তসলিমা নাসরিন
তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট ১৯৬২) বাংলাদেশী-সুইডিশ লেখক, চিকিৎসক, নারীবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী এবং কর্মী। তিনি নারী নিপীড়ন এবং ধর্মের সমালোচনা নিয়ে লেখার জন্য পরিচিত; তার কিছু বই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ । তিনি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উভয় থেকেই বঙ্গীয় অঞ্চল থেকে কালো তালিকাভুক্ত এবং নির্বাসিত হয়েছেন ।
তিনি বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন এবং তার রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচার করায় ইসলামপন্থীদের রোষানলে পড়েন ও তাদের নিকট হতে হত্যার হুমকি পেতে থাকায় ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন। তিনি ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকেরও বেশি সময় বসবাস করার পর, তিনি ২০০৪ সালে ভারতে চলে আসেন,কিন্তু ২০০৮ সালে তাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। এরপর তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতে অজ্ঞাতবাসে অবস্থানের সুযোগ পান। বর্তমানে তিনি দিল্লিতে বসবাস করছেন।
তসলিমা নাসরিন ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের ময়মনসিংহ শহরে একজন বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারী গ্রামীণ হাসপাতালে এবং ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকহা) তে অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তেরো বছর বয়স থেকে তসলিমা কবিতা লেখা শুরু করেন। কলেজে পড়ার সময় ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেঁজুতি নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তসলিমার কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা নামক তার প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে ও ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে আমার কিছু যায় আসে না কাব্যগ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়। এই সময় তসলিমা ঢাকা হতে প্রকাশিত নঈমুল ইসলাম খান দ্বারা সম্পাদিত খবরের কাগজ নামক রাজনৈতিক সাপ্তাহিকীতে নারী অধিকার বিষয়ে লেখা শুরু করেন। নির্বাচিত কলাম নামক তার বিখ্যাত প্রবন্ধসংকলন প্রকাশিত হয়, যার জন্য ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অতলে অন্তরীণ, বালিকার গোল্লাছুট ও বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা নামক আরো তিনটি কাব্যগ্রন্থ; যাবো না কেন? যাব ও নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প নামক আরো দুইটি প্রবন্ধসংকলন এবং অপরপক্ষ, শোধ, নিমন্ত্রণ ও ফেরা নামক চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে লজ্জা নামক তার পঞ্চম উপন্যাস প্রকাশিত হয়।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র প্রেমে পড়েন এবং গোপনে বিয়ে করেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে তার বিয়ে এবং ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ হয়। তিনি ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদকে বিয়ে করেন এবং ১৯৯২ সালে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়।
গ্রন্থ তালিকা: কবিতা
শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা, ১৯৮১
নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে, ১৯৮৯
আমার কিছু যায় আসে না , ১৯৯০
অতলে অন্তরীণ, ১৯৯১
বালিকার গোল্লাছুট, ১৯৯২
বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা, ১৯৯৩
আয় কষ্ট ঝেঁপে, জীবন দেবো মেপে, ১৯৯৪
নির্বাসিত নারীর কবিতা, ১৯৯৬
জলপদ্য, ২০০০
খালি খালি লাগে, ২০০৪
কিছুক্ষণ থাকো, ২০০৫
ভালোবাসো? ছাই বাসো!, ২০০৭
বন্দিনী, ২০০৮
পুরস্কার ও সম্মাননা:
আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ এবং ২০০০
নাট্যসভা পুরস্কার, বাংলাদেশ, ১৯৯২
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট কর্তৃক শাখারভ পুরস্কার, ১৯৯৪
ফ্রান্স সরকার প্রদত্ত মানবাধিকার পুরস্কার, ১৯৯৪
ফ্রান্সের এডিক্ট অব নান্তেস পুরস্কার, ১৯৯৪
সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল পেন কর্তৃক কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার, ১৯৯৪
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ কর্তৃক হেলম্যান-হ্যামেট গ্রান্ট সম্মাননা, ১৯৯৪
নরওয়েভিত্তিক হিউম্যান-এটিস্ক ফরবান্ড কর্তৃক মানবতাবাদী পুরস্কার, ১৯৯৪
তথ্য ও ছবিসূত্র: উইকিপিডিয়া
আজ পর্যন্ত এই ওয়েবসাইটে তসলিমা নাসরিন এর ৭৫টি কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।