একদল পোষা শুয়োর
- শেখ রবজেল হোসেন ২৭-০৪-২০২৪

মাঝে মাঝে একদল পোষা শুয়োর দেখি বহুদিন ধরেই,
হঠাৎই হাজির হয় আমার কোনো শুভক্ষণে আমার ফসলের মাঠে।
বিশাল আকাশের নীচে একটা মাঠের মাঝখানেই আমার ফসলের জমিনটা,
আমি চাষাবাদ করে ওটাতেই ফসল ফলাই বারোমাস।
প্রচন্ড খরায় চৌচির আমার জমিন চেয়ে থাকে আকাশের দিকে,
আমি বারবার দ্বারস্থ হই খোদার নিকট একটা দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টির জন্য।
তারপর একদিন কালো মেঘে ভরে যায় ফ্যাকাশে আকাশটা,
চারিদিকে বিদ্যুৎ চমকায় গাঢ় কালো আঁধারের মাঝে।
আমি কাস্তে কোদাল হাতে বেরিয়ে পড়ি সব ঝড় ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে,
পথিমধ্যে আকাশের কান্না বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দেয় আমার শরীর।
মাথালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা এসে শীতল করে দেয় আমার উষ্ণ মগজ,
চৌচির জমিনটাও অবিরাম বর্ষনে ওর যৌবন ফিরে পায়।
আমি বহুকষ্টে জমিনের চারপাশে আইল বাঁধি সারাদিন ধরে,
একসময় পানিতে ভরে ওঠে আমার বুকের মত শুস্ক জমিনটাও।
আমি কাদাপানির সাথে খেলা করি বিশাল আকাশের নীচে একা।
হালের বলদ বেচে খেয়েছি গতবার জমিনের ফসল না পেয়ে,
একদল পোষা শুয়োর কোথা থেকে এসে খেয়ে গিয়েছিলো সব ফসল।
আমি অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম আমার জমিনের পাকা ফসল তুলতে,
কিন্তু আমার জমিনে এসে দেখি সমস্ত ফসল আমার নষ্ট করে গেছে।
সারাটা জমিন খুঁড়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে গেছে একদল শুয়োর,
আমি জেনে গেছি ওগুলো বুনো শুয়োর ছিলো না, ওগুলো ছিলো পোষা শুয়োর।
কিছু চিহ্ন রেখে গিয়েছিলো ওরা,ওদের অস্তিত্ব বোঝাবার জন্য,
ওরা ছিলো কোন লোভী হিংসুক স্বার্থপর মনিবের পোশা ভদ্র শুয়োর।
আমি ভুলে গেছি,ভুলতে চাই ওদের;আমি আবার নতুন করে চাষ শুরু করি,
জমিনের চারপাশ কোদালের কোপে ক্ষত বিক্ষত করি।
নতুন আইল বাঁধি আমি বৃষ্টির মাঝে ভাঙা মাথাল মাথায় দিয়ে।
দেশলাইয়ের ভাঙা খোলটা বিড়ির সাথে খুব সাবধানে গোঁজা আছে কোমরে,
আমি জমির আইলে কাদায় বসে একটা আকিজ বিড়ি জ্বেলে নিই।
আমি চেয়ে দেখি আমার জমিনটা পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে,
আমার দিকে তাকিয়ে যেন হাসে জমিনটা,আমি নিজের ছায়া দেখি জমিনের বুকে।
ছেঁড়া লুঙ্গিটা একদম ভিজে গেছে জমিনের কাদা পানিতে,
কোনমতে ওটা পরনে লেগে আছে আমার শেষ সম্বলটুকু ঢেকে।
আমি উঠে পড়ি, কোদাল হাতে আরও কিছুক্ষণ কাদা পানিতে কাজ করি,
তারপর জমিতে জো এনে আবার নতুন চারা পুঁতে দিই।
আমার জমিনে পুঁতে দেয়া চারাগুলো দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে ওঠে,
আমি সার পানি দিয়ে ওগুলোকে অনেক যত্নে লালন করি।
সবুজে ভরে যায় বিশাল আকাশের নীচে আমার একখন্ড মাঠ।
আমি চারপাশ দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখি দখিনা বাতাসে ফসল দোল খায়,
খুশীতে আমার বুকটা ভরে ওঠে,আমি ফসলের সাথে কথা বলি।
ফের দিন গুনতে থাকি নতুন ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায়,
আমি আঙুলের কর গুনে গুনে হিসাব করি ফসলের পরিমান।
জমিনের বুকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে আমি সন্ধ্যায় বসে থাকি,
তারপর একসময় সমস্ত মাঠ ঘুমিয়ে গেলে আমি বাড়ি ফিরি।
সময় হয় ফের ফসল ঘরে তোলার,আমি ঘুমাতে পারি না,
খুব ভোরে ছুটে আসি ফসলের মাঠে আমার জমিনে।
আমি আবারও ভেঙে পড়ি,একদল পোষা শুয়োর ফের এসেছিলো,
খেয়ে গেছে আমার জমিনের পাকা ফসল,রেখে গেছে কিছু উচ্ছিষ্ট।
আমার স্বপ্নের লালিত জমিনটাকে ওরা ক্ষত বিক্ষত করে গেছে,
ওটা আবার আগের মত স্বাভাবিক করতে আমার আরও অনেক সময় চলে যাবে।
আমি ভেঙে পড়ি আবার উঠে দাঁড়াই কাস্তে কোদাল হাতে,
আবারও বৃষ্টির অপেক্ষায় বারবার প্রার্থনা করি খোদার নিকট।
আমি কাদা পানিতে শরীর ডোবাই,আবার চাষ করি নতুন ফসল,
ফের একদল পোষা শুয়োর নষ্ট করে দেয় আমার ফসলের মাঠ।
আমি হার মানি না,আবার উঠে দাঁড়াই;
এভাবেই একদল পোষা শুয়োর বারবার আমাকে হারাতে চায়।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।