আমার তিমিরবিদারী পদাবলী
- মুহম্মদ কবীর সরকার(Mahdi Kaabir) ২৭-০৪-২০২৪

আমার তিমিরবিদারী পদাবলী
- মুহম্মদ কবীর সরকার
অতঃপর, অতঃপর নীরবতা  সাঙ্গ করে
ঘুটঘুটে তমসার রোধ, অবরোধ পশ্চাতে ফেলে
যে আমার চিত্তপটে নৃত্য তুলে
সে আমার কবিতা।
সে আমার তিমির বিদারী কবিতা।
যে আমার বসন্তকুমারীর সঙ্গে সঙ্গ দেয়
যে আমার হৃদ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে,
বসন্তকুমারীর রূপের বর্ননা রচে
বলে দেয় তাঁর সবুজ কেশের খোঁপোয়
গাথা লাল,নীল,হলুদ আরো কতো,
আরো কত রঙ্গ বেরঙ্গের ফুলে কথা
বলে দেয় তার চঞ্চল মনের চঞ্চলতা
সে আমার কবিতা।
সে আমার বসন্তকুমারীর কবিতা।
আবার কখনো আমার কবিতায় ডানা গজায়
হয়ে যায় শঙ্খচিল , লক্ষ্মীপেঁচা  হয়তো বা গানের পাখি।
ঢুকে যায় রবীন্দ্রসংগীতে বা জীবনান্দের রূপসি বাংলায়
হয়তো বা মিশে যায় জয়নুলের  রংতুলিতে
হয়ে যায় মনোহারিণী তছবির ।
জয় করে এই বিশ্বকে।
তখন,তখন আমি একটু মুচকি হাসি
তখন আমি আমার কবিতাকে
গভীরভাবে জড়িয়ে ধরি, ললাটে চুমু আঁকি
আর একটু বেশি ভালবাসি।
অতঃপর,অতঃপর আমি বাংলার ধূলাবালিতে হাটি
হাটি চিকচিকে চুরাবালিতে
আমার কবিতা নৃত্য তুলে কৃষক শমিকের বাহুতে
পাল তুলে তিতাস প্রবাহিনীর ময়ূরপক্ষীতে।
আমার কবিতা থাকে সদা এই বাংলার
কৃষাণ কৃষাণীর বিষাদ হর্ষে ।
হয়ে থাকে আপন সখা গ্রীষ্ম শীত বর্ষে ।
অতঃপর, অতঃপর একদিন
দুঃখিত, একদিন নয়, বহুদিন
বহুদিন ধরে, বহু অব্দ ধরে,বহু যুগ ধরে
আমি এই বাংলার ধূলাবালি বক্ষ ঠেসে
পিষ্ঠ ঘেসে, কপোলে লেপেছি।
এই বাংলা তার শীতলবক্ষ জড়িয়ে ধরে
আমার ললাটে চুমু এঁকেছে।
আমার অশান্ত মন শান্ত করেছে
শুনিয়েছে ঘুমপারানির গান।
সেই গান তথা শব্দগুচ্ছ এক এক করে গুছিয়েছি
আমি আমার কবিতা রচিয়েছি
সে পূর্ব-পচ্চিম তথা সমগ্র বাংলার কবিতা।
সে আমার কবিতা।
অথচ আমি তো দেখিনি,
আমার কবিতা চলার পথে,
ছন্দের নৃত্যে কোনো ভুলতো খোঁজে পাইনি।
তবে কেন আমার কবিতা বাজেয়াপ্ত হবে
নিষিদ্ধ হবে শিক্ষিত সমাজে ।
জানো এই কবিতা রচিতে কতো শব্দ,
কতো দাড়ি,কমা ব্যয় হয়েছে
কতো গুলো পৃষ্ঠা গচ্ছা গেছে।
আর কতকাল ধরে কলম হাতে লড়েছি
হ্যাঁ হ্যাঁ যোদ্ধ করেছি।।
এক শ্রাবণ রাতে যখন এক সুবাসিনী
তার খুলা কেশের সুবাস ছড়িয়ে,
সুস্মিতাময়ী হাসি হেসে,
পায়ের নূপুরের নৃত্যে আমার পাশে এসেছিল।
জানি, সেথায় তুমি থাকলে ও একখানা কবিতার চরণ লিখতে,,,
হয়তোবা প্রিয় কবিতা আবৃত্তি করতে।
যে তোমার নিভৃত ভাব প্রকাশ করে তাই কবিতা।
হ্যাঁ হ্যাঁ তাই কবিতা।
অথচ আমার কবিতা বাজেয়াপ্ত করে,
এক দন'ত ভাঙা কবিতা আবৃত্তি করতে আমায় বলে
যার প্রতিটি শব্দগুচ্ছ আমার অজানা,
যার প্রতিটি স্বর আমার অচেনা।
যার থেকে আমি কোনো কাব্যরস খুঁজে পাইনা।
অথচ, অথচ আমি জানতাম
যে আমার মনের আবেগ প্রকাশ করে, তাই কবিতা।
আমি জানতাম,,,
যার ছন্দে নৃত্য আছে,চলচিত্তের অমৃত আছে
আছে আকাশে মিলিবার ডানা
যার প্রতিটি শব্দগুচ্ছ আমার চিরচেনা
আমি জানতাম,
যাকে পারা যায় স্বাধীনভাবে আবৃতি করতে
যার দ্বারা পারা যায় প্রিয়ার মন ভরতে
যেথায় থাকে, কবির মনের সপ্তবর্ণের প্রজাপতির পাখা,
যার প্রতিটি চরণ ইচ্ছেনদীর মতো আঁকাবাঁকা।
সে-ই কবিতা
হ্যাঁ হ্যাঁ তাই কবিতা।
আমি জানতাম
যে অবিরাম ওষ্ঠে জিভে আন্দোলিত হয়
কোমলতালু কন্ঠনালিতে নৃত্যতুলে
বাতাসের চিত্তে দুলে
তা-ই কবিতা।
তাই দন্ত ভাঙা  কবিতা, কবিতা হতে পারে না
হয়তো অন্যকিছু হতে পারে
হতে পারে তমসার ভেরী
হতে পারে বেশি বাড়াবাড়ি।
যার অশরীরিণী প্রাণে থাকতে পারেনা মেদুর চন্দ্রিমা
থাকতে পারে না প্রেমের অনুভূতি
যার অশরীরী প্রাণে থাকতে পারে না মায়ের ভালবাসা
দিদির আদুর, ছোটখাট  ঝগড়া।
তাইতো আমি,আমরা তথা সহস্র মাতৃপ্রিয় বীরাত্মা
কলম হাতে লড়েছি
হ্যাঁ হ্যাঁ যুদ্ধ করেছি,
রচিয়েছি আমার প্রিয় কবিতা,
সে পূর্বপচ্চিম সমগ্র বাংলার কবিতা।
সে আমার কবিতা।
১৪/০২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।