–হাভাতে।।
স্বামী তার বিনয় কুমার
মাঠে-ঘাটে– অন্যের ঘরে খাটে,
দিন শেষে যা পায় তা-ই নিয়ে সুখে
বকুল তলার হাটে, হাতে হাতে তাস বাটে।
অবুঝ বালিকা হয়েছে সংসারী, জননী
সংসার বাঁচাতে দিনের আলোয় 'বিনু বালা রানী',
নিজেও খাটে ঝিঁ-এর কাজে, অন্যের ঘরে;
তবুও সংসারে তার– চাঁদের আলো কখনো পড়েনি।
সকাল সন্ধ্যা ঠাকুর ঘরে 'বিনু বালা রানী'
চোখের জলে ভেসে ঠাকুর কে যায় বলে–
'ঠাকুর, স্বামীকে আমার মানুষ করো,
দূর করো অভাব; অন্ন দাও সকলের থালে,
ছেলে-মেয়েদের কাপড়চোপড়
ছোট হচ্ছে দিনে দিনে,
অসুখ-বিসুখ ঘরের মাঝে আসন পেতেছে;
উদ্ধারের পথ নেই তোমার কৃপা বিনে।।'
তবুও শুনে না ঈশ্বর তার আর্তি,
কমে না অভাব, 'বিনয়'ও হয় না ভালো,
একযুগ ধরে দেখে আসছে সে–
এখানে শুধু মহাকালের উজ্জ্বল কালো।।
কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল ;
হায়! শুকিয়ে গেছে কবে,
ঈশ্বর বুঝি থাকেন সুখে ও'পাড়ায়
টাকাওয়ালা বাবুদের ভদ্র পল্লীতে।
বছর শেষে প্রতিবছর দূর্গা সেজে তিনি
লক্ষ টাকার গয়না পড়ে, শাড়ি পড়ে
ভক্ত মাঝে এসে- কী যে দেখে যান
দিন দশেক বসে থেকে জৌলুস ঠাকুর ঘরে???
সাজসজ্জা আর রূপ-লাবণ্যে ভরপুর
প্রতিমা দূর্গা দেবীর মুখ চেয়ে;
'বিনু বালা রানী' কত কিছু ভাবে
চোখের নোনা জলে নেয়ে----।
'বিনু বালা রানী' ভাবে তখন-
মন্দিরের অদূরে দাঁড়িয়ে;
'ভক্তরা কাঁদে, শত সমস্যায় ভোগে–
কেমনে থাকে ঈশ্বর হাসিমুখ নিয়ে!'
মন্দিরে মন্দিরে চলছে দূর্গা দেবীর আরাধনা
বাজছে জোরে ঢোল আর ঢাক,
তার ঘরে চাল নেই, আরতির সাজ নেই
নেই ছেলে-মেয়েদের নতুন পোষাক।
বাবুদের যত ছেলেপুলে সব
রঙচঙে কাপড় পড়ে,
মন্দিরে মন্দিরে প্রতিমা দেখে
আনন্দে ক্লান্ত হয়ে ফিরছে ঘরে।
তার ছেলে মেয়ে ঘরেতে বসে
ছেড়া কাপড়ে করে সুঁই সুতার চাষ,
হায় ঈশ্বর; দেখে না চেয়ে ভুলে করে
'বিনু বালা রানী'র ঘরে দুঃখ বার মাস।
তবুও সে, সব ভুলে; চোখে নতুন জল এনে
শুধু তোমার পূজা করে চায় একটু খানি সুখ,
তার ভক্তি গ্রহণ করো, হাসিমুখে আশীষ করো
দূর হোক, দূর হোক এক 'বিনু বালা রানী'র দুখ।
থাকে যদি আজন্মকাল অভাব-অনটন;
তোমার অবুঝ ভক্তের মনে অঢেল কষ্ট,
কেমন করে দিবে দুধকলা- আরতি,
কেমন করে ফুলেল পূজায় করবে তুষ্ট?
তবুও 'বিনু বালা রানী' প্রবল বিশ্বাসে;
এসেছে এবারও দূর্গা দেবী'র মুখ দর্শনে–
হায় ঈশ্বর; তোমার করুণা পাওয়ার আশাতে,
যদি দেখো একবার ভুলে পরম নয়নে....।
বিশাল পৃথিবীতে শুধু এক 'বিনু বালা রানী';
একা ভাসে না দুঃখে, অভাব অনটনে,
খোঁজ নাও ঈশ্বর; তার মতো হাজার হাজার–
'বিনু বালা রানী' কাঁদে গোপনে, শুকনো নয়নে।
------------------
০৭/১০/১৯ইং
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।