এক কাপ ভালবাসার বিষ
- Md Shamim Pramanik (Nimu) ২৬-০৪-২০২৪

তুমি বললে-
এ সব নাকি আমার অনেক দিনের পুরনো অভদ্র নেশা,
দৈনিক সকালে এক কাপ চা পান করি বলে_
এতটুকুই তোমার কাছে আবদার ছিল৷

"এক কাপ চা হবে গো?"

চাইতেই তুমি ঘ্রাণেন্দ্রিয় কুচকিয়ে- ক্রমান্বয়ে আমার উপর ভীষণ বিগড়ে গিয়েছিলে!

কোনো কোনো দিন তুমি ইচ্ছে করেই গরম জলের সাথে ঠাণ্ডা জল মিশিয়ে এক কাপ অদ্ভুত ধরনের চা বানিয়ে দিয়েছিলে,
সংসার জীবনে তোমার প্রস্তরময় হৃদয়ের ভিতরে ওভাবই চলেছিল লাভ ক্ষতির হিসেব নিকাশ!

সারাদিন আমি কিছু খেয়েছিলাম কিনা,
তুমি এই প্রশ্নটিও কখনো কর নি!
করেছিলে?
না, কর নি!
কখনও কোন সময় ভুলে বলেছিলে কিনা সেও আমার মনে পড়ে না৷

অপর কোন একদিন, বেদনার বেলায়_
কতো আনন্দের সাথেই তুমি চা'য়ের কাপটি নিজ হাতে গিফট্ করেছিলে আমায়?
অনুরূপ কোনো কোনো দিন সকাল বেলা সেই কাপটি, আমার হাতে আজও ধরিয়ে দিয়ে যাও_
তবে কোনদিন আর দেখিতে পাইনি সেদিনের মতো তোমার মুখের ওই আনন্দময় হাসিটা৷
আজ সেই আনন্দময় মুখটিতে ভরে ছিল বিশ্রী কত অসহ্য রাগের ভাব!

কাপটির গায়ে দেখিছি শুধু কত কত অবহেলার বিশ্রী দাগ লেগে আছে!
প্রতিটি দাগের চিহ্ন দেখে আমি পরিষ্কার বুঝতে পেয়েছিলাম-
সেগুলি দাগের অংশে ছিল তোমারই যত শত রাগ, তত হাজার অভিমান, নোংরা জ্বালা আর কোটি বাজে যন্ত্রণা!

অথচ সে কারণেও আমি তোমাকে কোনদিন তুচ্ছতাচ্ছল্য ভেবে আমার ঘন রাগের ছায়ায় ঢেকে রাখিনি!
ঢেকে রেখেছিলাম, আমার কলিজার মধ্যস্থ তালাবন্ধি গোপন পিঞ্জরটায়৷

তুমি ঠাণ্ডা না গরম জল মিশিয়ে দিয়েছিলে,
সেও কোনদিন কোন সময় সন্দেহ করে কাপটির গায়ে আমার শুকনো ঠোঁটখানা স্পর্শ করাই নি!
শুধু অনুভব করেছিলাম, যেন কাপের গায়ে মিশে ছিল অসংখ্য সুখের স্বর্গ৷

নীরবে স্বপ্নের কল্পনায় কতো মনোরম ছোঁয়া পেয়েছিলাম,
কিযে সেই অথৈ হৃদয় হারানোর অতুলনীয় স্পর্শ তোমার, সেটিও তোমায় বুঝিয়ে বলতে পারবো না৷

তোমার একটি হাতে ছিল চা'য়ের কাপটি!
অপূর্ব মুখে ক্ষণই চলিতো মিছেমিছি অসহ্য তোমার যত্তসব অবাঞ্চনীয় কথার আলাপ!

ওই যে সেই ইজি চেয়ারটা!
বছরের পর বছর পার হয়ে গিয়েছে, এখনও ওভাবই ময়লা লেগে পড়ে আছে!
সেটাতেই হেলান দিয়ে বসে আমি অতীতের অগোছানো দিন গুলির সময় অতিবাহিত করেছিলাম৷

এক একটা অতীত স্মৃতির টুকরো গুলো আজ এখানে সেখানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে!
সাজানোর চেষ্টাটিও অনেকবার করেছিলাম, আজও পারিনি সাজাতে!

আজও প্রতিদিন সকাল বেলা তেমনি অপরিষ্কার চেয়ারটায় শরীরের পিঠটি লাগিয়ে উল্টো দিক হয়ে বসে থাকি৷
তোমার অভিমান পুষেই তুমি সেই চেয়ারটা আজও পরিষ্কার কর না!

