ছোট গল্প .........."ছন্নছাড়া" ৩য় পর্ব
- মোঃ বজলুর রশীদ ০৯-০৫-২০২৪

এবার আমার গন্তব্য নীলসাগর এর ব্রীজ সেখানে বসে আকাশ দেখবো । কিছুক্ষন হাঁটার
পর নীলসাগর এর ব্রীজে এসে পড়লাম। নীলসাগর একটি কৃত্রিম নদী দেশ স্বাধীন হওয়ার
পর ১৯৭৯ সালে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৫ সালে সৌদি
উন্নয়ন তহবিল ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আবুধাবি উন্নয়ন তহবিলের
প্রায় ২,৫০০কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা ব্যারেজসহ সেচ যোগ্য কৃষিজমি ও জলকাঠামো
নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং একই বছর ৫ আগস্ট এর
কার্যক্রম চালু হয়। এর মোট নির্মাণ ব্যয়ছিল ১৫শ কোটি।এ প্রকল্পটি নীলফামারী,
রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করে।

যে এই প্রকল্পটির পরিকল্পনাকারী সে সত্যিকার অর্থে একজন মেধাবী ও মহৎ মানুষ ।
জলঢাকার মানুষ অনেক অভাবী ছিল এই প্রকল্পের ফলে জলঢাকায় তেমন একটা আর অভাব দেখা যায় না ।

রাত এখন অনেক হয়েছে আসে পাশে কোন শব্দ নেই ,তাই নিরিবিলি আকাশ দেখার মজাই
আলাদা।

আকাশ আজকে অন্য সব দিনের চেয়ে বেশি পরিস্কার, আকাশে অসংখ নক্ষত্র দেখা যাচ্ছে । আমাদের সকলকেই সৃষ্টির রহস্য নিয়ে ভাবা উচিত ,তাহলে আমাদের মধ্যে যে
লোভ,হিংসা,অহংকার মানুষের এই সহজাত প্রবৃত্তিগুলো কিছুটা হলেও কমে যেত।

ভাবতে শুরু করলাম মহাজাগতিক ঘর্ষণ বা বিগ ব্যাং ঠিক কত বছর আগে হয়েছিল, অর্থাৎ
মহাবিশ্বের সৃষ্টি ঠিক কত কোটি বছর আগে হয়েছিল । ভাবতে ভাবতে চোখ পড়লো
সপ্তর্ষিমন্ডল এর দিকে সপ্তর্ষিমন্ডল দেখতে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো ,ইংরেজি
ursa major বা Great Bear।  দ্বিতীয় শতকের জ্যেতির্বিদ টলেমি কর্তৃক প্রনীত
৪৮টি তারামন্ডলের একটি।  সাতটি তারার সমন্বয়ে গঠিত নক্ষত্রপুঞ্জ ।


উত্তরগোলার্ধ থেকে সারা বছরই এই তারামন্ডলীকে দেখা যায়। উপমাহাদেশের
জ্যোতির্বিদগণ সাত জন ঋষির নামে এই সাতটি তারার নাম করণ করেন তাই এই
নক্ষত্রপুঞ্জ সপ্তর্ষিমন্ডল নামে পরিচিত হয়। সাতটি ঋষির নাম:ক্রতু , পুলহ ,
পুলস্ত্য ,অত্রি ,অঙ্গিরা , বশিষ্ঠ, ও মরীচি ।

ভাবতে অবাগ লাগে একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে কিছু উপগ্রহ ঘুরছে ,সূর্য একটি
নক্ষত্র এরকম অসংখ্য নক্ষত্রব্যবস্থা নিয়ে গঠিত হয় একটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি।

আর মহাকাশে অসংখ্য ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি আছে আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করি তার
নাম Milky way বা আকাশগঙ্গা অথচ বিজ্ঞান এখনো সৌরজগত নিয়ে পরে আছে ।

এইসব চিন্তা করতে করতে হঠাৎ একটা লাঠির শব্দের আওয়াজ শুনলাম ,তাকিয়ে দেখি একটি
পুলিশ ভ্যান সহ কয়েকজন পুলিশ ।একজন পুলিশ আমার সামনে এগিয়ে এসে বললো এই ব্যাটা
এত রাতে এখানে কি করিস ,পুলিশের আবার একটা স্বভাব হল সবাইকে তুই তুই করে কথা
বলা ।

আমি বললাম রাতের আকাশ দেখি ,ফাজলামী হচ্ছে রাতের আকাশ দেখা না এখানে বসে
ছিনতাই করার পরিকল্পনা হচ্ছে ,তুই জানিস দুই দিন আগে এখান থেকে দুইটা
মোটরসাইকেল ছিনতাই হয়ে গেছে ,আমি বললাম জি না স্যার আমি জানি না ,পুলিশ বললো
জানিস না থানায় চল জানতে পারবি এই বলে আমার গালে একটা থাপ্পড় মারলো ,আমি কিছু
বললাম না ।

আমাকে টানতে টানতে পুলিশ ভ্যান এর কাছে নিয়ে যেয়ে আর একজন পুলিশকে
বলল স্যার একজন ছিনতাইকারী ধরেছি,ব্যাটাকে একটা থাপ্পড়ও দিয়েছি , ভালো করেছি
না স্যার ,যে পুলিশটিকে স্যার বলছে সে মনে হয় এসআই পদবির হবে ,আমাকে পুলিশ
ভ্যানে উঠানো হলো ,আমি একজন পুলিশকে বললাম স্যার একটা সিগারেট হবে ,সিগারেট এর
নেশা উঠেছে একটা সিগারেট পান করতাম,  আমার কাছে কোন সিগারেট নেই তো একটা যদি
ধার দেন তাহলে পরে ফিরত দিব,ভুরু কুঁচকে পুলিশ বলল ব্যাটা আগে থানায় চল কতগুলো
সিগারেট খাবি তখন খাস ।

আমাদের বাঙ্গালীদের ভাষাগত একটা সম্যসা তা হলো চা
,পানি, সিগারেট খাই বলি ,আসলে বলা উচিত পান করি ,অন্য ভাষাতে এরকম কোন ভুল নেই
।আপেল মিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে ,ওকে যদি বলতাম আপেল মিয়া আজকে আমার কোন বিপদে
পড়ার সম্ভবনা আছে কি না ,তখন হয়তো সে কিছু একটা বলে দিত।

আমাকে জলঢাকা থানায় নিয়ে আসা হলো ,তখন অনেক রাত থানার একটা ঘরের কোনে বসে আছি ,এই ঘরে আর একজনকে
দেখতে পাচ্ছি শুয়ে আছে।ঘরের মধ্যে মশা রাজত্ব করছে ,ভাবছি ছোট একটা প্রানী
কিভাবে মানুষের রাতের ঘুম হারাম করে দেয় ।শুয়ে থাকা লোকটা এখন উঠে বসলো আর
আমার দিকে তাকিয়ে বললো ভাইজান কি চুরি করেছেন ,এখনো আপনাকে জামাই আদর করেনি
,আমি কিছু না বলে লোকটাকে বললাম একটা সিগারেট হবে ......চলবে ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।