আবারো পলাশীর ভয়
- সোলায়মান শিপন ১৪-০৫-২০২৪

ওরা আবার আমার মুখের ভাষা
কাইরা নিতে চায়,
ওরা আবার আমার হাতে পায়ে
শেকল পড়াতে চায়।

আমি দেখেছি ওদের হাতের শেকলটি,
ধর্মের দোহাইয়ের যে শেকল ওদের হাতে -
তা যেন আটচল্লিশের গন্ধ ছড়ায় বাতাসে।
তাহলে কি আবার একটি বায়ান্নর অপেক্ষায়?

ওরা আবার আমায় ভয় দেখায় -
আমি দেখেছি ওদের ভয়,
ঐতিহাসিক এ ভয় পুরোনো দিনের কথা কয়।

এ যেন বাতাসে শহীদের
গলিত লাসের গন্ধ ছড়ায়।

আমি ভয় পেয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেই,
কিন্তু একি!
আমার কলমের ভাষা কেরে নিতে সবাই একসাথে
যখন বদ্ধপরিকর,
ঠিক তখনি কে সে আমায় সাহস জোগায়?

আমি তাকে জোড় সরে প্রশ্ন করি -
এই কে তুমি?
তোমার বুকের রক্তগুলো এখনও এত তাজা কেন?
তোমাকে কি এইমাত্র মেরে ফেলা হয়েছে?
কেন মারা হয়েছে?
তুমিও কি আমার মত কবিতা লিখতে?

সে হাঁসে,
বলে - আমি শহীদ।
আমার রক্তগুলো তোমার রক্তের মত নয়।
তবে আমার কথাগুলো তোমার কবিতার মত ছিল।

সে আমাকে প্রশ্ন করে -
এই তুমি কি ভয় পাচ্ছ?
আমি লজ্জ্বায় পড়ে যাই
সাথে হই গর্বিত।

আমি বলি - এই তুমি কি সৌরতন্ত্রের পতনের বীর
নাকি মুক্তিকামীদের সাধক?
সে বলে সৌরতন্ত্রের পতন আর মুক্তিযুদ্ধের সুতো
আমি ভাষা শহীদ।

ঠিক তখনি অন্যরকম সাহস অনুভব করি -
আমার শিরা উপশিরা দিয়ে
অশান্ত রক্তরা যেন ছোটাছোটি করেছে।

আমার রক্ত কিছু বলতে চায়,
তাহলে এ রক্ত কি সাধকের রক্তের সাথে
মিশে যেতে চাইছে?

এই তুমি কি আমার কাছের জন,
অথবা কোন দুরাত্মীয়?

সে হাঁসে।
বলে - আমি তোমার কাছের জন নই,
আমি তোমার দুরাত্মীও নই;
আমি তোমার ভেতরের জন।
আমি এসেছি তোমার ভয় দুর করতে।

তুমি কি শুধু আমার কাছেই এসেছ?

আমি যুগে যুগে অনেকের কাছেই এসেছি।
যখন ধর্মের অপব্যাক্ষায়
তোমার বাকস্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে -
যখন মূর্খতার বেড়াজালে
কোন কাপুরুষ তোমার ভেতরে ভয় সঞ্চার করতে চেয়েছে
আমি এসেছি, আমি এসেছিলাম, আমি আসব।
তোমাদের স্বাধীনতাকে বাঁচাতে।

আমি যে মরিনি,
আমার বুকের ভেতর থেকে কিছু রক্ত ওরা
বের করে নিয়েছিল ঠিকই,
রক্তগুলো মাটিতে পরার সঙ্গে সঙ্গে
নবচেতনার যে দিক উম্মোচিত হয়েছিল
তা ওরা দেখেনি তখন।

এখন দেখছে তোমার মধ্যে,
মুক্তিকামী মানুষের ভিতরে
আর ওটাই ওদের ভয়।

তাই ভয়কে ভয় দিয়ে জয় করার
নতুন ইচ্ছায় ওরা মেতেছে।

তুমি তাকাও আমার দিকে,
চেয়ে দেখ আমার রক্ত জমাট বাঁধেনি
তোমার রক্তও জমাট বাঁধবে না।
শহীদের রক্তে অনুচক্রিকারা থাকে না।
তাহলে তোমার কিসের এত ভয়?

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে
রক্ত ঝড়ানো শিখিয়েছিলাম
আজ আমার গুরু দক্ষিণা নেওয়ার সময় হয়েছে
আমায় গুরু দক্ষিণা দাও।

কি দিব গুরুদক্ষিণা?

সে আবার হাঁসে।
দেশমৃত্তিকায় ফসল বুনে দিয়েছি
তোমার রক্ত ভরেই না ফসল বেড়ে উঠবে।

আমি লক্ষ করলাম আমার ভিতরে
হারানো সাহস ফিরে এসেছে -
আর তার সাথে মিশে গেছে
ভাষা শহীদের সাহস।

এখন আর ভয়কে ভয় মনে হচ্ছে না,
মনে হচ্ছে প্রেরণা।
মুখের ভাষার মত কলমের ভাষাকে রক্ষার্থে
আমি আবার লেখার মাঠে নেমে পড়লাম,
আমার সাথে কোন ভয় এখন আর নেই
আছে শক্তি।
ভাষা শহীদের প্রেরণা,
শহীদ হবার তীব্র আকাঙ্খা।

শরীর থেকে অনুচক্রিকারা বের হয়ে যেতে
অশান্তভাবে ছোটাছোটি করছে।

আমি অপেক্ষা করছি মৃত্যুর নয়, অমরত্বের।
আর তার সাথে বাঙ্গালির কথা বলার
অধিকারকে বাঁচানোর।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

rjmahin
১৩-০৮-২০১৬ ০৯:২৫ মিঃ

চলুক সংগ্রাম