বসে বসে তোমার পরনের সাদা শাড়ি, লাল প্যাডিকোট ও লাল ব্লাউজের ধরণ আমি কখনো দেখি না!
জানো! লুকিয়ে লুকিয়ে অপেক্ষায় থাকি শুধু তোমার অপূর্ব মলিন চেহারাটি দেখারই জন্য!
আজও সেই তোমার মলিন চেহারটি দেখবো বলেই- অপরিষ্কার এই চেয়ারটায় হেলান দিয়ে নিশ্চুপ কড়িডোরের গলিতে বসে আছি!

তোমার স্ব শরীরটা যক্ষুনি আমি আমার সামনে দেখতে পেয়েছিলাম-
যেন আমি তোমার শরীর থেকে বাজারের অবিক্রীত এক অন্যরকম পারফিউমের ঘ্রাণ পেয়েছিলাম৷
তুমি কখনো পারফিউম ব্যবহারও করতে না,
তুমি ব্যবহার করেছিলে কিনা সেও আমি তোমায় কোনদিন ব্যবহার করতে দেখি নি৷

এমনিতেই তুমি দেখতে কত সুন্দর,
সেই শরীরে আবার বাজারের পারফিউম?
যে শরীরটা আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি?
প্রশ্নই ওঠে না! প্রয়োজনই হয় না তার!

ঠোঁট দুটো তোমার অবিকল জবা ফুলের মতোই দেখতে,
সারা অঙ্গটা যেন রূপার মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলে থাকে,
পোষাকের অন্তে তোমার খুব প্রিয় পোষাকটি ছিল সাদা শাড়িটাই, তার সাথে লাল প্যাডিকোট এবং লাল ব্লাউজ!
কেমিক্যাল মিশ্রিত বাজারের পারফিউম গুলো তোমার নিকট ছিল ক্লান্ত পরাজিত৷

ওভাবে তুমি সামনে এলেই আমি যেন ভয়ে ভয়ে আমার সরল দৃষ্টিটুকু অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়েছিলাম৷
আমার অন্তরের চাহুনিটা কী চেয়েছিল,
আমার ভাব ভঙ্গিমাটা দেখেও তুমি অবুঝের মতো অভিনয় করেছিলে!
বিনিময়ে দুই চারটে আরও নতুন নতুন কিছু বাঁকা কথা শোনাতে এসেছিলে!

আমি নাকি ছিলাম, অতীতের অভদ্র কুঁড়ে!
অভদ্র মানেটা কী সেটিও আমি সঠিক বুঝতে পারি না!
তার উপর আবার বলেছিলে_ কুঁড়ে?
আজও নাকি সেরকমটাই আমি অভদ্র হয়ে আছি!

প্রতিদিন তোমার রাগান্ধ এলোমেলো ভাষা গুলির একটিরও আমি উত্তর করি নি,
শুধু শুনে শুনে সামনের কয়টি দাঁত বের করেই হেসেছিলাম!
এরপরেও কেন জানি বারবার অভদ্র নেশাটি টেনেছিল আমায়!
টেনে নিয়ে গিয়েছিল- স্মৃতি চিহ্নের ওই চা'য়ের কাপটির দিকে৷

এখনো নেশাটা ছাড়তে পারলাম না!
ছাড়তে পারবো কিনা সেও বুঝে ওঠে না!
শুধু ভাবি আর ভাবি- নেশাটা যদিও কোনরকম ভাবে ছেড়ে দিই, তবে কী আর পাব আমি_
তোমার সেই ভদ্র কথা গুলির সাথে সেই চা'য়ের অসাধারণ স্বাদের চুমুক গুলি?
পাব না!
সেটি ভেবেই আজও আমি অভদ্র কুঁড়ে অভ্যাসটা বদলাতে পারি নি৷

কী দারুণ সেই হাতের ছোঁয়া!
কত অসাধারণ ছিল তৃপ্তি!
শুধুৃ শুধু 'চা' মনে করে আমি সেটা পান করি নি?
এক একটা চা'য়ে চুমুক দিলেই যেন মনে করেছিলাম, নরক থেকে বুঝি আমি স্বর্গে বিশ্রাম করছি৷

কেন যেন মনে হচ্ছে আজও সেই সকাল বেলা ফিরে পেয়েছি,
সময়টা বোধহয় একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল?
সূর্যের কিরণটা জানালার পর্দাটি ভেদ করে আমার মুখের উপর এসে পড়েছিল,
তখনও আমি লেপ মুড়িয়ে শুয়েই ছিলাম৷

বুলবুলি পাখিটার মতোই তুমি সেজেগুজে সকাল বেলা আমার পাশে এসে চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছিলে!
মনে হয়েছিল হাজার বছরের অপেক্ষার স্বুর গুলিকে মিলিয়ে মিলিয়ে কতো মুগ্ধতার স্বুরে তুমি আমায় ধিরেধিরে ডাকছিলে?

