একাত্তরে রিফিউজি
- এ কে সরকার শাওন - বাঁশিওয়ালা ১৯-০৪-২০২৪

একাত্তরে রিফিউজি হলাম,
কাপড়িয়া পট্টির বাসা ফেলে!
পাকি অত্যাচারে ঘুরি প্রান্তিক-প্রান্তরে,
আশ্রিত হই বাসন্ডার ইছানীল স্কুলে!

বড় ভাই যদিও চুপচাপ,
ছোট শশব্যস্ত ছোটাছুটি করে;
বাবার মন বেজায় রুষ্ট ,
মা ভীষণ টেনশনে মরে!

ছোট ছোট কচিমুখ
মাত্র ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়ে!
বাবা রাস্তায় বসিয়ে দিলেন
পান-বিড়ি'র দোকানী করে!

আমি তাদের ঘাড়ের ফাঁকে
মাঝে মাঝে ফিক করে হাসি!
দোকানীগণ ব্যস্ত সদা
বিক্রি বেশ তাই মহাখুশী!

স্কুলের জানালা ভেদ করে
মায়ের সদা সজাগ দৃষ্টি!
অষ্টপ্রহর ইষ্টনাম জপে
যাদুমণিদের না হয় অনষ্টি!

বাবা করে ছুটাছুটি
মুক্তিদের খোঁজখবর রাখে!
শিশুদের দোকানী করে
শুধুমাত্র নয় মুনফার শখে!

বাবা বলে কীর্তিপাশায়
মিলিটারির ভয় নাই!
মা বলে ছয় ছেলেমেয়ে
নিয়ে কেমনে অতদূরে যাই!

কীর্তিপাশায় চেয়ারম্যান
লোক ভাল অতি!
একাত্তরে ঠিক ছিল না
তাদের কারো মতি গতি!

কিছুদিন পর ফিরলাম
স্বর্গসুখের আপন আলয়;
রাজাকারে ভয় বেশী,
ওরাই সব সর্বনাশ ঘটায়!

রাজাকারেরা ঘুর ঘুর করে
কেমন যেন বাঁকা চোখে চায়!
স্কুলের খাট্ট হুজুরের কুকর্ম
নিয়ে সবাই বড় দুশ্চিন্তায়!

তারপর মিলিটারির তাড়ায়
ঝালকাঠি থেকে হঠাৎ বিদায়!
সুগন্ধা, কীর্তনখোলা পার হয়ে
ভোরে ঢাকার বুড়িগঙ্গায়!

পরদিন বুড়িগঙ্গা শীতলক্ষ্যা
পার হয়ে বিশাল মেঘনায়;
প্রিয় মানিকনগর ঘাট দেখে
খরা দু'চোখ প্লাবনে হারায়!

মেঘনার টলমলে জলে
সাঁঝের বেলায় সূর্য্য হারায়!
আমারা গজেন্দ্র গতিতে চলি
রাখালের পাল চলে ডানে বায়!

শাহবাজপুর ছেড়ে আমরা
যমুনাই খালের খেয়ায়!
কেউ কেউ বাবাকে চিনে ফেলে,
"গনি ভাই না? আমারে চিন নাই ভাই!
আমি এলু গো পশ্চিম পাড়ার,
ব্যাপারী বাড়ীর, তোমার মামতো ভাই!"

যমুনাই পাড় হয়ে সদলে চলিলাম
জন্মস্থান সরকার বাড়ীর দিকে;
ইতিপূর্বেই গ্রামে পদার্পণের খবর
রটে গেল মুহুর্তেই চারিদিকে!

শাওনাজ, ঢাকা!
২৯ নভেম্বর ২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।