বীরাঙ্গনা কথা।
- তপন চন্দ্র রায় (Tapan Chandra Roy) - বিন্দু ২৬-০৪-২০২৪

১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১।
দেশ স্বাধীন হলো, চারিদিকে উড়ছে বিজয়ের নিশান। বিজয়ীর বেশে সকলেই ফিরলো ঘরে। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই পেল মুক্তিযোদ্ধার খেতাব, কেউবা পেল বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীক। আর আমার মা, তিনি পেলেন অপয়া, অলক্ষি আর কলঙ্কিত নাম, বীরাঙ্গনা।
মা ঘরে ফিরতে চাইলে দাদু বললো, তোমাকে তো ঘরে নিতে পারছি না মা। তুমি বরং তোমার মতো চলো, কোন কিছুর প্রয়োজন পরলে খবর দিও। পাঠাবো।
মামা বললো, তোমাকে বোন বলে পরিচয় দেবার মতোন সাহস আমার নেই। তুই ভাল থাকিস, আর একটা অনুরোধ, বাড়ীতে এসে আমাদের লজ্জা দিস না।
সকলেই যার যার মতো পেল ঘর, পেল স্বাধীনতা। কিন্তু আমার মা, সে পেলনা তার স্বাধীনতার স্বীকৃতি, অমূল্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, নিক্ষিপ্ত হলো আস্তাকুড়ে।
জন্মের পর যখন বুঝতে শিখেছি, সবাই বলতো আমি নাকি যুদ্ধ শিশু ।তখন খুব জানতে ইচ্ছে হত যুদ্ধশিশু কি? মা বলতো, যারা যুদ্ধের সময় জন্মে তারাই যুদ্ধশিশু। মনে পরে, স্কুলে ভর্তির সময় যখন শিক্ষক বাবার নাম জিজ্ঞেস করেছিল? তখন বলার মতো কিছুই ছিলনা আমার, মাথা নত করা ছাড়া। মাও ছিল নির্বাক।
১৬ই ডিসেম্বর এলে চারিদিকে চলে বিজয়ের উৎসব, মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া হয় রাস্ট্রীয় সম্মান। আর আমার মায়ের চোখে অঝোড় ধারায় ঝরে অশ্রু । স্বাধীনতার পর মা শুধু স্বাধীনতাকেই খুঁজতো । আর আমরা খুঁজতাম আমাদের অস্তিত্বকে। জীবনের সবচেয়ে দামী সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে নির্যাতিতা মায়েরা পেলেন কলঙ্ক, অথচ মিললো না কোন রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি। ৭১ এ নির্যাতিত মাকে রাস্ট্রীয় ভাবে শুধু বলা হলো বীরাঙ্গনা ।

যে দেশের জন্মটা রক্তাক্ত, কষ্টে ভরা সেদেশে নির্যাতিতা মায়েরা নয় মাসের ভয়ংকর নির্যাতন সহ্য করার পরও স্বাধীন দেশে কতটা সামাজিক প্রতিকূলতায় পড়তে পারেন, বলতে পারেন আপনারা? আপনাদের সমাজ ব্যবস্থা?

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর অবশেষে দেয়া হলো অমূল্য আত্মত্যাগের স্বীকৃতি। মা পেলেন মুক্তিযোদ্ধার খেতাব।
এখন গর্ব করে বুক ফুলিয়ে আমি বলতে শিখেছি, হা আমিই যুদ্ধশিশু, অমূল্য আত্মত্যাগী আমার জননী।
আজ আমি আমার মায়ের চোখে আগামীর সম্ভাবনা।
যত দিন দেহে আছে প্রাণ, মাগো
এ বাংলাদেশ তোমার।

লেখনীঃ 16/12/2018 রাত 12.00 টা।
18/12/18 বাংলাদেশ ব্যাংক বার্ষিক সাংষ্কৃতিক প্রতিযোগিতায় পুরষ্কৃত হয়।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।