মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
- ফয়জুল মহী ২০-০৪-২০২৪

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৬ষ্ট পর্ব
সকালে রবিনের মা আসে দাদির কাজ করার জন্য। দাদির প্রতি রবিনের মার যত্ন দেখে বুঝা যায় , দাদি উনার প্রতি অর্থনৈতিক হাত প্রসারিত করেন। ভালো হয়েছে কাজে এমন সহযোগী থাকায়। চাচি কেমন আছেন ? ভালো আছি মা মৌরি । রাতে রবিন তোমার কথা বলেছে । বলে মা - দাদির বাড়িতে একটা আপু এসেছে । এত ভালো , সবার সাথে মিলে ধানের জমিতে ফটো তুলছে । কত কিছু জানতে চায় গ্রামের কথা । পড়তে বসেও সেই তোমার কথা , ভাবলাম একবার এসে দেখে যাবো কে আসলো। কিন্তু ভয়ে আসি নাই । অন্ধকার রাত , এমনিতেই মেয়ে মানুষ দেখলে জানোয়ার হামলে পড়ে । কত জোয়ান মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট হচ্ছে । আর বড় লোক বেটিরা বিচার পায় না , আমরাতো হলাম গরীব আমাদের জন্য বিচার হলো আকাশের চাঁদ । আমি চাচির কথা আর গ্রামের গরীব মানুষের সরলতা নিয়ে ভাবি। শুনছি আমি গ্রামের রাজনীতি জিলাপির প্যাচ ।


নীলফামারী জেলার এক দরিদ্র ও অর্ধশিক্ষিত মানুষের গ্রাম আমাদের । সহজ সরল অশিক্ষত কিছু মানুষ নিয়ে অর্ধশিক্ষিত কিছু মানুষের পলিটিক্সের হাট বাজার । এখানেও দোয়েল কোয়েল পাখি আছে । এখানেও সামছুর রহমানের স্বাধীনতা কবিতার মেয়েরা পুকুরে অবাধে সাঁতার কাটে । কৃষক তাজা তাজা ষাঁড় দিয়ে চাষ করে । তামাক জমির আইলে বসে পান্তা ভাত কাঁচামরিচ দিয়ে সাবাড় করে। নেই শুধু কাজী নজরুলে কবিতা । নেই সায়ীদ স্যারের বইয়ের লাইব্রেরির মত এমন কিছু। আছে এনজিও নামক পাতানো খেলা । টাকা নাও ,কিস্তি দাও । না পারলে বউ -ঝির গয়না বিক্রি করো । তুমি পারো না পারো , খাও না খাও কিস্তি সচল রাখতেই হবে । কি বিচিত্র , কি সরল অংক , কি সরল বাণিজ্য ।


রবিন রাতে ভাত খেতে বসেও তার বাবাকে সেই তোমার কথা বলা শুরু করলো। তার বাবা সকালে চলে যায় তামাক জমিতে কাজ করতে , যাওয়ার সময় বলে আজ একটু জলদি যেও চাচীর বাড়ি। কে আসলো কি জানি । বাজার সদাই লাগবে কিনা জেনে নিও। মাহিন ভাইয়ের বউতো আসার কথা না । আহারে ভালো মানুষের দাম নাই। এই রকম অমায়িক মানুষ ছেড়ে দিয়েছে । চাচীর মতই আমাদের খেয়াল রাখতো বাড়ি আসলে। আমরা গরীব বলে কখনো অযত্ন করেনি। ভাই ভাই বললে মনে হতো যেন মায়ের পেটের আপন ভাই । খেয়েছি কিনা , বাড়িতে চাউল ডাল আছে কিনা সব জানতে চাইতো। এমন মানুষের কপালে সুখ সয় নাই। সবই কপাল ।


