মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
- ফয়জুল মহী ২৮-০৩-২০২৪

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১১তম পর্ব ।

আমি একটা ছোট মেয়ে চেয়ে ছিলাম । আমার কাছে গিয়ে যেন সব কিছু শিখে এবং জানে , কথা শুনে । শিউলী বড় মেয়ে । তোমার কথা শুনে হয়তো রাজি হয়েছে । না হয় দিতো না । গরীবের সন্তানও আদরের মৌরি কথা বলেছে তাই সে এসে বলতেছে আমাদের। আম্মা আপনার অনেক কাপড় , কিছু কাপড় গরীবদের দিয়ে দিবেন । সব কাপড়ই শেষ পর্যন্ত নষ্ট হবে। আর এইগুলি আপনি পরেন না কেন , পরবেন । আমি কোন দিন একটু বের করেও দেখি নাই কাপড় গুলি। অনেক নতুন কাপড়ের প্যাকেটও খুলে দেখিনি তাইতো দেখছি । এই যে এইটা কিছু দিন আগে আমি পাঠিয়ে ছিলাম। আর আপনি প্যাকেট সহ রেখে দিয়েছেন । কে আছে আপনার এই কাপড় পরবে যে। আমি আজ সব বাহির করে রোদ লাগতে দিয়ে দিব। আমার এত হুশ আছে মা জলি , যে কাপড় দেখবো। আম্মু দাদির একটা শাড়ি আমি নিয়ে যাবো । যখন দাদির কথা মনে পড়বে তখন শাড়িটা আমি পরবো। তাই , আহরে হৃদয়ের টুকরা । আমার কাছে আসো বোন হাজার আদর দিবো তোমার কপালে , আসো । মা জলি , তোমার মন খারাপ হলে কখনো মৌরিকে বকা দিও না । আমি যখন বুঝি তুমি মৌরিকে বকা দিয়েছো তখন আমারও মন খারাপ হয় । মানুষের দোষে আমরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকছি কিন্ত হৃদয়টা তো অভিন্ন। শুন মা জলি , এখানে একা থাকতে আমার খুব কষ্ট হয় । রাত হলে সেই কষ্ট এবং সাথে ভয় দ্বিগুণ হয় । আমার কিছু দরকার হলে কেউ নেই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেওয়ার । আজকাল মনে হয় ঘুমের মধ্যে মরে যাবো । কাজের লোক আসলে দেখবে আমি মরে আছি । কিন্তু তোমরা কেউ হয়তো খবরও পাবে না । অথচ তোমরাই আমার সব।
আম্মা আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমাদের --- আমিও ভাবছি তা । তবে একটা কথা তুমি রাখতে হবে । আমি কখনো মাহিনের সাথে যোগাযোগ করতে চাই না । তাহলে সে আর ফোন দিবে না । আস্তে আস্তে আমাকে ভুলে যাবে আমিও ভুলে যাবো । তা কি করে হয় আম্মা । মৌরি যখন কথা বলবে তখন আপনিও কথা বলবেন , আচ্ছা এখন এইসব কথা বলা থাক । আপনি যাবেন কিনা বলেন । মৌরি এখানে আসো মামনি কথা শুনো , তোমার দাদিকেই আমরা নিয়ে যাবো । অনেক ভালো হবে তাই না । সত্যিই কি দাদি আমাদের সাথে যাবে , দাদি বলো । হ্যা যাবো , এখন গ্রামে ঘুরাঘুরি কম করো মৌরি ।


তোমার দাদিকে নিয়ে একটা চিন্তায় ছিলাম । এখন হতে চিন্তামুক্ত , এবং তোমাকে নিয়েও আর চিন্তা হবে না । তুমি দাদির সাথে সময় কাটাতে পারলে মন ভালো থাকবে এতে পড়ালেখাও ভালো হবে । আমি এমনিতেই অনেক পড়ি আম্মু । আমি অর্নাসে সব সেশনে প্রথম ক্লাস পাবো দেখবে , দোয়া করো।তোমরা মা মেয়ে ভালো থাকলে আমি মরেও শান্তি পাবো । তোমার আব্বুর সাথে এইসব বলার দরকার নেই । সে দেশে এসে তার জমিজমা দেখবে আমি আর এইসবের মধ্যে নেই । আমি তোমাদের সাথে থেকে নামাজ কালাম করে শান্তিতে মরতে পারবো । দাদি আব্বু তোমার ফোনেই সবসময় কথা বলবে । তা ঠিক আছে , তাকে আমার জন্য অবশ্যই টাকা পয়সা ঠিকভাবে দিতে হবে । তাই সে ফোন করবেই। এইবার আমার জন্যও টাকা দিতে বলবেন । আমার পড়ালেখায় অনেক খরচ । বই খাতা যাতায়াত ভাড়া। আব্বু কেন কোন দিন আমার খরচ দিতে চায় না । তা বুঝি না । আমি কি ছোট বাচ্চা মেয়ে নাকি যে টাকা পয়সা লাগে না । আপনি আব্বুকে বলে দিবেন যেন আমার জন্য টাকা পাঠায়।আমি আর চুপ থাকবো না


