ছয় ঋতুর দেশ (প্রবন্ধ)
- আসাদউজ্জামান খান ২৬-০৪-২০২৪

ছয় ঋতুর দেশ
আসাদউজ্জামান খান
================
আমাদের বাংলাদেশ সকল দেশের সেরা।এ দেশে রয়েছে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া,মানুষের বসবাসের জন্য মনোরম পরিবেশ।এ দেশকে বলা হয়- ছয় ঋতুর দেশ।বারোমাসে ছয় ঋতু।দুটি মাস নিয়ে একটি ঋতু হয়।আর এক এক ঋতু এক এক রকমের রূপ ছড়ায়।

বৈশাখ মাসের বৈশাখী ঝড়
এলোমেলো করে;
জ্যৈষ্ঠ মাসের ফল সুবাসে
জিভটা শুধু নড়ে!
বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠমাস নিয়ে গ্রীষ্ম ঋতু।এ দুইটি মাসের মধ্য বৈশাখ,বাংলা বছরের প্রথম মাস।বাংলার পুরাণো ঐতিয্যকে কেন্দ্রকরে,পুরানকে ভুলে নতুনকে বরণ করে।গ্রীষ্ম ঋতুতে দিন বড় আর রাত ছোট হয়,এ ঋতুতে আবহাওয়া গরম থাকে,হঠাৎ করে বৈশাখী ঝড় হয়!আর জ্যৈষ্ঠমাসে অনেক মজার মজার ফল পাকে,নানান রকমের ফল পাওয়া যায়।গ্রীষ্মকাল ফলের ঋতু।আম,জাম,জামরুল,কাঁঠাল,আনারস,পেয়ারা,লিচু ,তরমুজ,আমড়া ইত্যাদি ফল এ ঋতুতেই জন্মে।গোলাপ,বকুল,বেলি,টগর,জবা ইত্যাদি ফুল এ সময়ে ফোটে।

আষাঢ় মাসে টাপুর-টুপুর
বৃষ্টি শুধু ঝরে;
শ্রাবণ মাসে খালে-বিলে
পানি থই-থই করে!
আষাঢ় ও শ্রাবণমাস নিয়ে বর্ষা ঋতু।বর্ষাঋতু মানেই বৃষ্টি!এ ঋতুতে বৃষ্টিপাত বেশি থাকে।নদী-নালা,খাল-বিল,পুকুর ইত্যাদি পানিতে ভরা থাকে।বর্ষায় লোকালয়ের আবর্জনা ধুয়েমুছে দেয় এবং দূষিত বায়ু বিশুদ্ধ করে।বর্ষাকালে কেয়া,কদম,কামিনী,জুঁই,গন্ধরাজ ইত্যাদি ফুলফোটে।পেয়ারা,আনারস,প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।এ সময় হাটে-বাজারে প্রচুর রূপালি ইলিশ মাছ পাওয়া যায়।বর্ষার শুরুতে কৃষকেরা সোনালি পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরে।

ভাদ্র মাসে কাশফুল ফোটে
খাল আর নদীর পাড়ে
আশ্বিন মাসে একটু করে
শীতের আভাস ছাড়ে।
ভাদ্র ও আশ্বিন মাস নিয়ে শরৎ ঋতু।শরৎকালকে ঋতুর রানী বলা হয়।শরতে ভোরবেলায় ঘাসের ডগায় শিশির জমে।শরতের শেষে রোদের তেজ আস্তে আস্তে কমতে থাকে।শরৎকালে বনে-উপবনে শিউলি, গোলাপ,বকুল,মল্লিকা,কামিনী,মাধবী ইত্যাদি ফুল ফোটে।বিলে-ঝিলে ফোটে শাপলা আর নদীর ধারে কাশফুল।এ সময় তাল গাছে তাল পাকে।হিন্দুদের দুর্গাপূজাও এ সময় অনুষ্ঠিত হয়।

