একটি নারী এবং কয়েক প্যাকেট সিগারেট
- Md Shamim Pramanik (Nimu) - ছোট গল্প ১০-০৫-২০২৪

হাসপাতালের বেডে যে ছেলেটি আজ শুয়ে আছে সে আর কেউ নয় বরং এই হাসপাতালেরই ভালো একজন সিনিয়ার নার্স রেহানা ম্যাডাম তাঁরই আদরের ছোট ভাই ইমন৷ পরিবারে তাঁরা চারজন, বাবা মা ও ওঁরা ভাই বোন৷ সংসারটা যেমন ছোট তেমনি অনেক অভাব অনটনের মধ্যেও চলছে তাঁদের জীবন সংসার৷

বাবা ছোট্ট একটা ব্যবসা করতেন৷ অনেক কষ্টের উপার্জিত অর্থ খরচে দুই ভাই বোনের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ গুলি চালিয়ে থাকেন৷ বাবার বড় স্বপ্ন ও আশা ছিল ওঁদের ইচ্ছা সাধনা পূর্ণ করা৷ যখন মেয়ে ক্লাস ফাইভে আর ছেলে ক্লাস ওয়ানে পড়েছিলে- ঐদিন বাবা ঠিকই দুজনকে আদর করে ডেকে বলেছিলেন-

"বল তো মা রেহানা_ তুমি লেখাপড়া শেষ করে কী হতে চাও? মেয়ে বাবার প্রশ্নের জবাবে বলে দিয়েছিল "বাবা আমি মেডিকেল পড়া শেষ করে অনেক বড় ডাক্তার্নী হতে চাই৷"
অনুরূপ বাবা একই কথা ছেলেকেও প্রশ্ন করেছিল_ বল তো ইমন তুমি কী হতে চাও?
"বাবা, আমিও আমার আপুর পাশে থেকে সেবক হতে চাই৷"

ওঁদের দুজনার কথাটি শুনে বাবা ঠিকই তাঁদের কারণটি বুঝতে পেয়েছিল যে আসলে ওঁরা দুজন কখনো আলাদা হতে চায় না, ওঁরা কেউ কাউকে ছেড়ে একা থাকতেও চায় না৷ আর বাবাও তাঁদের ইচ্ছে সাধনার বিষয় গুলিতে এমন কোন কিছুর অভাব না রেখে তিনিও জীবনের শেষ চেষ্টাটাই করে গিয়েছিলেন৷

অনেক দিন পর বাবার সেই চেষ্টার আজ অবসানের সময় ঘটতে চলেছে, তার কিছুটা প্রমাণ শুধু দেখতে পেয়েছিলেন মেয়েটির জীবনে৷ রেহেনা আজ মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেছে৷ এই সংবাদটা বাবা মা দুজনই শুনতে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছেন৷ কিছুদিন পর মেয়ে ভাবতে লাগল_ যেভাবেই হোক আমাকে অন্য আর একটি মেডিকেল কোর্স কম্পিলিট করতে হবে নইলে বাবার আত্মশ্রম চেষ্টার কষ্টটি দিন দিন বেড়েই যেতে পারে৷

রেহানা আরও দুই বছর তেমনি অন্য একটি কোর্স কম্পিলিট করে নিয়েছিল৷ আর সে জন্যই আজ এমুনি একটা বড় হাসপাতালে সে ম্যাডাম রেহানায় নামে পরিচিত হতে পেরেছে৷ যাই হোক এবার তাঁর ছোট্ট ভাই ইমনের কিছু কথায় একটু চলে আসা যাক_
এমনি অভাব অনটনের জীবন ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন সময়ের মাঝে বাবা মা ও বড় বোনটির আদর পেয়ে ভাইটি আজ দৈনিক কী কর্ম করছে, কোথায় তাঁর জীবনের সময় গুলো অতিবাহিত করছে সে খবর খেয়ালটিও তাঁরা ঠিকমত নিতে ভুলে গিয়েছিল৷

এছাড়া পরিবারের সবাই তো জানতো_ "ইমন" এমন কোন বাজে বা অভদ্র ছেলেও ছিল না, সে বরং সবার তুলনায় অনেক শান্তশিষ্ট ও নম্র ভদ্র৷ সত্যি সত্যিই যেন তাই ইমনও অন্য কোন ধরনের বকাটে ছেলেদের মতোও ছিল না৷ ইমন স্কুল এবং কলেজে সবার চেয়ে ভালো একজন ব্রেলিয়ান ছাত্র ছিল৷ স্কুল ও কলেজের প্রতিটা ক্লাসের ফ্রেণ্ড এবং শিক্ষকেরা ইমনের এমন এমন কিছু সুন্দর ধ্যান মস্তিকের মেধা দেখতে পেয়ে তাঁরা তাঁদের আন্তরিক মুগ্ধতার বিষয় গুলিও বিভিন্ন ধরনের সৎ প্রসংশার সুভাস ছড়িয়ে দিয়ে থাকতো সবার অগচরে৷ ইমনের এই ভদ্রতার সঙ্গে পাশাপাশি জরিয়ে থাকতো সকল বন্ধু বান্ধব৷ ইমন এখন এই কলেজেরই অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে অধ্যয়নরত৷

কলেজের প্রায়ই বন্ধু বান্ধবেরা তাঁর পড়ালেখার শুনাম ও তাঁর সুন্দর চেহারাটি দেখে এক পর্যায়ে অনেকে হিংসায় অভিমানী হয়ে থাকতো৷ ইমন তাঁদের সেই অভিমানের বিষয় গুলিকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে সবই মুছে ফেলে বলতো_
"তোঁরা সবাই আয় তো আজকে তোঁদের একটা গল্প শোনাবো!"
এভাবই ইমন তার কলেজে সবার সাথে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছিল৷

হঠাৎ একদিন সেই কলেজেরই অতি সাধারণ একটি ফুটফুটে নারী ওঁর সামনে এসে বলেছিল_

"কেমন আছো ইমন?"
তাঁর প্রশ্নের উত্তরে ইমন জবাব দিয়েছিল_

"ভালো, কিন্তু তুমি কে বল তো? তোমাকে তো এই কলেজে এর আগে কখনো দেখিনি?"

আসলে ইমনের এই কথাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিটা হলো যে_ ইমন আজও কোন নারীর প্রতি ভুল করেও কাহারো চেহারার উপর
তাঁর চোখের সুন্দর দৃষ্টিটি কুদৃষ্টিক্ষেপ করেনি আর সেটাই সব সময় গোপনীয় তাঁর চরিত্র স্বভাবে ও ধ্যান মগ্নে থেকেছিল৷ কিন্তু কেহ কেহ এগুলি অবিশ্বাস্য বলে বিবেচনা করে থাকতো, আবার কেউ কেউ বিশ্বাসও করে নিয়েছিল৷

মেয়েটি বলল_

"আমাকে আবার চিনতে পাচ্ছ না? আমি হলাম ঝুমুর, এই কলেজেই তো আমরা সবাই এক সঙ্গে অনেকদিন পড়লাম? আর তুমি কিনা এখনও আমায় চিনতে পাচ্ছ না? নাকি আমাকে চিনেও না চেনার ভান করছো? বিষয়টা কী শুনি?"

ইমন ঝুমুরের কথা শুনে একটু লজ্জাবোধ করেছিল এবং বলল_

"বিষয়টা মানে? সত্যি সত্যিই বলছি আমি তোমাকে একদম চিনিই না এবং তোমার নামটিও যে ঝুমুর সেটিও আগে কখনো জানতাম না! যাক পরিচয়টা পেয়ে ভালো লাগল হয়তোবা আমারই ঠিক মনে নেই, তো বল তুমি কেমন আছ?"

দুই তিনদিন এভাবই চলেছিল ওঁদের ভালমন্দ জানা শোনার বিভিন্ন কথাবার্তার মধ্য দিয়ে৷
হঠাৎ কোন একদিন ঝুমুর খুব সকালে কলেজের গেটের সামনে এসে ইমনের জন্য অপেক্ষা করছিল৷ সেদিন ইমন তাঁর বড় বোনের গিফট্ দেওয়া মটর সাইকেলটি নিয়ে কলেজের গেটে এসে পৌঁছেছিল ঠিক তখনই ঝুমুর তাঁর কোমল হাতের ইশারায় ইমনকে সেই গেটেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল৷

ঝুমুরের হাতে ছিল গোলাপি রঙের বড় একটি চিঠির খাম, চিঠিটা সে ইমনের হাতে দিয়ে বলেছিল_

"এটা তোমার জন্য লিখেছিলাম এবং আজকে আমি শুধু মাত্র কলেজে এসেছি তোমাকে এই চিঠিটা দেবার জন্যই৷ যাই হোক সময় করে তুমি আমার এই চিঠিটা পড়ে নিও এবং পড়ে ভালো লাগলে আগামীকাল ভালো মন্দ কিছু একটা এর জবাব আমায় জানিয়ে দিও, এরপরে না হয় কলেজে আসবো কিনা সেই দিনক্ষণটিও খুঁজে নেব!"

এ কথাটি বলেই ঝুমুর তাঁর কলেজের গেটের সামন থেকে বাসার উদ্দেশ্যে একটা রিকসায় চড়ে চলে গিয়েছিল৷
এদিকে ইমন ঝুমুরের লেখা চিঠিটা পেয়ে তাঁর পরনের শার্টের উপর পকেটে রেখে দিয়ে মটর সাইকেলটা আবারও স্ট্রাট করে কলেজের ভিতরে প্রবেশ করেছিল৷ সেদিন কোনরকম ভাবে ইমন কলেজটা সমাপ্ত করে বাড়ি ফিরেছিল৷ অনেক ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন সে বাড়িতে ফিরে এসে দেখতে পেয়েছিল বড় বোনটিও আজ হাসপাতাল থেকে খুব তাড়াতাড়ি ফিরেছে তখন চিঠির খামটি শার্টের পকেটের উপর থেকে বের করে বইয়ের ভাঁজে গুঁজিয়ে রেখে রুমে ঢুকে পড়েছিল৷

এরপর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে ওঁর রুমে এসে সেই গোলাপী রঙের চিঠিটির কথা তাঁর মনে পড়েছিল। বই থেকে চিঠির খামটি হাতে নিয়ে খামের একপাশটা ছিঁড়ে ভিতর থেকে চিঠিটি বের করে সে পড়তে শুরু করেছিল৷ চিঠিটার ভাষায় লেখা ছিল প্রেম বিষয়ের যত শত আর্তনাদের বিভিন্ন বাক্য৷ এমনি কিছু কিছু লেখার বাক্যে লেখা ছিল যে ইমন যদি তাঁর প্রেমের প্রস্তাবে না রাজি নাও হয় তবে ঝুমুর গোপনে আগামীকালের মধ্যেই নিজেকে সুইসাইট করে নেবে এবং এ ব্যাপারে ঝুমুর অন্য কাউকে কিছু বলতে যাবেও না!

ইমন অনেক চিন্তা ভাবনার পর চিঠিটিতে লিখে দেওয়া ঝুমুরের সেই ফোন নাম্বারটায় একবার ফোন করেছিল, ঘরের বারান্দায় গিয়ে অনেকক্ষন ঝুমুরকে ফোনে বোঝাতে লাগল কিন্তু ঝুমুরের ঐ শেষে একটাই কথা ছিল যে_ ইমনকে না পেলে সে সুইসাইট করবে! ইমন এই প্রথমবারের জন্য ঝুমুরের নিকট হেরে গিয়েছিল তাঁর অন্ধ প্রেমের কারণে৷ এভাবেই শুরু হয়েছিল ওঁদের দুজনার প্রেম কাহিনী৷

ধিরেধিরে তাঁর সমস্ত কলেজের বন্ধু বান্ধবীরাও জানতে পেয়েছিল যে ইমন ঝুমুরকে অনেক বেশি ভালোবাসে৷ কয়েক বছর পর হঠাৎ একদিন ঝুমুর ইমনের সামনে এসে বলেছিল_

"ইমন শোনো- বাবা আমার জন্য অন্য খানে একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছেন!"

ঝুমুরের একথাটি শুনে ইমন বলল_

"বিয়ে মানে? তোমার বাবাকে কী আমাদের এ বিষয়ে তুমি কী কিছুই বলনি"

ঝুমুর ইমনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটির জবাবে বলল_

"আমি আর কি বলব- বাবা মায়ের এই সব আদেশ কী অমান্য করা যায় বল? তাছাড়া যদিও তোমার সাথে আমি বিয়েটা করেও ফেলতাম সেটা তো আর তোমার বাবা মাও মেনে নিবেন না বরং তোমার উপর তাঁরাও রেগে গিয়ে কিছু একটা করতে পারেন? পরে ভবিষ্যতে কি হবে বল? তাছাড়া এ সম্পর্কে তোমারও তো অনেক সময়ের ব্যাপার আছে তাই কিনা?"

ইমন ঝুমুরের এই সব প্রশ্ন গুলির উত্তর দেবার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিল না, শুধু বিরহ বেদনা ভরা একটি ভাষায় সেও ঝুমুরকে বলে দিয়েছিল_
"আচ্ছা ঠিক আছে- এতে তো অন্ততঃ তুমি সুখে থাকতে পারবে! তবে যাহাই কিছু করিও একটু ভেবে চিন্তে করিও, আর যেখানেই থাক- যে ভাবেই থাক- ভালো থাকার চেষ্টাটুকুও করিও, বিদায়৷"

ঝুমুরও পাষাণী খোলা মনে নির্বাক বলে দিয়েছিল_

"ঠিক আছে তুমিও ভালো থেকো"

সেদিন ইমন চোখের জল মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরে এসেছিল_ বাড়ির কাউকে সে বুঝতে দেয়নি যে সে আজ তাঁর জীবনের প্রিয় জিনিসটা ত্যাগ করে এসেছে৷ তাঁর বুকে শুধু এখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল! নিভানোর ব্যক্তিটি কেউ ছিল না তাঁর৷

দিনের পর রাত খাওয়া দাওয়া নেই, পড়ালেখা নেই, ঘুম এসব কিছুই তাঁর ভালো লাগছিল না৷ প্রতিটা মুহুর্ত্য যেন সে নিস্তব্ধতায় থাকতো শুধু ঝুমুরের স্মৃতি গুলিকে অনুভব করে করে৷ কোন কিছুতে তাঁর ভাঙা মনকে সান্ত্বনা দিতে পারে না৷ এভাবে বেশ কিছুদিন ভীষণ কষ্টে কাটায়, এক পর্যায়ে একদিন সকালে সে ধিরেধিরে পা ফেলে রাস্তার ওপাশে একটি দোকানে চলে গিয়েছিল৷ সেখানে গিয়ে সে দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিয়েছিল! এরপর ইমন সেই সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটার পর একটা সিগারেট বের করে মনের সুখে জ্বালিয়ে দুঠোঁটে পান করছিল৷ এ ভাবই তাঁর চলেছিল দিনের পর সপ্তাহ, মাসের পর বছর! সত্যি সত্যিই কাহারও জীবনে বেশির ভাগ সিগারেটের নেশাটা একটা নারীর জন্যই এসে যায়৷ ইমনের কখনো কখনো দিনে চার পাঁচ প্যাকেট সিগারেটেরও বেশি লেগেছিল!

অন্য কিছু খাওয়া দাওয়ার চিন্তাভাবনা গুলো সে মন থেকে ভুলে গিয়েছিল সব সময়ের জন্য! বছর খানিক পরে একদিন ইমন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ সে সময়টিতেও ইমন তাঁর পরিবারের কাউকে সামান্য একটুও বুঝতে দেয়নি যে সে খুব অসুস্থ! আজ সকালে বড় বোন ইমনকে দেখেছিল রাস্তার ধারে একা বসে বসে কি যেন ভাবছিল, ওঁর কাছে গিয়ে বড় বোন রেহানা ইমনকে বলল_
"সারাদিন কই থাকিস রে? আর চেহারার এ কি হাল করে রেখেছিস তুই? আগামীকাল আমার চেম্বারে অবশ্য অবশ্য আসবি বললাম কিন্তু- ঠিক আছে৷"

ইমন তাঁর বোনকে মিথ্যেই বলে দিয়েছিল_
" ঠিক আছে যাব৷"

অথচ ইমন তাঁর বোনের হাসপাতালে পরদিন আর যায়নি৷ সে ওই শরীর নিয়েই পরদিন তাঁর কলেজে গিয়েছিল৷ মটর সাইকেলটা চালাতেও তাঁর আর ভালো লাগে না, আজ সে পায়ে হেঁটে কলেজে গিয়েছিল, অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে৷ সেদিন কলেজ কক্ষে ঢুকতেই ইমন কোন একটি সিট ব্রেঞ্চের উপরে খুব তাড়াতাড়ি চিৎ হয়ে শুয়ে পড়েছিল! হঠাৎ তাঁর বুকের বাম পাশটা কেমন জানি বিষ কাটার মতন হানছিল৷ অসহ্যে বুকটা তাঁর পুড়ে যাচ্ছিল, পাশে বসে থাকা কলেজের বন্ধু গুলি তাঁর এই অবস্থা দেখতে পেয়ে ওঁরা কয়েকজন মিলে ওঁকে ধরাধরি করে নিয়ে গিয়েছিল ইমনের বড় বোন যেখানে চাকরি করেন সেই হাসপাতালে৷

বড় বোন রেহানা ইমনের এমনি ভয়ানক পরিস্থিতি দেখতে পেয়ে নিজের ওড়নায় চোখের জল মুছছিল আর ভাঙা ভাঙা ভাষায় বকছিল ইমনকে৷ ইমনের শরীরের অবস্থা তেমন ভালো নয় সেটা লক্ষ্য করে ওঁকে আগে হাসপাতালের আইসিইউ এর বেডে শুয়ে দিয়েছিল! বড় বোনের সাথে অনেক সিনিয়র ডাক্তারেরাও ছিলেন তাঁর পাশে৷ ডাক্তারেরা প্রায় দুই ঘন্টার সমস্ত চেষ্টার শেষ পর্যায়ে এসে সবাই ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিলেন৷

পরে ডাক্তারেরা ইমনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হলো না তাঁদের৷ এদিকে বড় বোন ইমনের মৃত শরীর দেখে ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন৷ ইমন অসুস্থ হয়েছে জেনে এই খবরটা শুনে ছুটে এসেছিলেন ইমনের বৃদ্ধ বাবা ও বৃদ্ধা মা৷ ইমন তাঁদেরকে দু'চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই দিতে পেল না! পেল না বড় বোনের পাশে থেকে সেবক হিসাবে কাজ করার সেই কর্মটিও! এরপর ইমনের মৃত লাশটি তাঁরা হাসপাতালের একটি এম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন৷ ইমনকে আবারও শুয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁরই রুমের সেই শয়ন বিছানাতে!

অন্য দিকে ঝুমুর ইমনের মৃত্যুর খবরটি শুনতে পেয়ে সেও ছুটে এসেছিল ইমনের বাড়িতে, ঝুমুর এসে দেখতে পেয়েছিল ইমনের করুণ মৃত দেহটি৷ ইমনের বিছানার পাশে পড়ে থাকা টেবিলের উপরে হুট করে ঝুমুরের চোখটি পড়েছিল, সেখানে ঝুমুর দেখতে পেয়েছিল কালো কাভারের পুরনো একটি ডায়েরি, সেই ডায়েরিটা সে চুপিচুপি তাঁর ওড়নার আড়ালে লুকিয়ে নিয়েছিল৷

ঝুমুর কয়েক মুঠো মাটি ইমনের কবরের উপর উৎস্বর্গ করে দিয়ে শেষে সে চোখের ভরা জল নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছিল! ঝুমুর বাসায় ফিরে এসে তাঁর স্বামীর নিকট আদেশ নিয়ে ইমনের সেই লেখিত ডায়েরিটা পড়তে শুরু করেছিল৷ ঝুমুর ডায়েরিটা পড়ে জানতে পেরেছিল যে ইমনের মৃত্যুর রহস্যে লুকিয়ে ছিল সে নিজই৷ ডায়েরিটা পড়ার সময় ঝুমুরের স্বামী তাঁর পাশই বসা ছিল৷ পড়ার সময় যখন ঝুমুরের চোখ থেকে ফোটায় ফোটায় জল পড়েছিল তখন ঝুমুরের স্বামী ঝুমুরকে রেগে গিয়ে বলেছিল_
"তুমি কী সেই নারী- যে কিনা একটি সুন্দর ছেলের জীবনটা নিমেষেই ধ্বংস করে দিয়েছিলে?"

(এই প্রসঙ্গে আমিও কিছু কিছু নারী ও ছেলেদের উদ্দশ্যে বলছি_
এ সমাজের আর কোনদিন যেন কোন নারী এমনি ঝুমুরের মতো না হয়, এবং সেই ইমনের মতো যেন আর কোন ছেলেকেও কয়েক প্যাকেট সিগারেট পান করে মরতে না হয়! সিগারেট থেকে বিরত থাকুন এবং সুস্থ শরীরে সঠিক পথে চলুন৷)
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ৷
_______________
গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক৷

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।