রবিনের মা আম্মুকে কোন কাজই করতে দিচ্ছে না । তারপরও আম্মু সমস্ত ঘর পরিষ্কার করলো। দেখলাম আম্মু যে রুমে থাকতো সেখানে গিয়ে নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। আর তখনি আমার হ্রদয়টা শকট করে । বিরুদ্ধে দাঁড়াতে মন বিদ্রোহ করে আব্বু নামক লোকটার । বিদ্রূপ করে বলতে ইচ্ছ করে আমার আম্মু পৃথিবীর সেরা। আর কারো আমার সৎ মা হওয়ার যোগ্যতা নেই। আমি পিছন হতে আম্মু ডাক দেওয়ায় চমকে উঠে নিজেকে সামলে নেয় । বলে একটু আধটু খারাপ লাগার কথা । তোমাকে ছোট থাকতে নিয়ে আসলে তুমি পুরা রুমে খেলা করতে। আর এখন সেই রুমে অন্য জনের বাচ্চা-----। মা জলি তুমি কেন এইসব পরিষ্কার করতে গেলে । দাদি হয়তো বুঝতে পারে আম্মুর খারাপ লাগছে । আম্মুও দ্রুত নিজেকে সামলে নেয় এবং বলে আপনি একা তাই একটু দেখছি আম্মা । (চলবে) ।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৭ম পর্ব ।

আম্মুর জন্য এখানে কষ্টকর এবং অপমানজনকও বটে । তারপরও এসেছেন শুধু দাদি আর আমার জন্য । আম্মুকে পেয়ে দাদি যেমন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন তেমনি আমিও গ্রামে দাদির কাছে আসতে পারায় দেহ মন আন্দোলিত । আসলে একটা সাজানো গুছানো বাগান বিনা দোষে বিনাশ হলে কষ্ট লাগারই কথা। আম্মু ভাবেন কোথায় উনার ঘাটতি ছিল , ভালোবাসার কমতি ছিল কিনা । কেন আব্বুর হঠাৎ পরিবর্তন হলো , হয়তো তাঁর মনে লোভ এসে গিয়েছে। কানাডার নাগরিকত্ব আব্বুকে মোহাবিষ্ট করছে এই হবে প্রধান কারণ। এই বাড়ির এই ঘরের প্রতিটি ইট বালু আম্মুর অনেক অনেক পরিচিত । অথচ এখানে এখন একজন পরিচয়হীন ও অপ্রয়োজনীয় মেহমান। এই হতাশা হ্রদয়ের মাঝ হতে ঝর্ণা হয়ে প্রভাবিত হচ্ছে কষ্ট নামক সাগরে । কিন্তু আমরা বুঝতেছিনা আর উনি বুঝতে দিচ্ছেন না। কারণ আম্মু এসেছেন দাদির আনন্দের জন্য , আম্মুর কষ্ট প্রকাশ করলে দাদি দুঃখ পাবে। আসলে ঝর্ণা সুউচ্চ পাহাড় হতে নিচে পড়ে বয়ে যায় সাগরে আর আমরা সেই ঝর্ণায় গোসল করে আনন্দ উপভোগ করি কিন্তু এই ঝর্ণার কষ্টও থাকতে তা কি কখনো অনুধাবন করার চেষ্টা করি, না করি না । আম্মু চেষ্টা করেন নিজ হাতে রান্না করে খাওনোর জন্য। তাই রবিনের মা আসলে আম্মু তাকে অন্য কাজ করতে বলে। রবিনের আব্বু এসে বাজার হতে সব সওদা করে দিয়ে যায়। আরো কয়েকজন চাচা ও চাচী এসেছে দাদির খোজ নিতে। তারা আম্মুর সাথে অনেক আলাপও করে। বার বার দুঃখ প্রকাশ আব্বু কেন এটা করলো । এতে বুঝা যায় গ্রামের অভাবী মানুষ খাওয়ার খোজ করলেও ভালোবাসা খোজে না। স্বামী সন্তান নিয়ে ঘুপড়িতে ওরা সুখের অট্টালিকায় থাকে।


