জীবন লতা
- মন্ডল মোঃসুমন আহমেদ জয় - জীবন কথা ২৫-০৪-২০২৪

মাটির উদর চিরে লতার জন্ম
মায়ের উদর চিরে আমার জন্ম,
এর মাঝে পার্থক্য কি?
ছোট ছোট পাতা চমৎকার দেখতে
শিকড় দিয়ে আকড়ে ধরে মাটির মমতা।

আমিও তেমনি উচ্ছল মহানন্দে বেরে উঠছি
সবে মাত্র হামাগুড়ি দিয়ে মাতিয়ে রাখি সারা উঠোন,
আমি সবুজ দেখি,আমি হিমেল হাওয়ার অনুভব করি
মিষ্টি ফুলের সুঘ্রাণ গ্রহন করি-
সবে ন মাস এই ভুবনের সাথে দেখা।

ছোট ছোট পাতা গুলো আজ পরিপক্ক
নতুন পাতায় ভরে গেছে লতার সমস্ত দেহ,
ডালপালায় নতুন শাখা প্রশাখার প্রবাহ-
বাহারি ফুলে সেজেছে মহানন্দা লতাখানি।

আদরে আদরে আমার শৈশবে পদার্পন
বলতে শিখেছি একটু আধটু,
মা আমায় যেনো একটুকরো হিরে মনে করে
বাবা আদরে করে চুমো দেয় কপালে"
আঙিনায় কত কি দেখা হলো!
বাবা এটা কি?মা ওটা কি?
জানতে ইচ্ছে হলো সাজানো গোছানো পৃথিবীটাকে।

পাখির সাথে বন্ধুত্ব প্রকৃতির
প্রতিনয়ত নিয়ম করে পাখিরা লতার কাছে আসে প্রেম নিতে,
সখ্যতায় যৌবন বিলিয়ে কলঙ্কিত পাখির কাছে
পাখিরা কখনো লতাকে ছেরে যায়নি।
ভালোবেসে আগলে রেখেছে শত সহস্র যুগ ধরে লতাকে
লতাও আজ অনেক গুলো ফলের অলঙ্কার পরেছে,
কি যে অপুর্ব লাগছে আজ লতাকে!
তা বলে বোঝাবার ক্ষমতা বিধাতা আমায় দেন নি।

চেনা জানা হলো নিজের আঙ্গিনা
এবার নাকি অ আ ই ঈ শিখতে হবে!
যেগুলো নাকি পৃথিবীটা চোখের সামনে এনে দেয়,
আগ্রহ আরো প্রখর হয়ে যাচ্ছে
জানতে ইচ্ছে করছে হিমেল হাওয়া -
আর গ্রামের ওপাড়ে নেমে থাকা আকাশটাকে।
আনন্দে আটখানা হয়ে থাকি সারাক্ষন
খাওয়া ঘুম আর রঙিন পৃথিবী জানতে -
সর্গসুখ অনুভুত হয়।

আট বছরের কচি মৌনতা নিয়ে
আমি আবার গেলাম লতার কাছে
দেখি সে লতা আর নেই,তবে অনেক অনেক লতার আগমন ভুবনে"
হাজারো বাহারি লতায় আর ফল ফুলে পরিপুর্ন এই প্রাঙ্গন।
পাখিদের গানে গানে মুখরিত চারিদিক
আমি আনন্দে নাচতে থাকলাম প্রান্তর ফেরে,
আমি মায়া ভরা এই রঙিন ভুবনের প্রেমে পরি বার বার-
এত আনন্দ আহ্লাদ কোথায় রাখি?
আমারো অনেক বন্ধু আছে
আমিও ছুটে চলি পাড়ায় পাড়ায়,
প্রিয়দের সাথে খেলি আর আনন্দে হারাই।

অনন্ত আদি কালের নিয়মে লতা গুলো হারিয়ে যায়
আবার আগমন ঘটে নতুনদের,
কিন্তু আমি ভাবি এগুলো দেখে সুখে কাটবে আমার জীবন-
এভাবেই সমস্ত সুখ গুলো অমর হয়ে থাকবে আমার জীবনে"
নাহ্,আমার পরিবর্তন যেনো থামছে না,
নিয়মের শিকলে বাধা পরতে হচ্ছে প্রতি মুহুর্তে-
ইচ্ছে আর আনন্দ যেনো চলে যাচ্ছে অন্য কারো হাতে।
আমি কেনো পারিনা পাখিদের মত উড়তে?
কেনো নিয়মের কাছে নিজেকে অর্পন করতে হয়?
আমি তো ভেবেছিলাম শৈসবই আমার অনন্ত জীবন,
আজ আমি আঠারো বছরে পদার্পন করেছি-
কৈশর পেরিয়ে যৌবনের ঢেউয়ের মাঝে ভেসে চলেছি।
কত কিছু শিখেছি এই রঙ বেরঙের পৃথিবী নামক পাঠশালায়
এবার বুঝি লতার মত জীবন আমার,
আমিও হারিয়ে যাবো কোনো এক গহিন অরন্যে"
ভাবতেই শিউরে উঠে বুকের বামপাশটা-
স্বল্প সময়ের জীবনে অনেক সুখের আশা করি।

নিজের সাথে চুক্তি করি অন্যকে আপন করতে
যেমনটা করেছিলো পাখির সাথে লতা,
এখন বুঝতে পারি সুখ বলতে কিছু নেই-
বেঁচে থাকার জন্য আপন পর খেলা।
একে অপরের পরিপুরক হয়ে
ঋণ শোধিয়ে যাওয়া,
তবুও মানুষ জন্ম নেয়-
সুখের প্রলেপে মোড়া ভুবনকে লুফে নেয়"
ভালো থাকতে ভালো রাখতে কত কিছু করা।

বার্ধক্যে পদার্পন করেছি
কেউ পাশে বসেনা,
আমি সেই শৈশব মনে করি এখনো-
আমি চলতে পারিনা ঠিক করে।
মনে পরে সেই লতার ছোট ছোট অংকুর
আমি এখনো ভাবি এমনই আমার জীবন,
আমি বুঝিনি লতার মত আমারো হবে মরন।

২৯/১২/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।