অরুন্ধতী
- কাফাশ মুনহামাননা - শেষবেলা ২৬-০৪-২০২৪

অরুন্ধতী!
শ্যামল গাঁয়ের কালো বর্ণের একটা মেয়ে।
রোদের আঁচলে জড়িয়ে থাকে সারাদিন
দু'মুঠো বেচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে।
মারবেলের মতো চোখ দুটোয় তার
স্বপ্ন দেখার কোন জড়তা নেই।

প্রতিদিন ভোরে
ঊষা দিদির আগে অরুন্ধতী
জেগে ওঠে জীবনের অবুঝ নেশায়।
খালি পেটে ছুটে যায় গাঁয়ের শেষপ্রান্তে।
চরের জমিগুলোতে হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরে
তাজা তাজা শামুক আর ঝিনুক।
পাশ দিয়ে বয়ে চলে ছোট খেয়া নদী।
উদাসী ভাবনার অতলে হারিয়ে অরুন্ধতী
মাঝেমাঝে চেয়ে থাকে নদীর গতিপথে।
তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না সে উদাসীনতা।
পচা শামুকে চোখ পরতেই নিমগ্নতা ফিরে পায় সে।

রিযিক আহরণের পর অরুন্ধতীর
সেগুলো নিয়ে ছুটতে হয় আরো
পাঁচ মাইল পথ হাট-বাজারের উদ্দেশে।
বন-বাঁদাড়ের ভেতর দিয়ে যাবার সময়
কথা হয় নানান রকম ফুল-পাখিদের সাথে।
গাছ-গাছালির ঝোপে ঢুঁ মেরে
সকাল-দুপুরের খাবার হিসেবে বেছে নেয় সে
বন্য কাঠবাদাম আর আধোপাকা গাবফল।
অরুন্ধতীকে দেখে কেন জানি
আমার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে।

অরুন্ধতী'র চাওয়া-পাওয়া বেশি না।
দুবেলা পেট ভরে খেতে পাওয়া আর
ঘরের উঠোনে ছি কুতকুতের আসর জমানো।
চার বছরের মেয়েটির কাছে ইশকুল ঘরের অর্থ -
যেখানে শামুক-ঝিনুক সাঁতার কাটে, তাই কি?
গোধূলি মিশ্রিত পড়ন্ত বিকেলে
সত্তর টাকার রোজগার সমেত
ঘরে ফিরে আসে অরুন্ধতী।
জলের ছিটায় মলিন মুখটা ধুয়ে
একগাল হাসি ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতির বুকে।
অরুন্ধতীর হাসিটা কিন্তু ভুবন ভোলানো।
অতঃপর দু'চারটে ডালভাত গিলে
ফের নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখে অরুন্ধতী।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।