আমি আর রবিন তার গ্রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়াই মাঠে ঘাটে। কখনো পুকুুর পাড়ে আবার কখনো নদীর ধারে। ভুলে গিয়েছে আমি একজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে। মাঝে মাঝে পথচারী এমনভাবে তাকায় যেন খেয়ে ফেলবে। মেম্বার চাচা দুই/একজনকে বলেছেও শহরের মেয়ের শরম নাই। হাদিস কোরান পড়ে না ।তাই তারা বেহায়া , দুইদিন জন্য আসছে গ্রামে তাই একটু তিড়িং তিড়িং করে। আমি গ্রামের সবুজ শ্যামল রূপ দেখেই অভিভূত । চারিদিকে বাড়িঘর সবুজ সতেজ গাছপালার ডিতর বিস্তীর্ণ মাঠ । মুগ্ধ হয়ে গান গাই“এমন দেশটি কোথাও তুমি পাবে নাকো খুজে” । একদিকে ধান কাটার ধুম আরেক দিকে শাক-সবজি লাগানোর মৌসুম। কষৃকদের ফুসরত নেই এখন বসে থাকার । রবিনের বাবা দিন হিসাবে কাজ করে , একদিনও বেকার থাকে না । যখন যে কাজ থাকে তখন সেই কাজ করে , কখনো তামাক জমিতে আবার কখনো সবজি জমিতে । চাচা একদম সহজ সরল অমায়িক মানুষ । বেশী চাওয়া পাওয়ার নাই দুইবেলা বউ বাচ্চা নিয়ে দুইটা ডাল ভাত খেতে পারলেই চলে মা। এই সব লোকের অট্টালিকা গড়ার দৌড়ে নেই বলে এবং পরিমিত চাহিদার কারণে সুখ তাঁদের কাছে থাকে।


দাদির জন্য হেমন্ত কাকা দুধ নিয়ে আসে । আমাদের গ্রামের কয়েকটা বাড়ি পরে উনার বাড়ি। হিন্দু মুসলিম মিলে মিশে এই গ্রামে বাস করে । দাদিকে বলে চাচী মেহমান আসবে কেন বলেন নাই। দুধ বেশী করে নিয়ে আসতাম। দাদি বলে ওরা আসবে এইটা আমি নিজেও জানতাম না বাবা । তোমার মা কেমন আছে। তাকে বলো একবার আসতে তাহলে আমার বউমার সাথে দেখা হবে। চাচী মা দুধ নিয়ে আসতে চায় আমি বারণ করি । মা বলে আপনার বাড়ি কয়েকদিন না আসলে , আপনাকে না দেখলে মন চটপট করে। বলে মাহিনের মা একা দেখে আসা ভালো । হুম তোমার মা আর আমি বয়সেও তেমন পার্থক্য হবে না। কোন দিন কোন মরে যাই বলা যায় না। মার দেখাশুনা করিও বাবা , ঔষুধপত্র লাগলে বিরক্ত হয়ে যেও না । টাকাপয়সা লাগলে আমাকে বলবা । বাবা নাই মা আছে , তার সেবায় কমতি হয় না। আর চাচী অনেক দিয়েছেন আপনি। এই গ্রামে সবাই জানে আপনার কাছে সাহায্য চেয়ে খালি ফিরে যায় না কেউ ।


আমাদের গ্রাম হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে সম্প্রতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত । অন্য ধর্মের লোক নাই এখানে। যে যার ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে নিজের পছন্দমত। দাদির জন্য অনেকে খই চিড়া ও মুড়ি নিয়ে আসে হিন্দুদের আচার-অনুষ্ঠানের। রাজনৈতিক বিবাদে জড়ানো কয়েকটা মুসলিম ছেলে যেমন আছে তেমনি হিন্দুও আছে । এদের কারণে মাদক মুক্ত নয় গ্রামটা । তবে আমি এদের বিরুদ্ধে একটা মতবাদ গঠে তোলা দরকার মনে করি। মহাজনেরা তামাক চাষে লাভবান । তেমনি রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে গ্রামে মাদক বিক্রি করে স্থানীয় যুবকদ্বয়। আর এতে লাভবান ওইসব নেতাগণ । (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৮ম পর্ব ।

