হৃদয়ের গহিনে তুমি
- রুহুল আমীন রৌদ্র ২৬-০৪-২০২৪

পৌষের এক বিকেলে,
বেইলী রোড থেকে একগুচ্ছ তাজা গোলাপ এসেছিল,
বায়তুল মোকাররম থেকে এসেছিল তসবি আতর জায়নামাজ।
টানা দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর,
চায়ের কাপে শেষ চুমুক মেখে হান্নান বলল, 'দাদা এসেছো' ?
শেখের হাতের ঘুমন্ত গোলাপটি তখন মুচকি হেসে জেগে উঠল
দুরন্ত বালিকার মতো।
কবির জন্যে ছোট্ট এক উপহার,
রঙিন কাগজে মুড়িয়ে আনলো কবি শঙ্খঋন্দম।
এ যেন কবির জন্যে কবি।
খানিক খুনসুটি।
অতঃপর, খরস্রোতা নদীর বেগে ছুটে চলি আয়েশা ভিলায়।
ওয়েটিং রুমের কয়েজন অভ্যর্থনা জানিয়ে
পায়ে পায়ে সিঁড়ি গুণে তিনতলায় নিয়ে গেল।
ধুরু ধুরু বুকের পাঁজর, মৃদু শিহরণে কাঁপছে মাংসল পেশী,
কবি আল মাহমুদ বলে কথা!
এক বুক অচেনা স্বপ্ন যেন উড়ে চলেছে, ফেটে যাওয়া শিমুল তুলোর মতো।
হৃদয়ের প্রান্তে জমে থাকা আবেগগুলো যেন
শীতের শেষ রাতের শিশিরকণার মতো টুপটুপ করে ঝরছে।
কলিং বেল চেপে, বেলকোণীর গ্রিলধরে দাড়িয়ে আমরা।
এখানে ভয় নেই, এখানে আঁধার নেই, এখানে শীত নেই,
যেন দরজার ওপাশেই উজ্জ্বল সবিতা।


দরজাটি খুলল।
আবছা আলোয় চারিদিকে ঝুলন্ত ফটোগ্রাফ নীরব নিথর নিস্তব্ধ।
খুব দামি নয়, সাদামাটা সোফায় বসে আরও অপেক্ষা কিছু ক্ষণ।
একটা আলমারিতে একগুচ্ছ সনদ,স্বযতনে রাখা কিছু বই,
যেন মঙ্গলপৃষ্ঠের মতো লালচে আর শুষ্ক,
কতদিন হাত পড়ে নি।
কুমারী মেয়ের তেলহীন চুলের মতো এলোমেলো পড়ে আছে কবিতার খাতা,
টেবিলের কোণে অর্ধমৃত কলম,
কবির পরশ নেই।


শেষ পর্দাটা খুলে দেখি, টিপটিপ করে জ্বলছে সাহিত্যের নক্ষত্র।
তার ঠোঁটে নেই সোনালি কাবিন,
পায়ে নেই বখতিয়ারের ঘোড়ার তেজ,
চোখ দুটো যেন,
মেঘনা নদীর শান্ত মেয়ে তিতাসের মতো নীরব।
তাকে ছোঁয়ে দেখেছি কতটা কোমল হতে পারে একজন কবির হৃদয়,
কতটা উদার হতে পারে বুকের গহিন প্রান্তর।


মেঘের উপরে নীল আকাশটা কত বিশাল, কত বিশাল এ ব্রহ্মান্ড,
তার বুকের পাঁজর তলে দেখেছি তার চেয়েও সহস্রগুণ বিশালতা,
দেখেছি নীলকান্তমণি আর হীরে জহরতের নিঃসীম খনি,
ঝিনুকের মতো লুকিয়ে রাখা মুক্তোদানা।


আমাদের সমস্ত শ্রদ্ধা আর ভালবাসা অর্ঘ করে মেখে দিলাম তার চরণে।
কবি তুমি বেঁচে থাকো নদীর ভেতর নদী হয়ে,পাখির কাছে ফুলের কাছে,
এ বাংলার মেঠো পথে উদাসী বাউল হয়ে, হৃদয়ের গহিনে গহিনে।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

faizbd1
০১-০৪-২০১৯ ১৯:৪০ মিঃ

অপূর্ব*