আসছো তুমি রবিনের মা । তোমার মা বাবা কেমন আছে । আজ কয়েকটি দিন আমার বউ মা সব কাজ করলো । রবিন না থাকায় মৌরির ঘুরাঘুরিও বন্ধ । জ্বী চাচী আসলাম , সবাই ভালো আছে । আপনারা? ভালোই এখন দিন যাচ্ছে । কিন্তু এরা চলে গেলে একা হয়ে যাবো । তারা বলতেছে ঢাকায় চলে যেতে । গেলে যে বিভিন্ন সামাজিক অসুবিধা সামনে আসে । আমিও চাই চলে যেতে । কিন্তু মাহিন একদম মেনে নিবে না। চাচী গেলে যে ভালো হয়। মাহিন ভাইকে বুঝিয়ে বলেন , একা একা রাত - বিরাত কত আপদ বিপদ হতে পারে । এখনো আল্লাহ ভালো রাখছে । হ্যা লাখ লাখ শোকর আল্লাহর দরবারে । আমি ঢাকা গেলে মৌরির জন্য ভালো হবে । কথা বলার লোক পাবে । তার মন ভালো থাকবে কিন্তু আমার যে উপায় নেই । শেষ বয়সে ছেলেটা যদি ভুল বুঝে । আচ্ছা থাক এইসব কথা , তুমি শিউলী এবং তার মাকে আসতে বলবে । তাদের সাথে কথা আছে । আচ্ছা চাচী বলবো আসতে , কি ব্যাপার হঠাৎ করে। মৌরি শিউলীকে সাথে করে ঢাকায় নিতে চায় । মেয়েটা সুন্দর , পড়ালেখা করে । ভালো পারে পড়া । আমিও শুনছি পড়ালেখায় ভালো । ঢাকায়ও পড়বে। তার মা বাবা রাজি হলেতো ভালোই হয় । এমন ভালো লোক কোথায় পাবে, জলি ভাবী খুব ভালো মানুষ । আমিও বুঝিয়ে বলবো চাচী যেন যায় ঢাকায় (চলব)।


মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১২তম পর্ব ।

চাচী আপনি নাকি আমাদেরকে আসতে বলে ছিলেন হ্যা বউমা । কি খেয়েছো কি রান্নাবান্না করেছো আজ। মা রান্না করে আজ পাঠিয়েছে । সবাই ওটা খেয়েছি । তাহলে দুপুরে আর রান্না করতে হয়নি । ঝামেলা হতে বেঁচে গিয়েছো । জিনিস পত্রের যে দাম মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে । টাকার কোন দামই নাই। মানুষের আয় বাড়েনি কিন্তু ব্যয় বেড়েছে । চাচী আমরা গরীব মরবো বড় লোক আরামে আছে। আচ্ছা শুনো আমি তোমাদেরকে ডেকেছি একটা কথা জানতে , মৌরি আমার নাতনী সে শিউলীকে তাদের সাথে ঢাকা নিতে চায় । স্কুলে পড়বে আবার টুকটাক কাজকর্মও করবে । এখন তোমাদের কি মনোভাব ? মৌরি মা বলেছে আমাকে । শিউলী যেতে রাজি তার বাপও শুনছে কিছু বললো না । আপনাদের কাছে আমার মেয়ে থাকবে এতে আমার অমত হবে কেন। তাহলে তার বাবাকে ন্টি মন খারাপ হবে না । মৌরি আপু আমাকে পড়াবে দেখবে । আমি ভালো থাকবো ইনশাল্লাহ ।


