বীরাঙ্গনা সুফিয়া
- এস.এম. আরিফ ২০-০৫-২০২৪

আমি বীরাঙ্গনা বলছি
আমি ৭১'র মিলিটারি ক্যাম্প থেকে বলছি।
হে বাঙালি;
চোখের সামনে ধর্ষণের আর্তনাদে
তোমাদের জন্য
আমার কন্ঠস্বরের অস্ফুট হুশিয়ারি বাণী
মিলিয়ে গিয়েছিলো সেদিন;
যুবতির বিবস্ত্র দেহে-হিংস্রতার দাগ-
সেই কলঙ্কে
বাংলার সীমারেখা অঙ্কিত হলো
আমার চোখের সামনে!
বেনেটের খোঁচায় খোকা'কে
খেলো শকুনের দল!
হাত পা বেঁধে খোকার বাবাকে ফেলে রাখলো
ঘরের এক কোণে -
আমার দুর্বল বিবস্ত্র দেহের উপর
হুমড়ে পরা পাকসেনা!
আমি তখনও বলেছিলাম আমি বীরাঙ্গনা।
পাকিদের কানে কানে বলে দিয়েছি
আমার চোখের জল পলি বয়ে আনবে যমুনায়!
আমার ভীতু চোখ ইতিহাস হবে!
তোদের মুখে থু দিয়ে
অবাক চোখে বিশ্ব দেখবে লাল সবুজের পতাকা!

আমি ,
সেই বীরাঙ্গনা
তেরো বছরের ধর্ষিতা কিশোরীর রক্তের কসম করে বলছি
এ দেশের মাটির ঘ্রাণে
গাঙচিল নেমে আসে মধুমতির তীরে
ক্ষুধার্ত কুমার-কুমারীও মাটির গন্ধ ভুলতে পারে না।
খোকার অপলক নয়ন
প্রকৃতির যৌবন দেখবে বলে বসন্ত আসে
স্বাধীন সুরে ডেকে যায় কোকিল
বাঙালি মানুষ বোলেই
অতিথি পাখির অভয়ারণ্য বাংলাদেশ।

আমি ইতিহাসের পাতা থেকে নয়
আমার হৃদয়ের ডায়রিতে বুকের তাজা রক্ততে লিখা
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা বলছি।
আমি বীরাঙ্গনা বীরশ্রেষ্ঠ সন্তানের মা বলছি;
পিচাশ-দোসর হুশিয়ার!
বাঙালি রত্নগর্ভা জননীর সুঠাম দেহী হামিদুর মরে নাই
মায়ের আঁচলেতে আঁকা মানচিত্রে ওরা উদ্ভাসিত!
ওরা এখনো যুবক
প্রশিক্ষিত দুরন্ত বীরের মাঝে লুকিয়ে থাকে
গেরিলা হয়ে তোর কলিজা ছিড়ে নেবে
এক ঝটিকায়!
দুরন্ত কিশোরীর উড়ন্ত বেণীর আঘাতে
ভেঙ্গে যাবে তোর পাজরের হাড়!
পতাকার পতপত শব্দে শুনবি স্টেনগানের আওয়াজ!
আমি বীরাঙ্গনা বলছি পালিয়ে যা শুকনের দল।
পালিয়ে যা!
আর শেষবারের মতো দেখে যা
ঝাঁঝরা বুকে পিতা মুজিব দাঁড়িয়ে
সাথে ত্রিশ হাজার বীরাঙ্গনা
আর আমি সুফিয়া!

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।