বিড়ি সিগারেট প্রকাশ্যে বেচাকেনা হয় এইটি নিম্নতর মাদক। গাজা , ফেনসিডেল এবং ইয়াবা কিছুটা চোরাচুরিভাবে বিক্রি হয় । খরিদ্দার নিম্ন ও মধ্যবিত্তের যুবক। হিরোইন সবচেয়ে দামি মাদক । আর এর খরিদ্দার বড়লোকদের বখাটে সন্তান। চোরাচালান ও মাদক এরা আপন দুই জমজভাই । যেসব লোক মাদক ব্যবসায় জড়িত তারা আবার অনেকেই পণ্য চোরাচালানেও জড়িত। বাংলাদেশের অনেকটা সীমানা জুড়ে ভারত এবং সামন্য একটুই সীমানা মায়ানমারের সাথে । কিন্তু আচার্য হল সীমান্তের মানূষ মাদকের কারবার করলেও তারা পুরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কিংবা রাজধানী পর্যন্ত এই মাদক পৌছে দিতে পারে । কিন্তু কিভাবে এই প্রশ্ন আসা অবান্তর নয়। বুঝা যায় ক্ষমতাবান এর সাথে জড়িত। কলেজ পড়ুয়া ছেলেটা ইয়াবা সেবন করে নিজেকে মেধাহীন করে ফেলছে । নিয়মিত নেশা করার জন্য টাকা জোগাড় করতে মা বাবা আদরের মেধাবী সন্তান অস্ত্র হাতে ডাকাত হয়ে যায়। কিন্তু রাঘববোয়াল এর সন্তান এই মাদক বিক্রির টাকায় বিদেশে নামকরা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র । আমরা বেহুশ আমজনতা সেই নেতা সেই সরকারী কর্মকর্তার কথায় উঠবস করি । নিজের ক্ষতি করে ক্ষমতাবানদের পুজা করি সামন্য লোভে পড়ে । আপনি শত সন্তানের মেধা ও মনন ধ্বংস করে যে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জল করতেছেন , তাই মনে রাখবেন শেষ বয়সে আপনার জন্য বৃদ্ধ আশ্রম অপেক্ষা করছে । কারণ “যেমন কর্ম তেমন ফল”।


চাচা কেমন আছেন । রবিন কেন আসে নাই । ভালো আছি মা । তোমার চাচী আর রবিন বেড়াতে গিয়েছে । তাই তোমার দাদিকে বলতে আসলাম । আচ্ছা , আমি রবিনকে বলেছি আমি যেতদিন থাকবো গ্রামের ছোট ছেলেমেয়ে সবাইকে সকালে বাড়িতে পড়াবো । যাতে তারা ভালো করে পড়ে স্কুলে।
মা এই কথাতো জানলে আমি তাকে যেতে দিতাম না । ঠিক আছে দুই/ এক দিনে আর অসুবিধা হবে না । আপনি ফোন করে বলে দিবেন চলে আসতে । ঠিক আছে মা । রবিনের মা আজ আসবে না চাচী। কেন , কোন অসুখ হলো নাকি । অনেক কাজ করে। না চাচী অসুখ না , বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে । মন হয় সে অন্য কাউকে বলেও গিয়েছে আপনার জন্য আসতে । যাতে রান্নার কাজে অসুবিধা না হয়। আরে কি যে বলো ,আমার বউমা আসায় আমার শক্তি বেড়ে গিয়েছে। আমি নিজেই সব করতে পারব হ্যা চাচী দেখতে পাচ্ছি । ভাবী অনেক ভালো মানুষ। তাই কপাল ভালো আপনার মত শাশুড়ী পেয়েছে । যে ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসে । আমার মেয়ের অভাব ছিল সেটা জলি মা পূরণ করছে । তার মত বউমা পাওয়া এখন কঠিন । ভাবী কোথায় দেখছি না যে । প্রতিদিন আসলে এসেই ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করতো । মনে হয় ব্যস্ত আছে। হ্যা কাজে ব্যস্ত আছে ।


