রোবটের চিঠি!
- মেহেদী হাসান সাকিব ২৬-০৪-২০২৪

প্রিয়তমা,
অলিখিত কিছু অনেকদিন ধরে তোমাকে লিখতে চাইতাম,কিন্তু বক্ষপিঞ্জরের লাল মাংসসপিন্ডটি কবে যে একটি লাল-কালো তারের সার্কিট হয়ে গেছে বেমালুম, তা ঠিক মনে করতে পারছি না,
সত্যি বলছি প্রিয়তমা,
অাজ আমি মানুষ নই রোবট।
একজন মানুষরূপি রোবট,
যে রোবটের কোন হৃদয় নেই, কোন বোধ নেই,বিবেক নেই,ভালবাসা নেই।
শুধুই কন্ট্রোল সিস্টেম সংরক্ষিত আছে কাজ আর কাজ।
নেই জীবনের কোন হিসেব!
তুমি জানো প্রিয়তমা রোবটেরা নাকি খুব দ্রুত গননা করতে পারে,কিন্তু তারা জীবনের হিসাব মেলাতে পারে না।
পারে না চাওয়া পাওয়ার অাকুতিতে কন্ঠ মেলাতে।
প্রিয়তমা রোবটের নিউরনগুলো ভিসুভিয়াসের নিশ্চুপ অাগ্নেয়গিরির মতো শুধু সারাক্ষন কন্ট্রোল সার্কিটের দিকে চেয়ে রয়,
একটা আদেশের জন্য কিন্তু সেখানে কখনোই অাগ্নেয়গিরির লাভা ছোটেনা।
যে মানুষের অন্দরে পাখির ডানা মেলে ছোটার কথা সে অন্দরে আজ শুধুই কৃত্রিমতা।

প্রিয়তমা তুমি জানো!
রোবটগুলোরও ইচ্ছে হয়, কিন্তু তারা কিছুই করতে পারে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তারা নীলাকাশকে শুধু নীলই দেখে না, তার বুকে একপশলা সাদা মেঘ আর এক জোড়া পাখিও কিন্তু তারা দেখতে পায়!
কিন্তু কি জানো!
এই সবকিছুই তাদের ক্ষনিকের,
পরক্ষনেই তাদের সবকিছুই ভূলে যেতে হয়।
সবকিছু!
তারা যে এক পশলা মেঘের বর্ষনে ভিজতে পারবে না কখনোই,
ওই লোহাগড়া দেহ, বৃষ্টির জল সহ্য করতে পারে না, মরিচা তাদের ঘিরে ধরে।
প্রিয়তমা অামি কিভাবে রোবট হলাম, জানবে?
বলছি শোনো!
তোমার সাথে যেদিন অামার শেষ দেখা হয়েছিল,
মনে অাছে?
মনে অাছে যেদিন তুমি আমার চিবুকে চিবুক ছুইয়ে কথা দিয়েছিলে,
অামার হৃদপিন্ডের হৃদস্পদনগুলো সেদিন সাক্ষী দিয়েছিলো,
কিন্তু সেই সাক্ষী যখন বর্নহীন নোনতা জলে আমার চিবুক ছুইয়েছিল,
সেদিন থেকেই রক্তমাংসের গড়া অস্থিগুলো ধীরে ধীরে লোহাগড়া হয়ে গেছো!
প্রিয়তমা তুমি জানো যে ডাম্পিং স্টেশনে পড়ে থাকা লোহাগড়া সেই অবয়বগুলোতেও বুনো ফুল ফুটে,সবুজ লতায় ছেয়ে যায়!
কিন্তু অামি আমি জানি না চিরসবুজ রক্তমাংসের গড়া দেহটি কেন আর সবুজ হয়ে উঠতে পারলো না।
তুমি অবাক হবে শুনলে, এই রোবট এখনও জ্যান্ত, শুধু তার এই শরীরে লাল রক্তের বদলে এখন শুধুই লঘু সালফিউরিক এসিডের চেম্বার।

প্রিয়তমা,মাই লাভ,
আরেকটা কথা বলি!
অবাক হবে না তো?
অবাক হলে দিবাস্বপ্নের ছলে মনে করো এটা একটা যন্ত্রমানবের রূপকথার গল্প।
তুমি জানো!
এই রোবটটি আজ মানুষ হয়ে উঠেছিলো, কে যেন কোথা থেকে নীল শাড়ি পড়ে তার সামনে এসে দাড়িয়েছিলো,কাচের চুড়ির শব্দে তার বক্ষপিঞ্জরের সার্কিট আবারো হৃদপিন্ডে পরিনত হয়েছিলো!
এখন মাঝে মাঝেই রোবটও মানুষ হতে চায়,
মানুষকে ভালবাসতে চায়!
কিন্তু কেন পারে না প্রিয়তমা?


মেহেদী
২৯.০৬.১৯
রাত ১২:০৭

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।