সকালে জানালার পর্দা সরিয়ে সুর্যের সোনালী আভা দেখে মন ভালো হয়ে যায়। নারিকেল গাছের চিকন পাতা আটকাতে পারেনি সুর্যরশ্মি । চিকন চিকন পাতার ছায়া আমার মুখে পড়ে আমি হাত দিয়ে ধরতে চাই ছায়াকে , আজ যেন সুখ সুখ মন উদাসী নয়ন । লেমন ফ্লেভার গ্রীন টিতে চুমুকে সতেজ হবে আমার দেহ মন। হাঃ হাঃ দাদির কাছে কোথায় পাবে গ্রীন টি।
বিছানা হতে উঠতেই মন চাইতেছে না আজ । অলসতা চেপে ধরেছে আমাকে । এক লাইনে কয়েকটা ফলের গাছ আছে । সবটি গাছ ফল শূন্য । শীতকালে টাটকা শাকসবজির মৌসুম । গরম কালের বৈশাখ জৈষ্ঠ এই দুই মাস মধুমাখা মুধ মাস । তাই প্রকৃতির খেয়ালে জামরুল গাছ , আমড়া গাছ এবং লিছু গাছ ফল শূণ্য , শুধু পাতাই বহন করছে গাছ। এইসব ফলের গাছ কয়েক বছর আগে আব্বু লাগিয়েছে । আসলে কত ভাবে মানুষের স্মৃতি চিহ্ন আটকে থাকে । শীত কালে গাছপালা রূক্ষ শ্রীহীন হয়ে যায়। ঠিক তেমনি আব্বুর স্মৃতিও । কিছু টাকা দিয়ে আর বাবা মেয়ের ভালোবাসার লেনদেন হয়। আব্বু যেন একটা পোষা প্রাণী লালন পালন করছে । ফোনে এক পান্ত হতে ভেসে আসে কিছু তীক্ষ্ণ রূঢ় দায়হীন প্রশ্ন । কেমন আছো , পড়াশোনা কেমন চলছে। আমি উত্তর দিই শ্রদ্ধাশীল হয়ে যা আমাকে কাঁদায়। লিছু গাছে প্রচুর পাতা আর আমড়া গাছ একদম পাতা বিহীন । লিছু গাছটা আব্বু আর আমড়া গাছটা আম্মুর মত। আব্বুর জীবনটা ভরপুর আর আম্মুর জীবনটা শূণ্য । এবং খুবই নরম কয়েকটি শাখা প্রশাখা দ্বারা জড়ানো । একটু বাতাস আসলে ভেঙ্গে যাবে । তাই আমি শুধু আম্মুর ।


কে ফোন দিল দেখোতো দাদিমা। বলো আমি আসছি
দাদি আব্বু ফোন দিয়েছে । আমি কথা বলবো না।
হ্যালো মাহিনঃ কেমন আছো তুমি। এতদিন পর ফোন
আসসালামুলাইকুম আম্মা । আমি ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন । আপনি ফোন ধরছেন না আজও । আপনি ফোন ধরতে দেরি করেন কেন । আরে বাবা কাজে ব্যস্ত থাকি কখনো কখনো । এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই । একা একা আর কত । আম্মা আর একা থাকতে হবে না । আমি আগে বলে ছিলাম আপনাকে যে, আমি চেষ্টা করতেছি আপনার ভিসার জন্য যাতে আপনাকে কানাডায় নিয়ে আসতে পারি। কয়েক দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে । আমি আসবো দেশে মৌরিকে দেখেও আসবো , আপনাকে নিয়ে আসবো । আর অল্প কয়েকটা দিন কষ্ট করেন । আচ্ছা ওইসব কথা পরে বলবো । টাকা পাঠাও এখন ঠিক আছে পাঠাবো । আপনি মানসিক প্রস্তুতি নেন।
আল্লাহ হাফেজ । ভালো থাকবেন ।
মৌরি কিছু দিনের মধ্যে তোমার আব্বু আসবে দেশে । বললো আমাকে নিতে আসবে । ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। চমৎকার খবর দাদি । তুমি কানাডায় চলে যাবে । আম্মু আম্মু সুখবর শুনে যাও । দাদি কানাডায় চলে যাবে । তুমি দাদির জন্য আর চিন্তা করতে হবে না । থামো মা । কি হয়েছে ধীরস্থির হয়ে বুঝিয়ে বলো। আব্বু একটু আগে ফোন দিয়ে ছিলো দাদিকে । বলেছে যে দাদির কানাডার ভিসা হচ্ছে । আব্বু নিয়ে যেতে আসবে । কি মাদার খুশির খবর না এটা । অবশ্যই খুশির খবর। মা ছেলের কাছে থাকবে যত্নে। (চলবে) ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৩তম পর্ব ।