আগে খাল খনন করতো মানুষে । এখন খনন করে বুলড্রোজার দিয়ে। যাই হোক প্রমাণ হয়েছে খাল খনন ভুল ছিলো না । এইটি অত্যন্ত জরুরী আমাদের দেশে। খননের ফলে শীতকালে মিঠা পানি জমা থাকলে কৃষি কাজে সেচ দেওয়া যায় তেমনি বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির জল কিংবা বন্যার জল তাড়াতাড়ি নেমে যেতে পারে। শীতকালে শাকসবজি চাষে এখন সেচ সুবিধা আছে বলে কৃষক নিশ্চিত মনে চাষাবাদ করতে পারছে। কিন্তু একটাই সমস্যা তা হলো ন্যায্য দাম পায় না বলে কৃষক পেরেশান । এই সমস্যাও অদুর ভবিষ্যতে থাকবে না । শুধু শুভ চিন্তক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দরকার । যে কৃষক , শ্রমিক দুঃস্থ মানুষের কথা সরকারের উচ্চ পর্যায় পৌঁছে দিবে এবং তিনি ভক্ষক নয় রক্ষক হবেন।


খাল কাটার মাটি , এইটাতেও রাজনীতি , এটাতেও টাকার খেলা । শক্তিধর রাজনৈতিক নেতা আজ বালু খায় , মাটি খায় , নিরহ ও গরীব লোকের রক্ত খায়। খালের পাড়ে রাখা মাটি নিয়ে রাজনৈতিক দলের দুই গ্রুপে একবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় । শক্তিধর গ্রুপ দখল করে মাটি। আগে খালের পাড়ে জায়গার মালিক খাল কাটা মাটি নিজের প্রয়োজনমত ব্যবহার করতো । এখন আর সেই দিন নাই । এখন মাটি জায়গামত জমা করে ইট ভাটার মালিকের কাছে বিক্রি করে দলীয় লোক। এই মাটির দখল নিতে নিজ দলে চলে যুদ্ধ। যে জিতে সেই খায় মাটি। (চলবে) ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৯ম পর্ব ।

অথচ আজ না হয় কাল এই মাটির নিচেই যেতে হবে।আর আজ মাটি বিক্রি করে খেতে রক্তপাত । যার কিছুই নেই সেও চুরি করে , আবার যার অনেক কিছু আছে সেও আরো বেশী সম্পদ করার জন্য চুরি করে । আজব দুনিয়া । এই যেন এক প্রতিযোগিতা চুরির। তবে ছোট চোর বড় চোরের কাছে পরাজিত হয় । কারণ বড় চোরদের আছে আলিশান বাড়ি , দামী গাড়ি , কাঠি কাঠি টাকা হোন্ডা ও গুন্ডা । তবে এর ব্যতিক্রমও আছে যাদের কোন প্রচার নাই । শত শত ভালো লোক আছে নীরবে নিভৃতে । এক জনের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আগের দিনের পুরাতন কথা


