নির্লজ্জভাবে বেঁচে আছি
- এস আই তানভী ১৬-০৪-২০২৪

.
(বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে নিয়ে বিশেষ লিখা)

(১)
অযাচিত, অপ্রয়োজনীয়, অর্থের অপচয় আর
হাজার ফুলের বাগান শূন্য করে কিসের এই
ভালোবাসা দিবস? আমি তাজ্জব হয়ে যাই-
অন্যের সংস্কৃতিচর্চা করে নিজের কথা ভুলে থাকি।

কিসের ভালোবাসা দিবস? ভালোবাসা কোথায়?
বৃদ্ধাশ্রমের পড়ে আছে বাবা-মা, বৃদ্ধ মায়ের পা
শিয়ালে টেনে খায়, বস্তাবন্দী করে মাকে ফেলে যায়
ব্রীজের মাথায়, স্বার্থান্ধ সন্তান কেটে নেয় বাবার পা,
আবার প্রতিষ্ঠিত সন্তানের পিতা-মাতা ভিক্ষাজীবী।

(২)
কিসের ভালোবাসা দিবস? কোথায় ভালোবাসা?
আমি দেখতে পাই না সহানুভূতি, সদাচরণ, পাই না
ভালোবাসার কোন ঘ্রাণ, সুবাতাস।
কোথায় ভালোবাসা? যখন পারভীনের সন্তান প্রসব হয়-
সুনামধন্য হাসপাতালের সামনে রাস্তার মাঝখানে; আবার
সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জীবন্ত ভ্রুণ ফেলে যায়
শহরের কোন ডাস্টবিনে, বিড়ালে মজা করে খায়।

(৩)
কিসের ভালোবাসা দিবস? স্বামী আর সন্তানের লাশ
খাটের নিচে মেঝেতে ফেলে রেখে পরকিয়া;
কামবাসনায় মত্ত নারী, ছি!ছি!ছি!
আমি লজ্জার মাথা খেয়ে ফেলেছি, বাড়ির ছোট্ট
গৃহকর্মীকে দাঁড়িয়ে রাখি চাইনিজ হোটেলের বাইরে
ভিতরে তার বয়সী সন্তান আর প্রিয়তমাকে নিয়ে
ঘন্টার পর ঘন্টা মজা করে খাই, ট্রেনের এসি কামড়ায়
শুয়ে শুয়ে পরিবারের সাথে শহর হতে গ্রামে আসি
কাজের মেয়েটার জন্য একটা সাধারণ আসন কিনতেও
আমার বিবেকে বাঁধে প্রচন্ড, ছি!ছি!ছি!
আহ! বেচারি পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে এসেছে
বারবার বন্ধ দরজার ছোট কাঁচ দিয়ে দেখেছিলো-
এসি কামড়ার ভেতরটা, যদি ডাক দিই একবার।
ছি! ছি! ছি! আমি এখনো পশু হয়ে যাই নি।।

(৪)
কিসের ভালোবাসা দিবস? ভালোবাসা কোথায়?
যখন মূল প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত উধাও
ন্যায় বিচারের জন্য নয় বছরের ধর্ষিতা শিশুকে নিয়ে
সংবাদ সম্মেলনকারী পিতা হতে হয়, মেয়েটা
লজ্জায় আমার বুকে মাথা লুকায়----।
নিজের ক্যালকুলেটর ফেরত চাইতে গিয়ে ফিরে আসি
রক্তাক্ত হয়ে, ক্ষমতাবান তো তারা'ই; তাই বিচার
দেবার মতো কাউকে খুঁজে পাই না।।

(৫)
ভালোবাসা! কোথা থেকে পাও এই নোংরামির স্পর্ধা?
এতিম-অসহায় কত শিশু পথে পথে ঘুরে,
বাঁচার জন্য আবর্জনার স্তুপে খাবার খুঁজে;
দেখেও দেখি না, অপচয়ে হাত কাঁপে না।।
সেদিনের ছোট কাজের মেয়েটা আজ সাবালিকা,
আমার বাড়িতেই গর্ভবতী, গলা চেপে গর্ভপাত করাই;
অপরাধী তো আমারই সন্তান, সব চাপা রাখি
কোল বালিশের নিচে- নিজের কাছে কখনোই
নিজেকে নিয়ে, বিবেককে নিয়ে লজ্জাবোধ করি নি।

(৬)
ভালোবাসা দিবসের নামে, তরুণ-তরুণীদের
দিয়ে যাই প্রবল উৎসাহ, 'যা তোরা, যা খুশি কর, চড়ুইপাখির
মতো হয়ে যা বাঁধনহারা, ছিড়ে যা সভ্যতার সীমানা।'
ভুলে যাই, হাজার হাজার পথভ্রষ্টদের মাঝে
আমার সন্তানেরাও আছে প্রকাশ্যে।
হা হা হা, পশুর হৃদয়ে আমি জ্ঞানী মানুষ।

(৭)
আরো কি কিছু লিখবো? এখনো তো এলো না
লজ্জাবোধ; বিবেকের ঘুম ভাঙ্গাতে জাগলাম না--
ধুর ছাই, কি হবে লিখে? লজ্জাতো কারো নাই,
লিখতে গেলে হাজার পাতা ভরে যাবে।
শুধু বলে যাই, সংস্কৃতির নিজস্বতা বিকৃত করা,
অন্ধকারে বিবেককে বন্দী করে রাখা-
এসব মানুষকে, এসব দিবসকে থুথু দেই,
ধিক্কার জানাই, ধিক্কার জানাই, ঘৃণা করি।
---------------------
১৪/০২/১৮ইং