আমি চোখ দুটো মেলাতে পাচ্ছিলাম না,
ঘুম আমায় বন্ধ চোখ দুটি খুলতেও দিচ্ছিল না!
তোমার নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শ পেয়েছিলাম, অমনি আমার ঘুমটি ভেঙে গিয়েছিল;
সামান্য একটু চোখের পলক মেলে দেখতে পেয়েছিলাম, তোমার কাঁপিত নরম ডান হাতে ছিল সেই চায়ের কাপটি!

বহুদিন পর তোমার হাতে কাপটি দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম,
মনেমনে অনেক কিছুর প্রশ্ন জেগে উঠেছিল!
ভাবছিলাম, আজ তো তোমার নিকট আমি চা'য়ের আবদারটিও করি নি! তবে কেন_?

যেন না চাইতেই তুমি দিতে এসেছিলে স্বর্গের জল?
হঠাৎ পাওয়া স্বর্গের জল, তবে কি এত সহজে ছাড়া যায়?

আবারও পুরনো দিনের ন্যায় বিছানা থেকে অনেক আনন্দেই উঠে পড়েছিলাম;
সেই একই তৃপ্তি,
একই সেই স্বর্গের সুভাস,
চায়ের কাপটি তোমার হাত থেকে আমি চট জলদি কেড়ে নিয়ে নির্ভাবনায় তা পান করেছিলাম!

কখন যে আমি কল্পনার সাগরে হারিয়ে গিয়েছিলাম_
গত হওয়া ভাবনা গুলো এবারও এসে ভর করেছিল, ওঁরা বলে কিনা জানো_?
"এতটাই কি তুমি ভালোবাসো আমায়?"
সম্পূর্ণ কাপের চা টুকু আমি চেটেপুটে পান করেছিলাম৷
তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলে_ আমি কত আনন্দে তাহা পান করছিলাম!

সেদিনও আমি তোমার প্রতি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম-
ধৈর্যের সীমানাটা ভেঙে গিয়েছিল,
তোমার নরম হাতটি ধরে আমি এক ঝটকায় আমার বুকের উপর টেনে নিয়েছিলাম;
সেদিনই বুঝি জীবনের বেঁচে থাকার বড় স্বাদ করেছিলাম, তোমাকে ওভাবে কাছে পেয়ে!

জবা ফুলের মতো তোমার সেই ঠোঁটে-
আমি বারবার চেষ্টা করেছিলাম আজ অন্ততঃ তোমায় একটি চুমো দেব!
কিন্তু, তোমার মুখটি অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়েছিলে!
আমি দেখতে পেয়েছিলাম তখনও তোমার চোখ থেকে ফোটায় ফোটায় ক্রমশ জল পড়ছিল৷

তোমায় মিষ্টি করে আমি বললাম_
"কাঁদছো কেন প্রিয়া?"
আমার মিষ্টি এ কথাটি শোনার পর তুমি আরও বেশিই কাঁদছো,
আজ আর তোমার মলিন মুখটিতে সেরকম কোন বাঁকা কথা গুলিও ফুটছে না!
কতটা নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে আছ তুমি!

তোমার রেশমি চুলের মস্তকটি আমার বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম,
আবারও ওই একই চেষ্টা করলাম_
"তোমার নরম ঠোঁটে আমি একটিবারের জন্য হলেও একটি মাত্র চুমো দেব;"

তক্ষুণি তুমি দেখেছিলে আমার ঠোঁটের কোণা দিয়ে_ লালের সাথে সাদা সাদা রক্তের ফেনা গুলো বয়ে পড়ছিল,
আমি আবারও তোমার নিকট হেরে গিয়েছিলাম_
তোমার নরম দুটি ঠোঁটে আমার শক্ত দুটি ঠোঁট চুমো দিতে পারল না!

বহুদিন পরে দেখতে পেয়েছিলাম_
তোমার চার চারটি নদীর পাড়ের মধ্যখান হতে দুটি নদীর স্রোতের তরঙ্গে সেই দুই দুইটি পাড় বেশামালে ভাঙছিল!
তুমি আধো ভাঙা মায়াবী কণ্ঠে আমায় বলছিলে_

"ওগো- তোমার চা'য়ের কাপটিতে আমি বিষ মিশিয়ে দিয়েছি!"

ততক্ষণে মৃত্যুর যন্ত্রণাটা উঁকি দিয়ে হাসিমুখে তোমায় বলছিল_

"কতটা ভালোবাসো তুমি, সে কথাটি জানতে পেয়ে বিদায়ের শেষ বেলায়_ আবারও আমি ধন্য হলাম!"

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।