আজ সেই দিন
- Md Shamim Pramanik (Nimu) - ছোট গল্প ০৯-০৫-২০২৪
আজ থেকে তিন বৎসর আগের কথা সেদিন ছিল দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেলের শেষের দিক৷ সময়টা ছিল আনুমানিক সাড়ে তিনটে কিংবা চারটে৷ আমার সামস্যাং গ্ল্যাক্সি মোবাইলের ব্যাটারিতে চার্জ ছিল মাত্র ত্রিশ পার্সেন্ট! মোবাইলটা পড়ে ছিল আমার বালিশের পাশই৷ হঠাৎ করে একটা রিংটোনের আওয়াজ বেজে উঠেছিল, আমি কাজ শেষ সেরে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, সবে মাত্র কাঁচা ঘুম আমার- চমকে উঠে মোবাইলটি হাতে নিয়ে কল বাটনে ক্লিক করে রিসিভ করেছিলাম৷
মোবাইলটা আমার বাম কানের পাশে নিয়ে প্রথমে সাধারণ ব্যক্তিদের মতই সালাম জানিয়েছিলাম, মোবাইলের ওপাশ থেকে মিষ্টি মুধুর সুরে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল_ তার মিষ্টি মুখের ভাষা গুলি শুনতে পেয়ে আমি ঘুমান্ত ভঙ্গিমায় তার জবাব গুলোও দিয়ে দিয়েছিলাম৷ সে ঐ সময় আমায় প্রশ্ন করেছিল- আমি কেমন আছি আরও ইত্যাদি অনেক কিছু৷ যেমনটা দীর্ঘদিন কাহারও সাথে যোগাযোগ না থাকলে হয় তেমন ধরনেরই সেই সব কথাবার্তার আলাপ আলোচনা৷
বহুদিন পর তার আমি সাথে কথা বলতে পেয়ে আমার মনের ভিতরটায় এক একটা কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল৷ কথা গুলো বলার দৈর্ঘ্যতা এমনটাই ছিল যেন_ মোবাইলের মিনিট গুলি বেড়েই চলছিল কিন্তু ফোনের লাইনটা কেটে দেওয়ার কথাটি মনে ছিল না৷ ওভাবই চলছিল অনেক কথা, বলতে বলতে হঠাৎ একটা সময় আমার মোবাইলের সম্পূর্ণ চার্জটাই শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং অমনি আমার মোবাইলটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ তখনকার সেই সময়ে আমার মনে হয়েছিল যেন
দেহের কোন একটি অঙ্গ অবশ হয়ে গিয়েছে!
আজ সারাদিন বৃষ্টি পড়ায় কারেন্টও ছিল না! সেই যে ভোর বেলায় কারেন্ট চলে গিয়েছে তার এতক্ষনেও কোন খবর নেই৷ আমি সেই সময় পুরো কথা গুলি শেষ না করতে পেরে ছটফটে মরছিলাম৷ ধৈর্য্যের সীমা লঙ্ঘন করিয়া পড়ে থাকা পুরোনো অন্য একটি সস্তা ওয়ালা নোকিয়া মোবাইলে সিমকার্ডটি তুলেছিলাম, মোবাইলটা ওপেন করেই সেটা থেকে ডাইরেক্ট ফোন করেছিলাম৷
তার কাছে ফোনটা দিয়েই সর্বপ্রথমে সরি বাক্যটি জানিয়েছিলাম৷ এবং এও বলেছিলাম যে আমার মোবাইলটার চার্জ ছিল না তাই ফোনের লাইনটি কেটে গিয়েছিল৷ আবারও শুরু হয়েছিল ভাল মন্দের বিভিন্ন ধরনের রোমান্টিক কথাবার্তা৷ সেই সব রোমান্টিক কথা গুলির মাঝখানে একটু অন্য টাইপের বাক্য বলার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি৷ মিষ্টি একটা হাসির আওয়াজ কানে এসে ধাক্কা লেগেছিল আমাি, ঠিক ঐ সময়ই আমি তাকে বলেছিলাম_
"আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি, আর এটা অন্য কোন সম্পর্কের উৎস ধরেও নয়৷"
এই বাক্যটি শোনার পরপরই আমাদের দু'জনার রোমান্টিক টাইপের কথা গুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এরপর মোবাইলে লাইনে থাকা অবস্থায় আমরা দু'জনই অনেকক্ষণ চুপ করে থেকেছিলাম৷ দু'জনার মুখ থেকে আর একটি কথাও বের হলো না, আমি কী বলবো- সে কী বলবে- তাহা একটি বাক্য শুনেই চলমান কথার ধারা গুলি থেমে গিয়েছিল৷ দু'জনার আরও অনেক কিছু বলার বাকি ছিল কিন্তু থমকে গিয়েছিলাম৷
আমরা দু'জনই অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার একটু পরই আবারও আস্তে ধিরে কথা বলা শুরু হয়ে গিয়েছিল, এবং সে আমায় বলল_
"আর কী বলবেন?"
আমি একটু ভীতু হয়ে বলেছিলাম_
"তবে কি আমার বলার সেই উত্তরটি পাওয়া আর হবে না?"
একটু গম্ভীর ভাবে সে বলল_
"হুম পাবেন- তবে এখন নয়;
সে ব্যাপারে ভেবে আগে দেখবো তারপর না হয় বলে দেব!"
এ কথাটি বলেই দু'জনার মধ্যে বিদায় নেবার বাক্যটি জানিয়ে মোবাইলের লাইনটা কেটে দেওয়া হয়েছিল৷
ঐদিন রাত্রে আমার একটুও ঘুম হয়নি৷
আমি মনেমনে ভেবেছিলাম- হয়তোবা ঐ কথাটি তাকে না বলাই ভাল ছিল! আবারও ভাবতাম- মনেহয়- কথাটি বলে মারাত্মক ভুলই করেছিলাম!
আবার নিজে নিজে এও বিরবির করতে থাকতাম_
"ভালবাসা তো কোন ভুল নয়! ভালবাসা তো কোন বিবেক বিবেচনা করেও আসে না৷ তবে কি আমি ভাববো এটা ভুল করছি! ভাবতে থাকতাম- নাহ কখনই ভুল করিনি৷ আর যদিও তাকে আমি যে কথাটি বলেছিলাম তা তো আমার প্রকৃত মনের কথাটিই ছিল! আমি যাহা বলেছিলাম তার মাঝে তো আমার বিন্দু পরিমাণ খাতও ছিল না!"
বিভিন্ন আরও অনেক উদ্ভূত উদ্ভূত বাক্য ভেবে ভেবে এই খোলা হৃদয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন জেগে তুলেছিল৷
রাত যতটা গভীর হতে চলেছিল ততটাই যেন বিষণ্ণতার এক একটা তীব্র নিঃশ্বাস নিতে হয়েছিল৷ সময়টা তখন আনুমানিক রাত্রি দু'টো হবে, আমার হৃদয়ের ধৈর্যটা একদম থেমে থাকতে পাচ্ছিল না, ছোট্ট একটা কথার জবাবের আশায় মোবাইলটা হাতে নিয়ে সারারাত জেগে জেগে চেয়েছিলাম মোবাইলের স্ক্রিনটার উপরের দিকে, আর সারাক্ষণ শুধু কল্পনায় ভেবেছিলাম এই বুঝি এখুনি তার জবাবটা পেয়ে যাব!
সত্যিই তাই হয়েছিল, আমার সেই বাক্যটির জবাব তার কাছ থেকে ক্ষণই পেয়েছিলাম৷
তার পাঠানো এসএমএসটিতে লেখা ছিল ওঁর জীবনে ঘটে যাওয়া অতীত কিছু কাহিনী৷ এসএমএসটি মোটামুটি অনেক বড়ই ছিল, শেষের লাইন গুলো পড়তে গিয়ে আমি আমার দু'টি চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল ফেলেছিলাম৷ ধৈর্যটিকে তখন আর মানাতে পারছিলাম না, তখনই ভাবলাম ওঁকে একটা ফোন দেই এবং তাই আমি দিয়েও ছিলাম৷
ফোন দিয়ে ওঁকে বললাম_
"তোমার পাঠানো সমস্ত কথা গুলি আমি মেনে নিলাম, তবে তোমার নিকট আমারও একটা অনুরোধ আছে- যাহা আমার জন্য তোমাকে কিছুটা সময় বা কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷"
ওঁর মুখের জবাবটিও এমনিই ছিল_
"তুমি যাহা বলবে আমি তাই করবো কিন্তু দ্বিতীয়বার তুমিও আমায় ভুল বুঝে অতীত জীবনে ছুঁড়ে ফেলে দিও না প্লিজ! নইলে আমার মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা থাকবে না৷"
সে দিনের ওঁর কথা গুলো আমি খুব শান্ত মনেই শুনেছিলাম, সেই সাথে আমিও প্রতিজ্ঞা করেছিলাম জীবনে যত বড় ঝড়ই আসুক না কেন সেই ঝড়ে তোমার মাথার ছাতাটি হয়েই সব সময় পাশে থাকবো৷
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আজ আর সে প্রতিজ্ঞাটা তার মাঝই ছিল না!
তার সেই প্রতিজ্ঞা করা কথাটি আজ নীল আকাশের কালো মেঘের ভাজে শূন্যে উড়ছে!
ভাবতে অনেক অবাক লাগে! এখনকার কিছু নারীদের মিষ্টি মিষ্টি সামান্য মুখের কিছু কথায় অনেক পুরুষেরই হৃদয়টা নিমেষই মোমের মত গলিয়ে পড়ছে! তেমনি আমিও তার ঐ সব আবেগী কথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম কোন একটি স্বপ্নের খেলাঘরে৷
আজ ফিরে এসেছে এই সেই মাস এই সেই দিন ও তারিখ, অপূর্ণতায় ফিরে এলো তিনটি বছর৷ মিলন আর হলো না দুটি আবেগী মনের দুটি জীবন৷ ব্যর্থ কথা গুলির ধরণ আজ উঁচ উঁচু পাহাড় পর্বতে চড়ে বসে আছে, ধরতে গিয়েও ধরা যায় না৷
বিধাতা আসলেই বড় একজন খেলোয়াড়! উনি খেলতে খুব ভাল পারেন, সব খেলায় বাজিও ধরতে জানেন, শেষে বিজয় হয় তারই, আর সবাইকে খুব সহজে পরাজয়ও করে থাকেন!
আজ আমি কোথায় পড়ে আছি সে এখন কই পড়ে আছে সেই খোঁজটিরও কোন অনুভূতি নেই দু'জনার মাঝে!
কিছু কিছু স্মৃতি আজও স্বরণ করিয়ে দেয় যে এই পৃথিবীর নির্মম অগ্নি হাওয়ার কতটা গতিসীমা কতটা দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ!
হয়ত আমি সুখে আছি, হয়ত সেও সুখে আছে- এমনটাই বুঝি এখনও ভাবনা হয় দুজনার মাঝে! নিয়তির এটাই বুঝি বাস্তবতা!
_____________
মন্তব্যসমূহ
এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।