মা-খোকা
- আব্দুল্লাহ মোল্লা - কিশোর গল্প ১১-০৫-২০২৪

খোকা তোর বাড়ি ওপারে
যাবি আজ কেমন করে।
যেভাবে হচ্ছে জোয়ার
নাও দু-তীরে পাবিনে আর।
থেকে যা আজ এপারেতে
দেখা হবে সন্ধ্যা রাতে।
আজ ঐ গ্রাম্য মেলায়
জুড়বো সাথে প্রমোদ খেলায়।
সন্ধ্যার আগে যেতেই হবে
নয় মা'যে আমার কাঁদবে তবে।
জননী বৃদ্ধা পথের পানে চাহে
কখন খোকা তার ফিরবে গৃহে।
সঞ্চিত আছে কিছু খড়ি কাষ্ঠ ডাল
মাছের আশে ফেলেছি শতবার জাল।
মাথার উপর যখন সূর্য হাসে
মাছ আসে না শক্তি খসে।
মাছ নিয়ে সন্ধ্যার আগে
মা জাল দিয়ে চুলোর পাশে।
কপাল আজ গোলাপি ভাগ্য
থলে এখনো শুন্য স্বর্গ।
কোনোদিন যদি যায় এভাবে
দিন কাটে এই ভোগ স্বভাবে।
আছে গৃহে গুড় আর হুড়ুম
মা আমি খেয়ে নিঝুম এক ঘুম।
প্রত্যুষে যখন কুয়াশা জমে
চালের ফাকায় ঘরে নামে।
মাথায় শিতল আভা ফোটে
ঘুম তখনই যায়'যে হটে।
মাজন হাতে যাই পুকুর পাড়ে
কত ছেলের দেখি ব্যাগ ঘাড়ে।
আমারও অনেকে সাধ জাগে তাই
বই বুকেতে পাঠাশালে যাই।
জোয়ারে ভাসছে নদী
স্রোতে দুলছে বীচি।
জেলে ছাড়া নদীর কূলে
থাকে কী কেউ আটপ্রহরে?
রৌদ আর শীতল বাতাস
করে না আমাকে হতাশ।
বেলা গড়ে মধ্যদুপুর
জঙ্গল ঐ বাড়ির অদূর।
হাতে নিয়ে লম্বা কুড়াল
গাছ কাটি সেগুন শাল।
হবে যখন বিরাট বোঝাই
বেচবো প্রায় দুইশো টাকায়।
সন্ধ্যায় যাব সেগুন বেচতে
তৈল কিনব দীপ জালাতে।
চাল ডাল আর তৈল কিনতে
পারিনা পয়সা আর রাখতে।
এভাবেই চলে দু চারদিন
মা'বলে এটাই সুদিন।
সদাই শেষে ফিরলে বাড়ি
মা তখন বসায় চুলায় হাড়ি।
যখন হয়ে যায় মায়ের রান্না
খিদেয় আর সহ্য হয় না।
দৌড়ে আমি মুখ হাত ধুয়ে
ভাত বেড়ে মা সামনে নিয়ে।
নলা হাতে যখন দেয় আমার মুখে
তখন আমি যাই ওমনি রেগে।
মা'বলে থাক করেনা রাগ
মা খেলেই সব দুঃখ মিটে যাক?
আমার হাতে তোমায় খাইয়ে দিবো
খাওয়ার মাঝে নুন ছিটাবো।
হইছে খোকা এখন'নে খা
খাইয়ে দিতে আঁষ্টে লেগেছে সবটি রেখা।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে
শুয়ে পর বিছানা ঝেড়ে।
তুমি না থাকলে পাশে
ঘুম আমার কবে আসে?
হাতটি দাও রাখবো মাথা
শুনাবে এবার গল্পকথা।
চুমু খেয়ে আমার কপালে
একটা রাজার গল্প বলে।
ঐ রাজা নাকি আমি ছোট্ট ছেলে
মা হেসে দেয় চোখের জলে।
মায়ের এ হাসি নয় প্রথম দেখা
আমি না থাকলে মা হাসে একা।
মা আমি রাজা কবে হবো?
যেদিন আমি ঘুমিয়ে রবো।
তুমি থাকলে আমি সুখের রাজা
না থাকলে আমি পাব সাজা।
মা যখন চুপে গেলো
আমার রাত ও গভীর হলো।




২৪ মাঘ ১৪২৬, শুক্রবার।
বিকেল ৪ঃ১০
কুটুরিয়া, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।