আমরা চলে যেতে হবে মামনি । অনেক দিন বেড়ানো হলো। তোমার দাদি আর আমাদের সাথে যাবে নাকি। আমিও চলে যেতে যাই । দাদি কানাডায় চলে যাবে শুনে আর এখানে থাকতে একদম মন চাইতেছে না । মামনি পৃথিবীতে আমরা সবাই একা খুবই খুবই একা।আমার পাশে একদিন সব ছিল আজ শুধু তুমি আছ।জীবনের প্রয়োজনে তুমি হয়তো একদিন থাকবে না। হয়তো আমি নিজেও না থাকতে পারি ,সবই বিধাতার হাতে । মেয়ে মানুষ নিজেকে কচুপাতার উপর জলবিন্দুর মত টলমল করে রাখে । যেন পুরুষ মানুষ ধাক্কা দিলে গড়িয়ে মাটিতে পড়ে মিশে যায়। আমি যেমন তোমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে দশজনের একজন করতেছি মানুষ হিসাবে । তেমনি তোমার নানুমনি আমাকে করেছে তবে আরেকজনের গৃহিনী হতে। আমি গৃহিণী হওয়ার পাশাপাশি নিজ চেষ্টায় মানুষ হয়েছি বলে ঝড়ে আজ ভেঙ্গে পড়ি নাই । তোমাকে মানুষ হতে হবে নিজের প্রয়োজনে , অন্যের সংসারের প্রয়োজনে নয়। সংসার একটা সামাজিকতা । এখানে পছন্দ অপছন্দ , ভাঙ্গা গড়া থাকবেই । এইটা জীবনের একটা অংশ মাত্র মনে করতে হবে । এতে আবেগের কোন মূল্য নাই ।পৃথিবী সুন্দর আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ছুটতে হবে। এখানে আপন পর বলতে কিছুই নেই । সব মেয়ের এই ছুটে চলার যোগ্যতা থাকে না । এইটি তার অপরাধ নয়। তাই তাকে সংসারের সব কিছু আপন করে নিতে হবে। প্রতিহিংসার মনোভাব হলে তাকে অনলে পুড়তে হবে অবধারিত । আমি জীবনের দৌড়ে ছুটেছি বলে মাথা উচু করে তোমাকে বুকে আগলে রেখেছি । আবার সংসার আপন করেছি বলে তোমার দাদি আমার জন্য হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা বিলীয়ে দিচ্ছে ।এইটা আমার আশীর্বাদ ।খুব মন খারাপ হচ্ছে উনি চলে যাবে । হয়তো আর কোনদিন এই জীবনে দেখাও হবে না কোন দিন । তোমার নানীর বাড়ি গেলে ওরা ওদের মত বকঝকা করবে। যা আমার একদম ভালো লাগবে না । আম্মু আমরা মা মেয়ে পৃথিবীতে একা এইটাই সত্য। তবে তুমি আমার আম্মু এইটা আমার গর্ব । তুমি আমার মমতা , তুমি আমার মায়া , তুমি আমার মা।


আমি তোমাদের দেখতে আসবো । ফোনে প্রতিদিন কথা বলবো মৌরি আর তোমার সাথে। মন খারাপ করো না । কয়েক দিনের মধ্যে আমি শিউলীকে পাঠাতে চেষ্টা করবো। বাসায় পৌছেই ফোন দিও। যদি পরজমনে সুযোগ হয় আমি তোমার মা হবো , শাশুড়ী নয়। আমি তুমি আর মৌরি থাকবো স্বর্গীয় সেই ঘরে (উচ্চস্বরে কান্না )। ক্ষমা করে দিও আমাকে। কি যে কথা বলেন আম্মা । কেন জানি আপনাকে আমাদের কাছে রাখতে খুব মন চাইতেছে । ঢাকা যেতে একদম মন চাইতেছে না । আপনাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে । ভালো থাকবেন ।
আয় দাদিমা , আমি একটু কপালে আদর দিয়ে দিই। (মৌরি দাদিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে )। এত জোরে কান্নায় আশপাশের বাড়ির সবাই ছুটে আসে । সব মহিলা মৌরিকে বুকে নেয় এবং কান্নায় চোখ মুছে। রবিনের গ্রুপ সবাইর আগেই এসে হাজির মৌরিকে বিদায় জানাতে । মৌরি সবার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে । জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় । জীবনের নানা ঘটনাই নাটক। কিন্ত নাটক মানুষ সাজাতে পারলেও জীবন সাজানো কঠিন হয়ে পড়ে। আম্মু আসো আমরা বের হই । আসলে আম্মু দাদিকে অত্যন্ত ভালোবাসে । এবং সবচেয়ে সত্য কথা দাদি আম্মুকে ছাড়া কোন কিছু কল্পনাও করে না। এই কল্পনার আজ হয়তো যবনিকা এখানেই।


