এই দুটো চোখে দেখা
- এস আই তানভী ২৫-০৪-২০২৪

.
খুব কাছে থেকে সেই বাবা কে দেখেছি- যার শরীরের ঘামে
ধুয়ে যায় রিক্সা-ভ্যানের পেডেল, প্রচন্ড রোদে ক্ষেত-খামাড়ে
অঙ্গার হয় পিঠের চামড়া, লাঙ্গল, কোঁদাল, কুঁড়ালের হাতল
সব সময় যার হাতের মুঠোও কিংবা কাঁধে, শীত-বৃষ্টি, ঝড়-বাদল
কোন কিছুই যাকে থামাতে পারে না কোনমতে- 'সন্তান আমার
বড় হবে, দাঁড় করাতে হবে সবার মাঝে, উঁচু মাথায়,
শিক্ষা-দিক্ষায়'- সারাক্ষন শুধু এই এক ভাবনাই তার মনে।

আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি সেই বাবা কে- যে, মালিকের
হাতে উঠতে বসতে ঠাস ঠাস চড় খেয়ে মাথা নু'য়ে কাজ করে,
বাড়ি ফিরে শ্রেষ্ঠ সুখীর অভিনয় করতে করতে, হোটেলে
কাজ করা বাবাকেও দেখেছি- যার হাতের তালুর ত্বক
সাদা, ফ্যাকাসে, উবে গেছে, মুখে ভাত তুলতে প্রচন্ড যন্ত্রণা
অনুভব করে-- তবুও হাসি মাখা মুখে বলে,-"খোকার
কলেজের মাইনা দিয়ে দিবো আগামীকাল, খুকির স্কুল
ড্রেসটা আজ বাড়িতে নিয়ে যাবোই, কাল ওর স্কুলে পিকনিক।"

কুলির কাজ করা, ঠেলাগাড়িতে অন্যের বোঝা টানা,
কল-কারখানায়, ইট-ভাটায়, রেল কিংবা বাস স্ট্যান্ড-এ,
নদীর বুকে, জাহাজ ঘাটেও দেখেছি- খেটে চলা অসুস্থ বাবা'কে।

এই সব বাবাদের সন্তানদের দেখেছি- বান্ধবী বা প্রেমিকার সাথে,
বাজে আড্ডা, অসৎ কাজে, অপরাধে, নেশার জগতে মিশে যেতে,
মানুষ না হয়ে অমানুষ হয়ে নির্লজ্জ- বুক উঁচিয়ে চলতে, হাসতে।
.
সন্তানের অসুখে রাত জেগে বসে থাকা, মাওলার কাছে
রোগমুক্তিতে গলার রস শুকিয়ে ফেলা বাবাকেও দেখেছি,
দেখেছি- বিনাচিকিৎসায় গাছতলায়, হাসপাতালের বারান্দায়
অনেক বাবাকে নি:সঙ্গতায় জীবনের লড়াই-এ হেরে যেতে।
এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সন্তানদের অনেক বাবা-মা কে
দেখেছি- বৃদ্ধাশ্রমে, বাবা-মায়ের কাছে যেটা জাহান্নাম ছাড়া
কিছু নয়, অন্য কিছুই হতে পারে না--- এই দুটো চোখে আরো
দেখেছি অনেক, আর দেখতে চাই না, বসে আছি চটজলদি,
খুব অচিরে দৃষ্টি নিভে যাওয়ার এক মহা অস্থির প্রতিক্ষায়।
-------------------------
৩০/০৩/১৭ইং

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

Tanvi
৩০-০৩-২০২০ ১২:১৯ মিঃ

বাস্তবতা থেকে লিখা