কার্তিক মাসে সোনার ফসল
কৃষক তোলে ঘরে
অগ্রহায়ণ কৃষকেরা
নবান্নটা করে।
কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে হেমন্ত ঋতু।হেমন্তকাল হচ্ছে শরৎ ও শীতকালের মধ্যবর্তী একটি পরিবর্তনশীল পর্যায়।দিনের শেষে তাপমাত্রার কমার ফলে বিকেল থেকেই হিম পড়তে শুরু করে আর ঘাসের ওপর জমে শিশির;কুয়াশাও দেখা যায় প্রায়ই।সাধারণভাবে সর্দি,কাশি,জ্বর ইত্যাদি রোগ দেখা যায়।হেমন্তকালে মাঠে মাঠে থাকে সোনালি ধান।এ সময় চাষীরা ধান কেটে ঘরে তোলে এবং ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব শুরু হয়।

পৌষ মাসেতে হিমেল হাওয়ায়
শীতটা থাকে অতি
মাঘ মাসেতে শীতটা নিজেই
কমায় নিজের গতি।
পৌষ ও মাঘ মাস নিয়ে শীত ঋতু।এ দুই মাস শীতকাল হলেও বাস্তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের ঠান্ডা অনুভূত হয়।দেশের দক্ষিণাংশের তুলনায় উত্তরাংশে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে।শীতের রাত্রি হয় দীর্ঘ।শীতকাল বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও আরামদায়ক ঋতু।এ ঋতুতে গাছের পাতা ঝরতে থাকে।কোনো কোনো গাছ পাতাশূন্য হয়ে যায়।এ ঋতুতে শিশির পড়ে,সকালে ঘন কুয়াশায় পথঘাট ঢেকে যায়।প্রচুর শীতকালিন তরকারি দেখা যায়।যেমন:কপি,মুলা,বেগুন,পালংশাক, মটরশুটি ইত্যাদিতে হাট-বাজার পূর্ণ থাকে।কৈ,মাগুর,শিংসহ অন্যান্য মাছ এ সময় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।শীতে গাঁদা ও সূর্যমুখী ফুল ফোটে।কমলালেবু এ ঋতুরই ফল,বরই শীতের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ফল।শীতকালে খেজুর রস পাওয়া যায়।রস থেকে তৈরি হয় খেজুরের গুড়।ঘরে ঘরে ভাপা,চিতই,পাটিসাপটা,পুলি ইত্যাদি পিঠা তৈরি করা হয়।

ফাল্গুন মাসে কোকিল গায়ক
বার্তা নিয়ে আসে-
চৈত্র মাসে থাকবে গরম
গানকরে আর হাসে!
ফাল্গুন ও চৈত্র মাস নিয়ে বসন্ত ঋতু।শীতের পর বসন্তকাল বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রমণীয় শোভা বিস্তার করে।এ ঋতুতে বায়ু নানা দিক থেকে প্রবাহিত হয়,কোনো নির্দিষ্ট দিকে স্থির থাকে না।বসন্তের আবহাওয়া থাকে মনোরম,আকাশে কিছু কিছু মেঘ থাকলেও সার্বিক আবহাওয়া থাকে নির্মল।এ ঋতুতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বড়ই চমৎকার হয়ে ওঠে।তরুলতাসমূহ নতুন পত্রপুষ্পে সুশোভিত হয়।শিমুল,পলাশ ও কৃষ্ণচূড়া এ সময়েই ফোটে।বৃক্ষের আড়াল থেকে কোকিল সুমধুর কুহু স্বরে দিক-দিগন্ত মুখরিত করে তোলে।ভ্রমর মনের আনন্দে গুঞ্জন করতে করতে ফুল ও আম্র মঞ্জরীর মধু পানে মত্ত হয়।যব,গম,সরিষা ইত্যাদি শস্যে মাঠগুলি রমণীয় শোভা ধারণ করে।এ ঋতুতে হিন্দুদের বাসন্তী পূজা,দোলযাত্রা ইত্যাদি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ।এ সময়টি নাতিশীতোষ্ণ,তাই পরম সুখকর।

বাংলাদেশের বারোমাসে
ছয়টি ঋতু আসে
সবুজ-শ্যামল পরিবেশে
একটি বছর ভাসে।
দক্ষিণে সমুদ্র,উত্তরে হিমালয় পর্বত এবং বিশাল সমভূমির জন্য বাংলাদেশে শীত বা গ্রীষ্ম কোনোটিরই আধিক্য অনুভূত হয় না।

লেখা...১৪-১০-২০১৮
প্রকাশ... ০৫-১১-২০১৮ সাপ্তাহিক স্লোগান পত্রিকায়

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।