রেল গাড়ির কামরায় আম্মু নীরব বসে থাকে । চুপচাপ জানালা দিয়ে বাহিরের প্রকৃতি দেখে । দাদি পানি খাবার সব দিয়ে দিয়েছে । তাই আর কিছু কিনতেও হবে না। হুইসেল পড়ার সাথে সাথে গাড়ি চলতে শুরু করে। বাঁকা রেল লাইন দেখে মনে পড়ে “রেল লাইন বয়ে সমান্তরাল ”। জীবনও ঠিক রেল লাইনের মত বয়ে চলে। গাড়ী ছুটে চলছে , আমি নীরব হয়ে আম্মুর কাঁধে মাথা রেখে ঘুম যাওয়ার চেষ্টা করি। অন্য সময় আম্মু কথা বললেও আজ একদম চুপ করে আছেন । তাই আমিও কোন কথা বলছি না তবে আমার একদম চুপ হয়ে থাকতে ভালো লাগে না আম্মু আমার জন্য নিজের জীবনের একাকিত্ব মেনে নিয়েছে । এই ভালোবাসার এই ত্যাগের কোন মাপ পরিমাপ কখনো হয় না। এত কষ্ট এত ঋণ সন্তান বুঝতে চায় না আদৌ । আমিও কি পারবো এই ঋন বয়ে বেড়াতে । তবে সব ভালোবাসা মায়ের চরণে । মৌরি উঠো আমরা ঢাকা এসে গিয়েছি , উঠো মামনি।বাসায় এসে দাদিকে ফোন করে আম্মু । মা মেয়ে মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। আমরা কেউ আর দাদির কথা বলি না মন খারাপ হবে বলে। চলে যায় কয়েকদিন , এখন অনেকটা স্বাভাবিক আমরা ।


হ্যালো দাদিমা । কেমন আছো । তোমার আম্মু কেমন আছে। জলিকে ফোন দিলাম ধরলো না ব্যস্ত মনে হয় জ্বী , আসসালামুলাইকুম । আমরা ভালো আছি । আম্মু স্কুলে তাই ফোন ধরে নাই মনে হয়। আপনি কেমন আছেন । আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো। আমি ভালো আছি । তোমার আব্বু আসবে পরশুদিন আচ্ছা , দাদি আমাদের বাসায় না আসলে ভালো হয়। কেন দাদিমা । তোমার সাথে দেখা করতে যাবে না । দাদি আমার মা আছে বাবা নেই । আর মা‘ই সবকিছু। তাই মায়ের কষ্ট হবে অপমান হবে এমন কোন কাজ করা কি আমার মানায় । উনার বাসায় থেকে আব্বুকে এনে চুরি করে দেখা করতে আমার বিবেক বাঁধা দিচ্ছে। তাই মায়ের মাঝে বাবাকে দেখবো । আর আব্বু আসলে ফোন করারও দরকার নেই । দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আম্মু অনেক কষ্ট পাচ্ছে আপনি চলে যাবেন তাই। আপনাকে অনেক ভালোবাসে আম্মু । আব্বুর অপমান আর মেনে নিবে না । যদি আম্মুর মন পাল্টে যায় আমি কোথায় যাবো দাদি বলো । তাই দুরে থাকা ভালো হবে । (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৪তম পর্ব।

