বিদ্রোহী
- মকিজুর রহমান - ঝরা ফুলের কাব্য ২৬-০৪-২০২৪

আমি অজানা রুদ্রের ধ্বংসের ধূলি-
বিবর্ণ দিনের দৃষ্টিহারা প্রাণের জঞ্জালকণা
উন্মুক্ত মৃত্যুর ভাসমান মৃত্যুঞ্জয় অনন্তপ্রস্থান পুনরালিঙ্গন।
মুক্ত কণ্ঠে বাজে আমার বীণা,কদম্বকুঞ্জে
ঝংকারি;
বজ্রাঘাতে প্রাণের উর্বশীর হৃদয় মৌনতা।

আমি অসীমে আকর্ষণ জ্যোতিষ্কের গতি-
একমাত্র সত্তার প্রেমের নিবেদনে এক প্রাণ
মরীচিকা।
অস্তগামী বলাকার তড়িৎ চুম্বন
যুগল স্বর্গের যাযাবর বিহঙ্গ!
গগনের সমাপ্ত মিলনোতসব চিরচঞ্চল গতি
সাগরে পুনরাবৃত্ত রন্ধ্রে মৃত মাধুরীর কণা।

আমি আদিম উচ্ছ্বাস বাঁশির বর্বর কান্না
যৌবন মগ্নতরী ভ্রাম্যমাণ ধ্রুবতারা,
প্রলয়ের হুংকার প্লাবিত অবিশ্রান্ত
অবিরল বক্রধারা।

আমি মরুভূমি সিকতাসাগর ধ্বংসের দায়ভাগ-
লোকোত্তরে নিষ্ঠুরতম দ্বৈরথরণে অক্ষয় স্মৃতি
গোধূলিবেলায় বিভিষিকা ক্ষয়-জঞ্জাল
দ্যুলোকে-ভূলোকে মরমহিমা মিলনে অমৃতযোগ।

আমি জনশক্তির প্রতিবিপ্লবী বিশ্রুত তরবারি-
মহামৈত্রীর অহিংস বিবেক দ্বিধা আহ্লাদ
অবরোহ শাস্তিতে অধুনা গৌরব।

আমি নিয়ত আবির্ভূত অমৃত সঞ্চয়নে আলিঙ্গন-
অশনিসিদ্ধ ভূমিকম্প বজ্র শিখার উল্লম্ফ
গিরিশৃঙ্গের সূর্যোদয়ে নিয়তির গূঢ় অভিশাপ!
বিচরণ করি একমাত্র গ্রহ, নক্ষত্রের ঘুণাক্ষরে;
বিশ্বপিতার সার্থক মর্মবাণীর আশীর্বাদে
আবির্ভূত পুরাণপুরুষ।

আমি অসীমের ডাকে আলোকমঞ্চের দিশারী প্রদীপ-
লীলানিকেতন সব্যসাচী সৌম পুরুষ
অনাচারে অতিরঞ্জিত প্রতিপত্তির ধ্বংস
প্রভুভক্ত মানবধর্মের মোহিনীর প্রতিপত্তির ভক্ত।

আমি মরণের অপরাস্ত ভুক্তভোগী-
ঊর্ধ্বলোকে পুনরায় প্রতিষ্ঠ একনিষ্ঠা
ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলি বিরূপ বিশ্বে
জীবন প্রত্যয়ে মানুষ নিয়ত একা।

আমি সৃষ্টার প্রতিনিধি,আমি মানুষ
আমি বিদ্রোহী!
আমি মহাবিশ্বের বুকে অজানা ধূলিকণা।

আমি নিষিক্ত স্তব্ধতার ভেদি,উন্মাদনা পদধ্বনি
অমল আকাশে পুঞ্জিত সুধাসংকেত
প্রলয়ের যুগের যত চাওয়া একবেণী হিয়া
বাতাসে প্রতিধ্বনি ধৈর্যের ধূসরিমা।

আমি বিদ্রোহী বিচিত্র মঙ্গলিক দ্যুত
দুরাশায় ক্ষণিক প্রেম স্থান চপল পরিচয়
জীবনের নিষ্ঠুর বিষন্ন বলাকা!
পাতালমুখী পৃথিবীর মম প্রাণ বিনিময়
নক্ষত্র নুপূরের ধ্বনি অজস্র ঐশ্বর্য
কোষাগারে স্বার্থপর।

