মন পাখিটির কান্না
- Md Shamim Pramanik (Nimu) - ছোট গল্প ২৭-০৪-২০২৪

আজও এই রাত তিনটা৷ বিছানায় চোখ মেলে জেগে আছি৷ মনেমনে অনেক স্বপ্নের আনাগনা এলোমেলো কিসব যেন বিশ্লেষণ করছি৷
আলোবিহীন ঘরের এক কোণায় হঠাৎ জ্বলে ওঠার জোনাকি আমায় ডাক দিয়েছিল টিপটিপ দুষ্টমির মায়াজালে৷ ধরতে গিয়েছিলাম- ফুঁস করে জানালার ছিদ্র দিয়ে পালিয়ে গেল৷ বুঝে নিয়েছিলাম -হয়তোবা সে ছলনাময়ী করেই ডেকেছিল৷
ফির পিছু নিয়েছিলাম- ভেবেছি কোথায় আর পালাবে সে! বাহিরে বাহির হয়েছিলাম, হ্যা ঐ তো মিটমিট জ্বলে ওঠার আলোতে পাশের লাউ গাছের গোড়ায় আরও কয়টি জোনাকি মিলিত হয়ে টিপটিপ জ্বলছে আর পাগলা পাগলীর মত খেলা করছে৷
সবাই যেন কত সুন্দর হইচই খেলছিল- মাতাল সেই অত রাতে৷ কি আনন্দতেই না তারা খেলেছিল! তাদের সে খেলা দেখে নিজের মনে একটুখানি আফসোসের অনুভূতি স্পর্শ করেছিল৷ ওরা সব জোনাকিরা কিভাবে খেলছিল তাহা আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম! একটু পরেই হঠাৎ এক ঘেয়ে চোখের সামন থেকে ওরা সবাই অদৃশ্যে উধাও হয়ে গিয়েছিল৷ আফসোসের ঝুলান্ত হাড়িকে জিঙ্গেস্ করেছিলাম- কেন আমার জীবনের প্রতিটা সময় এরকমই কতকগুলি ছলনার আলো এসে হঠাৎ সুখের আলোকে দিয়ে নিভে যায়? প্রতিটা আঘাতের কষ্ট গুলি শুধুমাত্র আমাকেই বুঝিয়ে দেয় যে কতটা কষ্টই না ছিল! এখন তাহাও অবশিষ্ট নেই! কয়েকটা মিনিট আকাশটার দিকে তাকিয়ে থেকেছিলাম! এবং ভেবেছিলাম- হয়তোবা জোনাকিরা সবাই ঐ আকাশই চলে গেছে! অথচ সেখানেও খুঁজে দেখেছিলাম- ওখানেও তাদের পেলাম না! নিস্তব্ধ ঘোর অন্ধকারে কে যেন শো শো আওয়াজ তুলে বলেছিল- বাঁচাও বাঁচাও! আমি সেই শব্দ শুনে চমকে উঠেছিলাম- মনে করেছিলাম- হয়তোবা হতেও পারে আমারই সেই মন পাখিটি! নয়তো নয়, অথবা এটিও হতে পারে- কেহ আলো ছাড়া সেই ঘরে বসে বসে একা সঙ্গীবিহীন কাঁদছে! হয়তোবা তাও নয়! সে ঘরেও প্রবেশ করে কোণায় কোণায় খুঁজেছিলাম এবং অজানা নাম ধরে ডাকও দিয়েছিলাম- কোথাও কাউকে পেলাম না! এমন কি সেই ঘরের প্রতিটি কোণায় কোণায় কাহারও কোন সারা শব্দও ছিলনা৷ পরে ফিরে এসেছিলাম আবারও আমারই চাতক ঘরে- ঘরে ফিরে এসে বিছানায় বসতে না বসতেই আবারও সেই একই চিৎকার- বাঁচাও বাঁচাও! এবারও আমি খুঁজেছিলাম- তখনো কাউকে পেলাম না! অনুরূপ দ্বিতীয়বার সেই চিৎকার শুনিয়া তাহার খোঁজে বাহির আর হলাম না, বরং আমিও উল্টো চিৎকার করে বলে উঠেছিলাম- কে? কে এমন করে আমায় ডাকছ? এরপরেও কাহারো কোন জবাব পেলাম না! নিরাশ হয়েছিলাম সর্বত্র সেই রাতে৷ একটু পর আবারও শুনতে পেয়েছিলাম- আরও বিকট আওয়াজ! সেই আওয়াজ যেন বুকফাটা কান্নার মত- পুরো ঘরটায় টপটপ চোখের পানির শব্দের মত আওয়াজ গুলি বেড়েই চলছিল! তখনই অতীতকে মনে করেছিলাম- অনেকেই তো কোনো একদিন বলেছিল- কাঁদিলে নাকি মনের দুঃখ গুলি একটু হালকা হয়ে যায়? তাহাই ভেবে ভেবে- আমিও তাকে শান্ত গলায় বলে দিয়েছিলাম_ কাঁদো-কাঁদো- যত পার- এ রাতেই কাঁদো! তুমি আবার তোমার সেই মনে- ভেবে নিওনা যে_? তোমার কাঁন্নার পানিতে আমি ভিজতে চলে আসব?
_________________

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।