বৃদ্ধাশ্রমের বুড়া মা লাঠি ভর করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশপানে চেয়ে খোঁজ করে পঞ্চাশ বছর আগেও একটি রাতে এমন জোছনা ছিলো । মাঝখানে নেই আমার ভালোবাসা । মৌরি চলে গেলে আমাকেও হয়তো এইভাবে আকাশ দেখতে হবে কোন আশ্রম জীবনের শেষ পর্যায় । মৌরির জায়গায় আরো চারজন থাকলে যে জীবন সহজ হবে তার কিবা নিশ্চয়তা । তার চেয়ে ভালো মৌরিকে বুকে ধরে রাখি। হয়তো কোন ভুল ছিলো আমার তাই জীবন ছন্দহীন । থাক সেই ভুল আমার অলংকার হয়ে। আম্মু অন্ধকারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো কেন । তুমি দাদির বাড়ি হতে আসার পর চুপচাপ হয়ে গিয়েছো । কি হয়েছে আম্মু বলা যাবে । দাদির জন্য তোমার মন কাঁদছে । এইটা সত্য আর এই জীবনে দাদির সাথে আমাদের দেখা হবে না । দাদি থাকলে আমরা গ্রামে বেড়াতে যেতে পারতাম। সে আমাদের অনেক যত্ন করেন । কিন্তু এখন আর কিছুই হবে না। তাই বলে আম্মু তুমি মন খারাপ করছো কেন । তোমার মন খারাপ থাকলে আমার কিছুই ভালো লাগে না । জানি তুমি দাদিকে অনেক ভালোবাসো । মা মৌরি জীবন এত জটিল হবে ভাবতে পারি নাই। পৃথিবীর সব থেকে বড় ডাস্টবিন মানুষের মন ,এটা পরিস্কার থাকলে পৃথিবী পরিস্কার থাকবে। অথচ আমাদের ঘরেই ডাস্টবিন ছিলো আর আমি বুঝতে পারি নাই । অগাধ বিশ্বাস আমার অপরাধ ছিলো । এই ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে তোমার আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । আমি কিছুইতে তোমার দাদিকে ভুলতে পারবো না। উনার মত শাশুড়ী বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে হলে নারী নির্যাতন অনেক কমে যাবে । মানুষ যৌতুকের জন্য কিংবা মাদকগ্রস্ত হয়ে বউ পিটাতে আসলে এইসব শাশুড়ী প্রতিবাদ করবে,বাঁধা দিবে। উনি আমার জন্য কিছু করতে না পারলেও মানসিক সমর্থন করতেন । আমার একজন অভিভাবক ছিলেন । তোমার নানী মামা আমাকে বুঝতে চায় না । উনারা যেটা বুঝেন সেটা হলো সব ছেড়ে ছুড়ে আমি আবার বিয়ে করি । মারে মেয়েদের জন্য সংসার অপরিহার্য । কিন্তু তুমি এবং তোমার দাদি আমার অস্তিত্বে মিশে আছে এটা অন্যরা মূল্য দিবে না।

কান পাতলে দুনিয়াজুড়ে একটি শব্দই প্রায় শুনা যায়। ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি। এটা দুনিয়া, এই পৃথিবীতে ভালোবাসা আছে, প্রিয় মানুষ আছে, প্রাণের বন্ধন আছে, কিন্তু দুঃখের সময়ে পাশে থাকার মানুষ নাই। মানুষের ধন সম্পদ, অর্থ বিত্ত থাকার পরও মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে ফেলেছে লোভ । যদি কেউ কোন সময় কিছু চেয়ে বসে এই ভয় মনের ভিতর। আমি তোমাকে আত্নকেন্দ্রিক হতে বারণ করবো । সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে মানিয়ে চলবে তাহলে মানসিক যন্ত্রণা কম পাবে । সততা এবং সহনশীলতা মেনে চলবে জীবনের প্রতি পথে পথে। আমি সুযোগ পায়নি আত্নপক্ষ সমর্থন করার ।ফেলে বুঝতে পারতাম কি আমার ভুল ছিলো । সংসার কিংবা কর্ম কোথাও ধর্য্য হারা হওয়া যাবে না। এক সময় তুমি ছাড়া আমার আপন কেউ আর থাকবে না তখন আমাকে কষ্ট দিও না ।
আম্মু কি আজ পাগলের মত প্রলাপ করতেছো । তোমার কি শরীর খারাপ বা মন খারাপ লাগছে । সব ভুলে যাও আম্মু ।


“পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না ,বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়। জেনে রেখো, জীবন হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জিনিস এবং ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি। মন রাখতে হবে আমি কোন ক্ষেত্রেই সেরা না বরং খুব কম ক্ষেত্রেই ভাল বলা যায়। আর অন্যের মতোই আমিও অনেক কিছু ভুলে যাই। এ জীবনে আমি যা শিখেছি সেটা হচ্ছে,আমাদের একে অপরের
ভুলগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কগুলোকে উপভোগ করতে হবে। জীবন খুবই ছোট, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনুতপ্ত বোধ করার কোন মানেই হয়
না। যে মানুষগুলো তোমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসো আর যারা তোমাকে মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হও।” বিখ্যাত লোক এমন কথাই বলে । মৌরি জীবনকে তুমি এমন ভাবে করে গড়ে তুলবে যেন মাঝ পথে এসে আমার মত এই রকম থমকে না যায়।
পরিশ্রম আর ভাগ্য'র পার্থক্য হলো পরিশ্রম সিড়িঁর মতন , ভাগ্য লিফটের মতন। লিফট যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে। কিন্তু সিড়িঁ সবসময় তোমাকে উপরের দিকে নিয়ে যাবে। আমি মা হিসাবে তোমাকে আর কিবা করতে পারবো । কিন্তু উপরে উঠার সিড়িঁ তৈরি করে দিতে পারবো । এখন তোমার ইচ্ছা তুমি সিড়িঁ ব্যবহার করবে না লিফট ব্যবহার করবে।


আম্মু তোমার ফোন বাজে । আমি কি কথা বলবো । ঠিক আছে কথা বলে দেখো কে ফোন করলো ।
হ্যালো , আসসালামুলাইকুম দাদি । কেমন আছেন । মৌরি আমি আব্বু। আমি রাতে এসেছি তাই ফোন করি নাই । এখন দিলাম কেমন আছো মামনি । জ্বী ভালো আছি । ঠিক আছে এখন ফোন দিয়েছেন । তুমি আসবে গ্রামে নাকি আমি আসবো যেটা ভালো । আব্বু আমিও যাবো না আর আপনিও আসবেন না । এতে ভালো হয় , আর কোন দিন ফোন করারও দরকার নেই । সরি পাপা । আমি চাই না আপনার প্রভাব আমার জীবনে পড়ুক । আমার আম্মুই আমার সব । আমি জানি দাদিও চলে যাবে কানাডায় । আপনি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকবেন । আর আমাদের হতে দুরে থেকে আমাদের ভালো থাকতে সাহায্য করবেন। আমার জন্য টাকাও পাঠাতে হবে না এইভাবে কেন কথা বলছো । আমি তোমার পাপা । জানি আমি আব্বু । কিন্তু আমার মা আপনার কেউ না। আর আমি আমার মায়ের সব কিছু । আমার মা আমার জন্য বক্ষস্থল । ঠিক আছে রেখে দিলাম ফোন। এত কথা বলতে ইচ্ছা করছে না সরি , আপনি ভালো থাকুন । (চলবে) I

মেয়ে ও মায়া , মাদক রাষ্ট্র । ১৫তম পর্ব।

আম্মু একটা কথা বলার ছিলো । তুমি আবার রাগ করো না । অবশ্যই তুমি শুনলে রাগ করার কথা। কি এমন কথা যে আমি শুনলে রাগ করবো , শুনি। আব্বু ফোন দিয়ে ছিলো । উনি বাসায় আসতে চায় । আমি না করেছি । এবং আর কোনদিন ফোন দিতেও নিষেদ করেছি। কারণ আমার ইচ্ছে করে না কথা বলতে। আব্বু কথা না বলেও আমার ক্ষতি নেই । মা কাজটা ঠিক হয়নি । উনি ভাববেন আমি নিষেদ করছি। তবে উনি বাসায় আসার দরকার নেই । আমার সময় নেই উনাকে দেওয়ার মত । তবে ফোন করতে কেন নিষেদ করেছো। আর তোমার মন চাইলে তুমি নিজেই ফোন করে কথা বলতে পারো সবসময়। আমি কিছুই মনে করবো না । কিন্তু আঘাত করার দরকার নেই। উনি ভাববে আমি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তোমাকে দিয়ে এমন করতে বলছি । মাহিনের জন্য দয়া এবং ঘৃণা কোন কিছুই আমি অনুভব করি না । এবং করা উচিতও না যার যার ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকা শ্রেয়। সে হয়তো লোভে পড়ছে । একদিন লাভ এবং লোভ কোন কিছুই থাকবে না । তখন আবার ফিরে আসতে হবে নিজের পুরাতন নীড়ে । যেমন পাখি আকাশের শেষ ছোঁয়া বাকি রেখে নীড় খোজ করতে হয়। তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কাউকে নিয়ে ভাবনার অবকাশ নেই আমার । তোমাকে শিক্ষাদীক্ষায় বিকশিত করাই আমার কাজ। আম্মু আমার অনার্স শেষ হলে আমিও বাহিরে চলে যাবো পড়তে । এবং সেখানে সেটেলড হয়ে তোমাকে নিয়ে যাবো । আমিও চাই তুমি বিদেশ গিয়ে পড়ো । তবে আমি কোথায় থাকি তার কোন ঠিক নাই । তোমার নানীর বাড়ি গেলে মানসিক শান্তি পাবো না,না হয় সেখানে গিয়ে থাকতাম । তোমার নানী মামা মামনি রোজ বলবে জলি তুমি আবার বিয়ে করো ।