আমি মহাশুন্যের ভাসমান ফেনা-
নির্বাণ চিরদিনকার বিভীষিকার উদ্ঘাটি;
বিচ্ছেদ বিধ্বস্ত বিস্তারিল অকিঞ্চন অন্ধকার
দিনান্তের প্রজ্বলিত বিধাতার রুক্ষ দীপ্ত।

আমি নিরাকার শূন্যের মৃন্ময় মূর্তির
অজানা ধূলার আবর্তন-
আত্মধিক্কারের বিরঞ্জন মনোজ্ঞার জরাজীর্ণ মাহেন্দ্রক্ষণ।

আমি অরুন্তুদ নিঃসংশয়ে ধূমাঙ্কিত স্বাক্ষরিত রসায়ন-
বক্রতা-বিহীন প্রতিহিংসা নিয়ন্ত্রিত প্রগতির মায়া
পশ্চাতে ধ্বংসের রুদ্ধ আঁখি বিজয়তোরণ।

আমি চলন্ত স্বপণপ্রয়াণ শবযাত্রা জয়গান
বিপ্রলব্ধ-
নিশ্চিন্ত স্বর্গের মনোবাসনার ছবি!
ধূমকেতু দীপ্র পরজীবী অর্ণবপোত অবরুদ্ধ,
সপ্তম আকাশে সিদ্ধির মরণের তুঙ্গের
অভিসন্ধি।

আমি হিরণ্ময়ের বিশৃঙ্খল প্রবঞ্চিত মানুষের কোষ্ঠীপত্র-
নির্বিকার প্রকৃতির অনিবার্য স্বায়ত্তশাসন
তুষারিত বাতায়নে বিস্মরণের গুঞ্জনে অন্তর্যামী!
প্রাগিতিহাসিক গহ্বরকারাগারে মার্জিত জনপদ।

আমি নির্মম মহাকাশ অনন্ত নোনা জল-
শ্রমণশোভন ধ্বংসের দায়ভাগে আংশীদার
ভ্রান্তিবিলাস আশা-নিরাশার বঞ্চনা!
সঞ্চিত স্মৃতির মধুমালতীর দিব্য বেণু
নবপ্রণয়ীর নিগূঢ় বেদনার নিগম অর্থ।

আমি উর্বশী চিরযৌবনা কাঁটার আঘাত-
সর্বহারার স্বার্থপরের ক্ষয়-জঞ্জাল স্বপ্নসুষমা!
অসাধ্য সাধনে সিদ্ধ পুরুষ
বিজুলিঝলাসম;
রুদ্র বিরহেরে পরিণামে অতনু পরাজিত।

আমি যথারীতি পরিপাটী সমাজতন্ত্র
জনশক্তির-
পাপ পুণ্যের দক্ষিণা মুক্তির ক্ষমা সম্ভাবনা
বিশ্বমানবের বিচারে পাতকা অবরোহী যুদ্ধ সৈনিক
অমৃত সঞ্চয়নে বিধাতার ভয়ঙ্কর দিন।

আমি অপ্রতিষ্ঠ যৌবরাজ্য হিরণ্ময় অতিশয় বাষ্প-
ক্ষণস্থায়ী জীবনের অভিসারে প্রথম প্রাণের সঞ্চিত খেদ!
দ্বিধাটলমল সংসারের সমাধিমগ্ন বিবাগী স্বপ্নচারী।

আমি অসীম সিন্ধুর বুকে বিবাগী জাহাজ-
যথারীতি মোহনার প্রতিপত্তি!
দূরবর্তী দুর্গের শিবিরের নাসিকাগর্জন
সূচ্যগ্রপ্রমাণ সাংঘাতিক রক্তগঙ্গায় আহত প্রহরী।

আমি কবর ধূলার সমতল বুকের স্বর্গচারী-
সম্প্রতি নবনুরাগের পাপস্পর্শে নষ্ট
পুঞ্জিভূত শোক;
মহাশূন্যের বেষ্টনীবিরহিত অঞ্জলি উজ্জীবনের প্রেরণা;
সময়ের স্রোতে যথেচ্ছ পরমাণু!
আমি সৃষ্টার প্রতিনিধি, অামি মানুষ
আমি বিদ্রোহী,আমি ক্লান্ত এক বিরহী যায়ারব।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।