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 2টি মন্তব্য এসেছে।

Tanvi
১৫-০২-২০২০ ১১:৩৮ মিঃ

নির্লজ্জভাবে বেঁচে আছি
---------এস.আই.তানভী
(বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে নিয়ে বিশেষ লিখা)

(১)
অযাচিত, অপ্রয়োজনীয়, অর্থের অপচয় আর
হাজার ফুলের বাগান শূন্য করে কিসের এই
ভালোবাসা দিবস? আমি তাজ্জব হয়ে যাই-
অন্যের সংস্কৃতিচর্চা করে নিজের কথা ভুলে থাকি।

কিসের ভালোবাসা দিবস? ভালোবাসা কোথায়?
বৃদ্ধাশ্রমের পড়ে আছে বাবা-মা, বৃদ্ধ মায়ের পা
শিয়ালে টেনে খায়, বস্তাবন্দী করে মাকে ফেলে যায়
ব্রীজের মাথায়, স্বার্থান্ধ সন্তান কেটে নেয় বাবার পা,
আবার প্রতিষ্ঠিত সন্তানের পিতা-মাতা ভিক্ষাজীবী।

(২)
কিসের ভালোবাসা দিবস? কোথায় ভালোবাসা?
আমি দেখতে পাই না সহানুভূতি, সদাচরণ, পাই না
ভালোবাসার কোন ঘ্রাণ, সুবাতাস।
কোথায় ভালোবাসা? যখন পারভীনের সন্তান প্রসব হয়-
সুনামধন্য হাসপাতালের সামনে রাস্তার মাঝখানে; আবার
সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জীবন্ত ভ্রুণ ফেলে যায়
শহরের কোন ডাস্টবিনে, বিড়ালে মজা করে খায়।

(৩)
কিসের ভালোবাসা দিবস? স্বামী আর সন্তানের লাশ
খাটের নিচে মেঝেতে ফেলে রেখে পরকিয়া;
কামবাসনায় মত্ত নারী, ছি!ছি!ছি!
আমি লজ্জার মাথা খেয়ে ফেলেছি, বাড়ির ছোট্ট
গৃহকর্মীকে দাঁড়িয়ে রাখি চাইনিজ হোটেলের বাইরে
ভিতরে তার বয়সী সন্তান আর প্রিয়তমাকে নিয়ে
ঘন্টার পর ঘন্টা মজা করে খাই, ট্রেনের এসি কামড়ায়
শুয়ে শুয়ে পরিবারের সাথে শহর হতে গ্রামে আসি
কাজের মেয়েটার জন্য একটা সাধারণ আসন কিনতেও
আমার বিবেকে বাঁধে প্রচন্ড, ছি!ছি!ছি!
আহ! বেচারি পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে এসেছে
বারবার বন্ধ দরজার ছোট কাঁচ দিয়ে দেখেছিলো-
এসি কামড়ার ভেতরটা, যদি ডাক দিই একবার।
ছি! ছি! ছি! আমি এখনো পশু হয়ে যাই নি।।

(৪)
কিসের ভালোবাসা দিবস? ভালোবাসা কোথায়?
যখন মূল প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত উধাও
ন্যায় বিচারের জন্য নয় বছরের ধর্ষিতা শিশুকে নিয়ে
সংবাদ সম্মেলনকারী পিতা হতে হয়, মেয়েটা
লজ্জায় আমার বুকে মাথা লুকায়----।
নিজের ক্যালকুলেটর ফেরত চাইতে গিয়ে ফিরে আসি
রক্তাক্ত হয়ে, ক্ষমতাবান তো তারা'ই; তাই বিচার
দেবার মতো কাউকে খুঁজে পাই না।।

(৫)
ভালোবাসা! কোথা থেকে পাও এই নোংরামির স্পর্ধা?
এতিম-অসহায় কত শিশু পথে পথে ঘুরে,
বাঁচার জন্য আবর্জনার স্তুপে খাবার খুঁজে;
দেখেও দেখি না, অপচয়ে হাত কাঁপে না।।
সেদিনের ছোট কাজের মেয়েটা আজ সাবালিকা,
আমার বাড়িতেই গর্ভবতী, গলা চেপে গর্ভপাত করাই;
অপরাধী তো আমারই সন্তান, সব চাপা রাখি
কোল বালিশের নিচে- নিজের কাছে কখনোই
নিজেকে নিয়ে, বিবেককে নিয়ে লজ্জাবোধ করি নি।

(৬)
ভালোবাসা দিবসের নামে, তরুণ-তরুণীদের
দিয়ে যাই প্রবল উৎসাহ, 'যা তোরা, যা খুশি কর, চড়ুইপাখির
মতো হয়ে যা বাঁধনহারা, ছিড়ে যা সভ্যতার সীমানা।'
ভুলে যাই, হাজার হাজার পথভ্রষ্টদের মাঝে
আমার সন্তানেরাও আছে প্রকাশ্যে।
হা হা হা, পশুর হৃদয়ে আমি জ্ঞানী মানুষ।

(৭)
আরো কি কিছু লিখবো? এখনো তো এলো না
লজ্জাবোধ; বিবেকের ঘুম ভাঙ্গাতে জাগলাম না--
ধুর ছাই, কি হবে লিখে? লজ্জাতো কারো নাই,
লিখতে গেলে হাজার পাতা ভরে যাবে।
শুধু বলে যাই, সংস্কৃতির নিজস্বতা বিকৃত করা,
অন্ধকারে বিবেককে বন্দী করে রাখা-
এসব মানুষকে, এসব দিবসকে থুথু দেই,
ধিক্কার জানাই, ধিক্কার জানাই, ঘৃণা করি।
---------------------
১৪/০২/১৮ইং

Tanvi
১৫-০২-২০২০ ১১:৩৮ মিঃ

ধুর ছাই, কি হবে লিখে?