বঙ্গবন্ধুর ঋণ
- এ কে সরকার শাওন - আপন-ছায়া ২৬-০৪-২০২৪

চুয়াল্লিশ বছর আগে,
এমনি শ্রাবণের দিনে
ভোরের আকাশে যত কাল মেঘ ছিল
তারচেয়ে কুৎসিত কাল জঘন্য ছিল
হায়েনাদের ষড়যন্ত্রের জালটা!
আজো মনে পড়ে সেই
১৫ আগষ্টের সেই বিষাদময় সকালটা।
সুগন্ধার জলে সেদিন সুগন্ধ ছিল না,
কল কল করুণ অশ্রু ধারায়
বিষাদময় ছিল মনটা।

স্তম্ভিত শোকাহত দেশবাসীর সাথে
কিশোর আমিও
বন্দী ছিলাম আপন নিলয়ে!
১৪৪ ধারা জারি চরম বাড়াবাড়ি!
বাহিরে বের হলে দেখামাত্র গুলি
চারিদিকে ফিসফিসানি
ভয়ার্ত কন্ঠে কথা বলাবলি!
ভয়ে থর থর জানালাটা একটু ফাঁক করে
দৃষ্টি নিপতিত কাপড়িয়া পট্টির রাস্তায়;
নিরব নিস্তদ্ধ জনমানবহীন ঝালকাঠি ,
এমন বিজন বিরান ভূমি
দেখে নাই কেউ কোনদিন!

জলপাই রংয়ের জংলী গাড়ীর
সামনে পিছনে মারণাস্ত্র তাক করা!
মনে হচ্ছে সামনে পেলে এক ম্যাগজিন
গুলিতে বুকটাকে ঝাঝরা করে নিথর
করে দিবে বর্বর পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা!

মাঝে মাঝে তাদেরই ছোট্ট ঠোলার দল
মার্চ করে বুটের আওয়াজ তোলে,
টক টক টক শব্দে বুকে জাগে ভয়,
কখন ইচ্ছেমত ব্রাশ ফায়ার করে
কাজ করে দিবে সারা!

আজ বেশ আন্দাজ করতে পারি
সেদিন দেশের সকল খণ্ডিত চিত্র
সবখানেই এমনটা ছিল।
দেশটা গভীর নিমজ্জিত ছিল শঙ্কায়!
বলা না যায় সওয়া না যায়
দুঃখে বুকটা ফেটে যায়!
অস্ফুট বোবা চাপা কান্নায়!

আচমকা থাস, ঠাস, খটাশ
ঝড়ের মত বিদ্যুৎ বেগে মা এসে
দু'টি থাপ্পড় দিলেন কষে!
সম্বিত ফিরে পাই
প্রথমটি ঘাড়ে গর্দানে,
অতপরটি পৃষ্ঠদেশে শেষটি
জানালা আটকানোর তরে!
মা বলেছিলেন দাত কড়মড় করে
হতভাগা, লক্ষীছাড়া ওরে
এত বড় সাহস তোর হয় কি করে!
তোকে মেরে দিবে গুলি করে
দয়া-মায়া নেই সিপাইদের অন্তরে!
খবরদার! জানালায় যেন কারও
হাত না আর পড়ে!

আমরা আটটি প্রাণি বাবা মা ভাই বোন
একঘরে জড়সড় কোন টু শব্দ করিনি
মাঝে মাঝে শুধু টহল গাড়ীর শব্দ!
আজো কানে ভাসে
সেই ভয়ঙ্কর টহল গাড়ীর প্রতিধ্বনি!

প্রাণপ্রিয় নেতার অপ্রত্যাশিত
নিঃষ্ঠুর মৃত্যুর খবরে
বাবা প্রায় বাকরুদ্ধ হতভম্ব।
উদভ্রান্তের মত বিড়বিড় করে
বলছিল, "পাকিস্তানী মিলিটারিরা
যা করতে সাহস পায়নি;
তা করেছে বেইমান বাঙালী!
জাতির জনককে হত্যা করতে
তোদের কি বুকটা একটুও কাঁপেনি!
মোস্তাক হবে বড় মীরজাফর
তা কেউ কখনও ভাবেনি!

শতকোটি বছর প্রতীক্ষার পরও
এ ক্ষতি নয়কো পোষার কোনদিন!
বোধ ফিরলে কাঁদবে বাঙ্গালী,
ব্যাকুল হয়ে ঢুকরে কাঁদবে চিরদিন!
জীবন দিয়েও শোধ হবে না
বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম ও ভালবাসার ঋণ"!

শাওনাজ, উত্তরখান, ঢাকা
০১ আগষ্ট ২০১৯
https://www.muktocolumn.com/literature/show/4551

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।