সুমনা নামে যে মেয়েটির ঠোঁটের নীচে তিল ছিলো
- মাহমুদ রিয়াদ পলাশ - শেষ শ্রাবণের গল্প ২৬-০৪-২০২৪

সুমনার কথা তোর মনে আছে স্বপন?
ওর নিচ ঠোঁটে একটা তিল ছিলো,
কথা বললেই বর্ণালী পালানো
এক ফোঁটা কাজল রঙ
ধেয়ে আসতো আমাদের চার চোখে,
আমরা ততক্ষণে পুরো ভারত মহাসাগর সেচে
সেরা মুক্তোটি পেয়ে যেতাম।
আমাদের কাছে 'স্কিরপোফাগা ইন্সারটুলাস'
যখন রাজাকার পোকা হয়ে যেতো
আমরা ওদের তাড়া খেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য
হল থেকে পালিয়ে যেতাম,
ক্যাম্পাস ছুট শরণার্থীদের ভীড় লেগে যাবার আগেই
সুমনার সবুজ ব্যাগটা কে তুলে নেবে
তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা কি করিনি বল, অগোচরে?
অগুনতি ব্যর্থ প্রেমের কাতরতা ঝরানো
কালোজামের প্রৌঢ় গাছ গুলো
কি হাসিটাই না হাসতো আমাদের ঘিরে।

সুমনার কি হয়েছিলো
জানতে কি পারলি আজো?
আমার খুব মনে আছে, সেদিন সকালে
সারে সারে এসেছিলো, বিশ্ববেহায়া এক শাসকের
লাল পিঁপড়ের বাহিনী
সুমনাও ওদের বলতো 'ঠোলা',
আমরা ওর দুপাশে দুই দেয়াল হয়ে হেঁটেছিলাম
স্টেশন অব্দি, ট্রেনে ওঠতে ওঠতে
ওর লম্বা বেণী ফাঁকি দিয়ে শেষ ঝরা চুলটা
উড়ে এসে পড়েছিলো তোর গালে
আমার সত্যিই ভীষণ হিংসে হয়েছিলো তোকে,
সেদিন থেকে, আমি মনে মনে একঝাঁপি কাদা মেখে দিতে চেয়েছিলাম তোর মুখে।

তার পর দিন গেলো, মাস বছর,
ফুরফুরে দখিনা বাতাস ফুরিয়ে হেমন্ত এলো চারবার
আমাদের ফসলের ছোট ছোট মাঠ
ছেয়ে গেলো একের পর পাকা ধানে
সুমনার বাঁশের গারদ ঘেরা ছোট্ট জমিটাতে
শুধুই জমেছিল আগাছা।

সেদিন কি হয়ে ছিলো? মনে আছে কি তোর?
আমরা আক্রান্ত নগরে নেমে দিগ্বিদিক
পালাচ্ছিলাম তিনজন,
সুমনার ভয়ার্ত হাত ধরেছিলি তুই
আমার কাঁধে ওর সবুজ রংয়ের ব্যাগ,
কোথা থেকে আচমকা এসেছিল বিস্ফোরণ,
আমি আর সুমনাকে দেখতে পাইনি
শুধু সাদা ধোঁয়া হিমালয়ের চুড়ো ভাঙ্গা বরফের মতো
গ্রাস করেছিলো সুমনার মায়াবী শরীর।

সুমনার নীচ ঠোঁটের তিলটা কি তুই দেখতে পেয়েছিলি?
শেষ বার?

#মাহমুদ_রিয়াদ_পলাশ
২৯/৯/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।