থানায় নতুন ওসি বদলি হয়ে এসেছেন । নিয়ম অনুযায়ী সে আসনের এমপি সাহেবের সাথে দেখা করতে ওসি উনার বাড়িতে গেলেন ।
ওসি যখন এমপি সাহেবের বাড়ির উঠানে পৌঁছলেন তখন দেখলেন এক মধ্যবয়সী দাড়িওয়ালা লোক একটি গাভীকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন ! তখন ওসি সাহেব ঐ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন এমপি সাহেব বাড়িতে আছেন কিনা? তখন ঐ মধ্যবয়সী দাড়িওয়ালা লোকটি ওসি সাহেবের কাছে এসে বললেন তিনিই এই আসনের সংসদ সদস্য । ওসি সাহেব তো রিতিমতো হতবাক ! যেখানে ওসির ধারণা ছিল এমপি সাহেব আলিশান বাড়ির খাস কামরায় দলীয় নেতা কর্মী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন । এবং নেতা কর্মী নিয়ে মার্সিডীজ, প্রাডো, দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে সরকারী টাকায় ঘুরে বেড়াবেন । সেখানে এই এমপির সাধারণ জীবন যাপন সত্যিই ওসি কে চমকিয়ে দিয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা আশাশুনি আসনের দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাওলানা রিয়াসত আলী । যিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে সারাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।
ওয়ান ইলিভেনের পর আর্মি আতংকে যেখানে রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তখন এই মানুষটি আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তার নামে কোন দূর্নীতি আছে কিনা । উনি মারা যাওয়ার পর প্রচার বিমুখ এই নেতার মৃত্যু সংবাদটিও কোন মিডিয়া প্রচার করে নাই ।
দেশ যখন অসৎ, চরিত্রহীন, দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতায় ভরে গেছে সেখানে রিয়াসত আলীরা সততা, সরলতা, নিষ্ঠা ও চরিত্রের মাধুর্যের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন চুপিসারে, সবার অগোচরে। এমন নেতাই এই দেশে বেশী প্রয়োজন। তাই তিনি অনেকের মধ্যে একজন হয়েও অনন্য, অতি সাধারণ হয়েও অসাধারণ।


আরো অনেকই আছে যাদের আমরা চিনি না । যাদের কথা প্রচার হয়নি । এইসব লোকের ভালো কাজ প্রচার হয় না কখনো । তাঁদের লক্ষ্য থাকে মানব সেবা । মনে থাকে সৃষ্টিকর্তার ভয়। তারা মনে করে আজ না হয় কাল মরতে হবেই। তাহলে সামান্য লোভে পড়ে কেন বদনাম ও বদদোয়া কাঁধে নিবো। অথচ অন্যরা নিজে ভোগ করার চিন্তায় রত।
কোপাকোপির লড়াইয়ে জিতে যাওয়া পক্ষ মাটি বিক্রি করে দেয় । জায়গার মালিক নীরব দর্শক । কিছু টাকা হয়তো ইন্জিনিয়ার এবং বুলডোজার চালক পায়। মাটি সরবরাহ করে ট্রাকে করে । গ্রামের মাটির রাস্তা নষ্ট হয়। ধুলাবালিতে নষ্ট হয় পরিবেশ এবং বাড়ি ঘর। বাড়ির সামনে খেলাধূলা করতে বাহির হয়ে মাটির ট্রাকে চাপা পড়ে সুজন মিয়ার ছয় বছরে ছেলেটা । হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার । সন্তান হারানো মায়ের কান্নায় গাছপালা নীরব হয়ে যায়। নীরব থাকে আকাশ , নীরব থাকে বাতাস। চোখ বুজে জল ফেলে মহামালিক। ভয়ে পাথর হয় এলাকাবাসী । শকুন চিৎকার করে মধ্য আকাশে । কিন্তু মাটি সরবরাহ বন্ধ হয় না । আমি ভাবী গ্রামে মানুষ নেই হয়তো । না আমার ধারণা ভুল হয় । তিন দিন পর সন্তান হারানো বাবাকে ডাক দেয় সমঝোতা করার জন্য। একজন দারোগাবাবু পরিপাটি হয়ে বসে কিছু গ্রামের টাউট বাটপাড় নিয়ে । বৈঠকে চলে কথার ফূলঝুড়ি । দারগা সাহেব ঘোষণা দিলেন বাচ্চার বাবা পাবে ষাট হাজার টাকা । ঘোষণার সাথে সাথে মানুষ উঠে যায় । শকুন একদলা বিষ্ঠা ফেলে নেতার মাথায় । সিদ্ধান্ত পাক্কা জীবনের মূল্য ষাট হাজার । আচ্ছা টাকায় ওজন হয় জীবন । এ কেমন জীবন । (চলবে )।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১০ম পর্ব ।

শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় নিরহ মানুষদের উপর অত্যাচার চলে আসছে । যুগ যুগ ধরে এই অবিচার যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেখার কেউ নাই , বলার কেউ নাই । মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেকে গরীব হতে ধনী হয়ে তাঁর অতীত ভুলে বসে আছে। যে কোন পথে হোক ভাগ্যের জোরে ধনী হয়ে সে যেন এখন আকাশে বাস করে। আস্তে আস্তে মায়া শব্দটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে কারণ মানুষের মন হতে মায়া বিলীন হচ্ছে বলে । বিপদে পড়লে ধনীরা এখন গরীবদের তিরস্কার করে সাহাযা করার ভয়ে । সন্তান বৃদ্ধ মা বাবাকে বোঝা মনে করে এড়িয়ে চলে । শিক্ষা মানুষকে চাকরীমুখী করছে ঠিকই আত্মার বিকশিত করছে না । ধর্ম নিরহ হয়ে এক জাগায় পড়ে থাকছে । ধর্ম মানুষের জীবনে কোন প্রভাব ফেলছে না । অথচ আমরা আত্মসম্মানবোধ মানুষ যা জ্ঞান গরিমায় নিজে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। আমরা ধর্মকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করি । চীন গিয়ে হালাল খাবার খোজ করি । অথচ চীন যাওয়ার উদ্দেশ কিন্তু নামী এবং দামি পণ্য নকল করা । আর নকল পণ্য বিক্রি করে কোটি টাকা রোজগার করে বিদেশে পাচার করি । এখানে ধর্ম এবং বিবেক অকেজো । কিন্তু নিজেকে সমাজে সাধু গুণী এবং সম্মানিত করার জন্য ধর্মের লেবাশ ধারণ করে অনেকে। এইখানে সে নিজের বিবেককে প্রতারিত করে নিজেকে ধোকা দিয়ে বোকা বনে। তবে সময়ের সাথে সাথে সাধারণ জনগণ বুঝতে শিখছে । নিজে পড়াশোনা না করলেও সন্তানদের পড়াশোনা করাতে বদ্ধপরিকর। সরকার অনেক চেষ্টা করতেছে মানুষকে শিক্ষিত করতে । তাই বৃত্তি উপবৃত্তি দিচ্ছে । কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনই নয়-ছয় করে এইসব বৃত্তির টাকা পয়সা নিয়ে। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণে কিছু বলা মুসকিল। এইসবের সাথে আবার জড়িত থাকে অসাধু শিক্ষক।


কিছু স্কুল শিক্ষক আর মাদ্রাসার শিক্ষক আছে একদম নীতিহীন । এরা এতই নৈতিক বর্জিত যে ছোট ছোট বাচ্চাদের যৌন কাজে বাধ্য করে। অথচ এদের ঘরে বউ বাচ্চা সব থাকে । এদের যৌন কামনা এত বেপরোয়া যে শিক্ষাকে পুজি করে বাচ্চাদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। তারা এতাটা হিংস্র যে ভুলে যায় যে তাদের বউ বাচ্চার চেহারা । ধর্ম যেখানে মানুষকে নমনীয় হতে শিখায় । সেখানে মৌল্লারা হয়ে পড়ছে ধর্ষক হিসাবে । এদের বিরুদ্ধে মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষকে লড়তে হবে ,মানুষ লড়তে না পারলে সয়ং ঈশ্বরকে লড়তে হবে। এই জঘণ্য সমাজ আমাদের হতেই পারে না। যে কোন মুহূর্তে যে কোন কেউ এদের শিকারে পরিনত হতে পারে ।এছাড়াও এখন অসৎ চরিত্রের কিছু মহিলা গ্রামের গরীব সুন্দরী মেয়েদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করছে। আবার এইসব মহিলা এত ক্ষমতাবান যে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে। কারণ এদের উপর আর্শীবাদ থাকে জাতীয় নেতাদের । গ্রাম কিংবা শহরে এই ভয়ানক কাজ সমানতালে হচ্ছে । মিড়িয়ায় যা আসছে তা আমরা দেখতেছি । মিড়িয়ায় না আসা দ্বিগুণ ভয়ানক চিত্র আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। সমাজটাকে ভেঙ্গে মেরামত করা দরকার হয়ে পড়েছে । না হয় বিধাতা কাউকে ক্ষমা করবেন না । মরণের পর যদি প্রশ্ন করে তোমার সমাজে এত অনাচার হয়েছে তুমি কেন প্রতিকার করতে চাওনি, তখন নিজেকে অপরাধী মনে হবে। তখন জবাব দেওয়ার কিছুই থাকবে না। অন্যায়কারী আর অন্যায় প্রশ্রয় দেওয়া সমান অপরাধী ।
(কখন বুঝবে একটি দেশ ও সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে, যখন দেখবে দরিদ্ররা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে, ধনীরা কৃপন হয়ে গেছে, মূর্খরা মঞ্চে বসে আছে, জ্ঞানীরা পালিয়ে যাচ্ছে এবং শাসকেরা মিথ্যা বলছে।
———— হযরত আলী (রাঃ) ।)


