শ্রমিকের অভিশাপ
- এ কে সরকার শাওন - চেয়ার ও চোর ১৯-০৪-২০২৪

শ্রমিকের অভিশাপ
এ কে সরকার শাওন

বলতে পারিস ধীমান জগলু
কিসের জ্বালায় শত মাইল মাড়ি,
জেলার পরে জেলা পেরিয়ে,
রাজধানীতে দিতে হয় পাড়ি?

টেনে টেনে জড়ানো পায়ে
ক্লান্ত, ক্লিষ্ট, প্রৌঢ় পথচারী!
রাস্তায় না ছিল সুখময় অটো,
না ছিলো কোমল সিটের গাড়ী!

সেটা তুই বুঝবিনা কোনকালে
কত কষ্টের বিনিময়ে বন্ধুর পথ,
পৌঢ় শ্রমিক দিয়েছিল পাড়ি!
দেশের এক প্রান্তিক
নেত্রকোনায় যার বাড়ি!

এসিতে শুয়ে জ্ঞানীরা ভাবছে
আমি কত বড় আনাড়ি!
করোনার ভয় পিছনে ফেলে,
পুলিশ বেটুনের দু'চার ঘা সয়ে
ঢাকায় আসাটা ছিল বাড়াবাড়ি!

সব জ্ঞান শূণ্যে মিলায়,
ফাঁসী ঠেকে ফুলের মালা!
বুভুক্ষু মানুষই অনুভব করে
শূন্য জঠরের কত জ্বালা!

ঘরেতে ছিল না ছিটেফোঁটা দানা
দিন দুই উনুনে চড়েনি হাড়ি!
ছোট ছেলেটি জঠরের জ্বালায়
কেঁদে বিছানায় যায় গড়াগড়ি!

অর্ধমৃত মা কোঁকড়াচ্ছিল
শুয়ে শীতল মাটির 'পরে;
কাশতে কাশতে এই বুঝি
তাঁর পাখিটা যায় উড়ে!

মায়ের মুখের কষ্ট দেখে
বুকটা বিদীর্ণ হয় দুখে!
বুঝবেনা কেউ কোনদিন
যারা আছে চিরসুখে!

মোড়ল বাড়ীর ধোয়া-মোছার
কাজটিও খোয়া গেল বউটার!
পাওনা টাকার তাগিদ দিতে
গিয়েছিল সে বারংবার!

করোনার চেয়েও পাষাণ ওরা
আসা যাওয়া হলো শুধু সার!
ত্রানের চাল পাচারে ব্যাস্ত ওরা
ধার ধারেনা কোন মানবতার!

শত শত বস্তা মজুদ তবুও
দেয় নি মাত্র দু' কেজি ধার!
পাষণ্ড বনিক ও চাল চোরেরা
দেশটাকে করে দিল ভাগাড়!

হায়রে বিজ্ঞ বড় লোক
বুলি ছেড়ে নিত্য ভাষণ দিস!
তোদের থেকে পাওনা পেতে
আধমরা হয় ভবের জগদীশ!

তার পরেও কি করে পারি,
ঘরে থাকতে পাষাণের মত?
ঘরে বসেই কোরনার ছোবলে
যার অন্তর ক্ষত বিক্ষত!

চাকরীর টানে ঢাকায় এসে
পড়েছি কেয়ামতের জালে!
মসজিদে কষ্টে রাতটি কাটাই
ভেসে দুই নয়নের জলে!

পায়ের ব্যাথায় টন টন করে
কোমর থেকে বুঝি ছিড়ে যায়!
গরীবের ব্যাথা বোঝার কেউ নাই
সবাই শাশায় আর ধমকায়!

যে দেখার সেই দেখলো না
দিয়েছে শেয়ালকে মুর্গী বাগী!
তখনই বুঝেছি কেউ রইলো না
শ্রমিকের তরে জাগি!

রাত কেটে দিল এলো দিন,
কাটলো না জীবনের আঁধার!
কারখানার গেটে নোটিশ দেখে
বুকটা ফেটে গেলো সবার!

কারখানা যদি বন্ধই রবে
তবে কেন ডাকিলো মোদের!
আর কত এমবিএ পড়লে
এই জ্ঞানটুকু হবে তাদের?

ওরে বাটপাড়! ওরা বাটপাড়!
তোদের গালি দেবার ভাষা নাই!
থুতু ছিটিয়ে ঐ রক্ত খেকোদের
বিষাক্ত অভিশাপ দিয়ে যাই!

মোদের ঠকিয়ে গড়েছিস যারা
প্রাসাদ ডজন ডজন কারখানা!
প্রকৃতির শোধ পাবি নির্বোধ
নরকেও ঠাই পাবি না!

হিসাব দিতে হবে পাই টু পাই,
যত ঠকিয়েছিস গরীব দুখী!
সুদে আসলে শতগুন হবে,
ভিখ মাগবি হয়ে উর্ধমুখী!

তোদের সংসার তছনছ হবে
কন্ঠস্বর কারো কানে পৌছবেনা!
মরণকালে তোদের ভালে
কোন শ্নেহের ছায়া পড়বে না!

পালন্কে শুয়ে যারা ভাবছো
কেন দিলাম পশুদের অভিশাপ!
হৃদয়টা নয় দেখে রায় দাও
শ্রমিকের বিধ্বস্ত পায়ের ছাপ!

০৯ এপ্রিল ২০২০
শাওনাজ, ঢাকা।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

M2_mohi
১০-০৪-২০২০ ০৩:২২ মিঃ

ভালো আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো।