হৃদয়ের রক্তরস
- এ কে সরকার শাওন - আলো-ছায়া ১০-০৫-২০২৪
খসে পড়া যুগল তারাদ্বয়ের
চির বিরহ-ব্যাথার গাথা!
ওহে বন্ধু, শুনবে তো তোমরা?
বুকের পাথর চাপা কথা!
সমতটের সোনার ছেলে
তিতাস পাড়ে যার বাস!
ডিঙি বায় গান গায়,
অবুঝ মনটি চির উদাস!
গভীর রাতের শেষ প্রহরে
তার ঘুৃম কে নিয়েছে কেড়ে!
নিত্য যে ডাকে স্বপ্নে তাকে,
সেই স্বপনচারিনী কে রে?
ঘন কোমল সবুজ ঘাসে
একাকী শুয়ে নির্জনে ;
আকাশপানে চেয়ে চেয়ে
খোঁজে জীবনের মানে!
বিশাল আকাশে একটি তারা
বহুদূরের বায়ুকোনে!
মিটিমিটি হাতছানিতে বলে,
"এসো বরেন্দ্রের কুঞ্জবনে!"
ঝিরঝির হিমেল বাতাসে
রাত্রি শেষের আলো-ছায়ার সনে,
সে-ই দিয়ে গেল সোহাগী প্রলেপ,
পরদেশী আকাশের তনু-মনে!
তার পর কত শত বছর
খুঁজে খুঁজে হয়রান পরদেশী!
শাহ মখদুমের চত্বরে পরিশেষে
কর্ণে বাজিলো সেই হাসি!
এই জনপদের কুঞ্জবনে
তারাকন্যার সজনী নামে বাস!
হৃদি নিগড়িয়ে সে-ই করেছিল
সমতটী পরদেশীর সর্বনাশ!
দমকা হাওয়ায় দীঘল এলোচুল
যখন মেঘের মত উড়ে!
আছড়ে পড়ে পরদেশীর মুখে
মন নিয়ে যায় কেড়ে!
তরঙ্গের মত তরঙ্গিয়া চলে
হাসিতে বিদ্যুতের ঝলকানি!
নিত্য বাঁচে নিত্য মরে
পরদেশীর পরান খানি!
অভিমানী সজনী নির্ভুল,
পরদেশীও ঠিক বিলকুল!
তাদের সৃজিত প্রেমের ফুলে,
ব্যাত্যয় ছিল না একচুল!
ওদের তনু-মন চনমনে,
মাঝ দরিয়ায় উত্তাল তরী!
ভাবাবেগে ওরা ভেসেছে,
চারপাশে দুরাত্বা দৈত্যপুরী!
বৈরী হাওয়ায় কালো ছায়ায়,
অধরে হাসি চির অধরা!
দৃষ্টি স্থির, মুখাবয়ব গম্ভীর,
আষ্ট্রেপৃষ্ঠে কষ্টে মনমরা!
কালে ভদ্রে অভিসার,
তাও সুদূরের চিৎকার!
কখনো কদাচিৎ মুখোমুখি,
তথাপিও নিশ্চুপ নির্বিকার!
সন্মুখ বাক্যালাপে সে ভয়ার্ত,
কি জানি কি হয় শন্কায়!
পরদেশীর মাথা ঘুরপাক খায়
আলাপে সে না ধুলায় লুটায়!
থাক, আলাপে কাজ নেই,
সে থাকুক ভাল তাঁর মত!
পরদেশীর কায়োমনে
নিরব প্রার্থনা চিরায়ত!
কখনো মনে রং ধরিলে
খুঁজে নিত আর্শীর তলদল!
নীলটিপে নীজেকে সাজাতো
শ্যামল মসৃণ ললাটের তল!
নীলা যবে নীল টিপ,
তাঁর কপালে পরে!
পরদেশীর প্রাণপাখি
খোশ মেজাজে উড়ে!
নীল টিপের নীল কন্যার
নীলাচল হাওয়ায় উড়ে!
ডাগর চোখের মায়াজালে
পরদেশীর প্রাণটি মরে মরে!
চারপাশ নিরিখে সবার অলখে
বারেক তাকাতো আড়চোখে;
চোখ নয় মায়াময় শতদল
বিধাতা গড়েছেন অতি শখে!
চার চোখ মিলন কালে
বিজলীতে চমকাতো ধরাতল!
ভুমিকম্পে প্রকম্পিত হতো,
পরদেশীর বুকের অতল!
দু্'জনার কল্পিত অনুভূব,
স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে!
সেল ফোনে, বদনবই চ্যাটে,
সে শুধু দুঃখের হাসি হাসে!
দেখা নাই কথা নাই বাড়ন্ত
নিরব প্রেমের ফল্গুধারা!
মনের টান চির অফুরান,
দু'জনেই চরম পাগলপারা!
উড়ছিল বেশ পথ অশেষ,
অনন্ত প্রেম নিরুদ্দেশ!
সহসা ঝড়ে মুখ থুবড়ে
ভূতলে দু'জনে দু-দেশ!
সেই থেকে দেখা নাই
বিচ্ছিন্ন দু'জনার দু'জন!
তব ক্ষীণ আশা চলে
ট্যালিপ্যাথি চলে সর্বক্ষণ!
যমের মত প্রতীক্ষার প্রহর
অশেষ মহাকালের মত!
সেই শীতে যে আঁধার নামিলো
আলো হয়ে আর ফিরিলো না-তো!
কত রোদেলা সকাল
মাটি হলো সে এলে না বলে!
পূর্ণ শশী অতলে হারালো
কাঁজল ধোয়া জলে!
অন্তরে অমর প্রেমের
আবেশ চলে অন্তহীন!
জ্বলে পুড়ে নিত্য মরে
দুই প্রান্তে দুই অর্বাচীন!
টুপ টুপ করে নিত্য ঝরে,
বিরহী প্রিয়ার অঁখিজল!
চৈত্র মাসেও কুল ছাপিয়ে
বরেন্দ্রের জলাঙ্গী টলমল!
পরদেশীর মনের আগুনে
সব চৌচির জ্বাজ্জল্যমান!
সমতটে বারিধারা নিস্ফল,
দরিয়ায়ও জলের টান!
কত শত বছর হলো গত!
তবু আশাতুর চোখ উদাসীন!
হৃদয় মাঝে নিত্য বাজে
সানাইয়ের সুর অমলিন!
বর্ষপঞ্জীর ৬ষ্ঠের দশমে সে
এসেছিল শ্যামল পৃথিবীতে!
রাতের আকাশ কেঁপেছিল,
সেদিন তারার ঝলকানিতে!
শুভ দিনে সজনীর প্রতি
হৃদয় নিংড়ানো রক্তরস!
মহীর মেরু-মরু সবখানে
ছড়াক তাঁর সুখ্যাতি যশ!
শাওনাজ, ঢাকা!
১০ জুন ২০২০
মন্তব্যসমূহ
এখানে এপর্যন্ত 2টি মন্তব্য এসেছে।
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।