আম্মু তোমার একটা কাজের মেয়ে দরকার বলে ছিলে । আমাদের পাশের বাড়ির শিউলীকে নিয়ে চলো। আমি তাকে চিনি না । আসতে বলো কথা বলে দেখি যায় কিনা । ভালো মন্দ কথা বলেতো বুঝবো । আম্মু তুমি দাদিকে জিজ্ঞাসা করতে পারো । আচ্ছা ঠিক আছে তোমার দাদি গিয়ে কথা বলবে । তবে আমি বলেছি তাকে পড়াশোনা করতে হবে । তাহলে বাসার কাজ কে করবে । আমার কাজের লোক দরকার । পড়াশোনা লোক দিয়ে করবো । আমি একজন কথা বলার লোক পাবো আম্মু। তুমি সারা দিন বাসায় থাকো না আমি একা একা । আচ্ছা ঠিক আছে তোমার দাদি কথা বলে দেখবে। দাদি নবী চাচার মেয়ে শিউলীকে চিনো তুমি । কেন চিনতে হবে । কি ব্যাপার , কি হয়েছে শিউলীর । আমি তাকে আমাদের সাথে ঢাকায় নিতে চাই । বাসায় কাজ করবে আবার পড়াশোনাও করবে । সে যাবে কিনা সন্দেহ আছে । আরো ছোট মেয়ে হলে ভালো হয় । তাকে তার বাপও যেতে দিবে না ।
যেতে দিবে দাদি , তুমি কথা বলো তাদের সাথে । বাসায় খরচ বেড়ে যাবে , তোমার আম্মুর কষ্ট হবে । তার পড়ার খরচ , খাওয়া দাওয়া আবার মাস শেষে কিছু টাকাও দিতে হবে । না , অনেক খরচ মৌরি । দাদি তুমি দিয়ে দিবে মাসিক টাকাটা । তা আম্মু জানতে হবে না । আব্বু যে টাকা পাঠায় তা হতে দিবে । কিন্তু জলি জানলে প্রচন্ড রাগ করবে । অবশ্যই বলতে হবে তাকে আমি তার সাথে কোন লুকাচুরি করতে পারবো নারে মৌরি । সে আমার আত্মা । সে ভুল বুঝলে আমার অনেক কষ্ট লাগবে ।
আচ্ছা ঠিক আছে ।


বউমা জলি এদিকে আসো মা । মৌরি কি বলে । জ্বী আম্মা , আমি মৌরিকে একদিন বাসায় বলে ছিলাম । একটা কাজের মেয়ে পেলে ভালো হয়। এখন সেটার বায়না ধরেছে । কথা বলে দেখেন । i ঠিক আছে কথা বলে দেখি যায় কিনা । কিন্তু মৌরি বলে কি পড়াশোনাও করবে । আবার মাসিক বেতনও দিতে হব ‘এতে বাসার খরচ বেড়ে যাবে মা ।
সমস্যা হবে না আম্মা । মৌরি একা একা বা- -সায় । (চলবে ) ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

wasemul
১৬-০৬-২০২০ ২২:০৭ মিঃ

ভাল লিখেছেন প্রিয় কবি।শুভকামনা রইল