মাগো! যদি একবার আসতে
- এস আই তানভী ২৯-০৩-২০২৪

.
তখনও বৈশাখ আসতে দশ বার দিন বাকি-
হঠাৎ ঝড়! এ কোন ঝড়? কোন কালবৈশাখী?
রাতের প্রথম প্রহর কেটে গেছে, দশটা বাজে প্রায়
একঘরে মা, একঘরে বিবি, আঁচল তখনো কাজে, হায়!
মায়ের ঘরখানা ছিলো নড়বড়ে, হয় নি এখনো মেরামত;
যেটুকু আয়- খেতেই অকুলান, খরচায় শূন্য সাথ সাথ।

ঝড়ের গতি দেখে আঁচলের বুক কাঁপে, ভাবে-
শুধু ঘর নয়, মা আর বিবিরও প্রাণ বুঝি যাবে!
মা'টাও তার বড্ড জেদি, যাবে না বৌমার ঘরে
নিজ বিছানাতে র'বে পড়ে, যদিও যায় সে মরে,
তার উপর অন্ধ সে; বহুদিন হলো, দেখতে পায় না চোখে-
এসব ভেবে, ঝড়ের চেয়েও বেশি ঝড় আঁচলের শক্ত বুকে।
কাজের জায়গাতে বসে বিপদ হতে মুক্তির দোয়া পড়ে
থামলে ঝড়, যত দ্রুত পারে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরে।

চোখ বড় বড় হয়, হায়! মায়ের ঘরখানা মাটিতে লুটায়
রাত সাড়ে বারটা, সে টোকা দেয় বিবির দরজায় -
'মা কোথায়? ঘরতো শেষ! মা কি মুচড়ে যাওয়া ঘরের নিচে?'
আশ্বস্ত করে বিবি বলে, 'স্থির হও, মা আছে, আছে বেঁচে,
ঘুমোচ্ছে আমার বিছানায়, ঝড়ের শুরুতে জোর করে
টেনে হেঁচড়ে মা'কে এনে রেখেছি আমার ঘরে।'

মায়ের মুখখানি দেখে, আঁচল মহান স্রষ্টার কাছে
শুকরিয়া জানায় বারবার আনন্দাশ্রুতে ভিজে,
বিবিকে কাছে ডেকে মমতায় জড়িয়ে নেয় বুকে-
'স্রষ্টা তোমার করবে ভালো, বিবি তুমি থাকবে সুখে।'
সেই নিদারুণ দিনে অকাল ঝড়ে ভেঙে পড়া ঘরখানা
হয়েছে মেরামত সুন্দর করে, হয়েছে না হয় কিছু ধারদেনা।

সেই ঝড়ের পরের বছর মা যে আর রইলো না নতুন ঘরে
প্রায় পাঁচটা বছর হলো, ভুলেও আসলো না একবার ফিরে।
সে সময়ের অনেক ঘাটতি আজ হয়েছে পূরণ,
তবুও শূন্যতা, মা ছাড়া আঁচলের নিরানন্দ ভুবন।

'ঐ মাটির ঘরে কী এমন সুখ! মাগো, এসে যা একটি বার
দেখে যা, সুখের মাঝেও তোর ছেলের বুকে কত্ত হাহাকার।'
----------------
১৮/০১/১৯ইং

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

Tanvi
২২-০১-২০২০ ০৮:১৫ মিঃ

ঐ মাটির ঘরে কি এমন সুখ! মাগো, এসে যা একটি বার