আমি মৌরিকে ফোন দিয়ে ছিলাম সকালে আম্মা । মেয়েটা এমনভাবে কথা বললো যেন আমাকে চিনে না। নাকি ওর আম্মু এইসব বলতে বলেছে, কি জানি। দেখো বাবা আমি এই সবের মধ্যে নেই । জানি না এদের মনে কি আছে । আমি দুরে আছি , দুরে থাকি।তবে আমি ফোন করে বলে দিবো কখন আমরা চলে যাবো। এখন তুমি জায়গা জমি কি করবে ঠিক করো। কাকে কি দিবে , কি করবে সব ভেবে চিন্তে ঠিক করো
সবটি জমি এতিমখানার কাছে দেখাশোনা দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। জমিও ঠিক থাকবে এবং চাষাবাদ করে এতিমখান চলবে। ব্যাংকের টাকা তুলে যারা এত দিন আমার দেখাশোনা করেছে তাদের কিছু কিছু দিয়ে দাও। আর বাড়ির আশপাশে খালি জায়গায় গাছ লাগিয়ে দাও। পাহারাদার একটা লোক এমনিতে বাড়িতে রাখতে হবে , সে এইসব দেখবে। এইসব জায়গা সম্পত্তি সব তোমার যেটা ভালো হয় সেটা করো। আমার এসব নিয়ে তোমার উপর কোন জোর নাই। আমি মরে গেলে তুমি হয়তো আর দেশেই আসবে না । এখনতো আমাকে নিতে এসেছো । আমি মনে করে ছিলাম কিছু জায়গা মৌরির নামে করে যাবো । এবং বেশ কিছু টাকা ওর নামে ব্যাংকে রেখে যাবো কিন্তু মেয়েটা কথায় আমার খুব হিট লাগলো । খুব অপমানবোধ মনে হলো আম্মা । আমি আগেই বলেছি সেটা তোমরা বাপ-বেটির ব্যাপার ।


হ্যালো বউমা । কেমন আছো । মৌরি কেমন আছে। আসসামুলাইকুম আম্মা । আমরা ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন। ঔষধ খাচ্ছেনতো ঠিকভাবে। আমি ঠিকভাবে সব কিছু করছি । সামনের শুক্রবার আমি চলে যাবো বউমা । আর দেখা হচ্ছে না তোমাদের সাথে। মৌরি আসলে ফোন দিতে বলো।মৌরির সাথে আমার কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। সবকিছু গোছানো লাগছে । ব্যস্ত থাকি তাই সময় পাই না । ফোন দিতে না পারলে রাগ করো না । তোমারা আমার হৃদয়ের অনেক গভীরে আছো এবং থাকবে। আমার মন খারাপ হলে তখন হৃদয়ে যে পুত্রবধূ আছে তার সাথে কথা বলি । একমাত্র নাতনী আজ তার বাবার হতে দুরে থাকতে ভালোবাসে । আর এই ভালোবাসা একজন মা‘কে শ্রদ্ধা করে। আমার দোয়া একজন একা যুদ্ধরত মায়ের প্রতি । আর শুনো শিউলী মেয়েটা নাকি কোন ছেলের সাথে চলে গিয়েছে । এত ছোট মেয়েও প্রেমটেম করে বুঝি না। ভালো হয়েছে এখানে এসে চলে গেলে আমার আইনগত সমস্যা হতো। আল্লাহ বাঁচিয়ে দিলো । আপনি মন খারাপ করবেন না আমাদের জন্য । ওখানে গিয়ে কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। (চলবে)।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 3টি মন্তব্য এসেছে।

borhan081975
১৫-০৬-২০২০ ০৭:১৯ মিঃ

বেশ ভালো লেখা প্রিয় কবি।

Mali
২৯-০৫-২০২০ ১২:০২ মিঃ

অসাধারণ

almamun1996
২৮-০৫-২০২০ ১১:৫৬ মিঃ

ভাল লাগলো। অনেক বড়। সবটুকু পড়তে সময় লাগবে