বন্ধু
- ACHINTYA SARKAR/অচিন্ত্য সরকার[পাষাণভেদী] ২৭-০৪-২০২৪

বন্ধু
অচিন্ত্য সরকার

কেকা সবে ক্লাস নাইন-এ উঠে শাড়ি ধরেছে। শরীরে মনে লজ্জাবতী শিহরণ।এমন সময় কৌশিক আসে ওর জীবনে।রঙিন ডানায় উড়ে উড়ে চলে কিছুদিন।কতদূর উড়েছিল তা সঠিকভাবে তিন জনই জানে,কেকা কৌশিক,আর উপর ওয়ালা।
তবে অল্পদিনের মধ্যে কৌশিকের চোখ পড়ে কেকার বন্ধু মিতার উপর।ধুর্ত কৌশিক মিতাকে দিয়েই কৌশলে সে কথা কেকার কানে তোলে।রাতে ফোটা ফুল যেমন ভোরের ঝড়ে নূ্য়ে পড়ে, কেকার অবস্থা তেমনি হয়। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে,বাড়িতে শুধু শাসন আর অনুশাসন,বন্ধু কেও নেই।কয়েক মাস বাদেই মাধ্যমিক।টেস্টের রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছে ।এমন সময়ে অতীন মাস্টার আসে ইংরাজী পড়াতে।
অভিজ্ঞ অতীন লক্ষ্য করেন কেকার মধ্যে একটা তালকাটা ভাব,কোন কিছুতেই যেন মন নেই।তিনি বন্ধুর মতো হয়ে তার সমস্যার কথা জানতে চান।কয়েক দিনের মধ্যে কেকা সোনা লতার মতো অতীন কে আশ্রয় করে সহজ হতে চায়।অকপটে বলতে থাকে তার মনের কথা।অতীনও অকপটে নিজের জীবনের কথা বলে কেকাকে আরও সহজ করতো এবং নিজেও হাল্কা হতো।এই বন্ধুত্বের প্রভাবে পড়াশুনোতেও বেশ মন বসেছে কেকার।মাধ্যমিকে ভালো আর উচ্চ মাধ্যমিকে বেশ ভালো ফল করেছে সে। ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে। যে মেয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবতো সেই এখন কেরিয়ারের স্বপ্ন দেখছে।
অতীন বুঝতে পারেন কেকার কিশোরী মনে অটুট ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে সে। ওর বন্ধুত্বের খুনশুটির বাড়াবাড়িতে মাঝে মাঝে অতীনের মনে ভয় হয়,এই কিশোরীর অমোঘ প্রলোভলে নিজেকে সংযত রাখা সহজ হবে না। কেকাও কেমন যেন বড্ড বেশি সাহসী হয়ে উঠেছে।এক এক সময় সংযত, সাবধানী অতীন কে হাত ধরে টেনে নিত নিজের কাছে।ভাসাতে চাইত তার কিশোরী মনের খেয়ালী জোয়ারে।কিন্তু অতীন কখনও নিজের সীমা অতিক্রম করেননি।অতীনের এই সংযমই হয়ত কেকার সাহস আরও বাড়িয়ে দিত।অতীন বাব বার কেকাকে বোঝাতো,কিন্তু ও যেন বেয়াড়া সাহসী হয়ে উঠেছে। তবে সংযমের কঠিনতর পরীক্ষাতেও অতীন হেরে যাননি।
এক দিন ঘরে ঢুকতেই আচমকা কেকা অতীন কে টেনে নেয় নিজের কাছে। এদিকে কেকার মাও সেই মুহুর্তে দরজার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন।মাস্টার ছাত্রীর এমন সম্পর্ক যে তার পরিচিত জগতে বেমানান। তাই তিনি স্বাভাবিক ভাবে অতীন কেই ভুল বোঝেন।যে সব মানুষের জীবনে বিপরীত লিঙ্গের সাথে নিখাত বন্ধুত্ব হয়নি,তারা এই দুই এর মধ্যে কেবল একটা সম্পর্কই দেখতে পান।কেকার সত্যি বলাতেও কোন কাজ হয় না।পড়ানো বন্ধ হয় অতীনের।
জলের মধ্যে বিশেষ অ্যাঙ্গেল থেকে দেখলে সোজা লাঠিকেও বাঁকা দেখায়। কেকার মার মতো অতীনের পরিবারও অতীনকেই ভুল বোঝে।এ ব্যাপারে অবশ্য অতীন অপেক্ষা অতি উৎসাহী ঈর্ষা কাতর প্রতিবেশীর ভূমিকাই বেশী ছিল। তবে কৃতিত্ব যারই হোক,কেকা আর অতীনের বন্ধুত্বে চিরতরে ইতি পড়ে।
কলেজে এক বছর ড্রপ দেয় কেকা।এই বিশাল ভীড়ে ঠাসা পৃথিবীতে সে যেন হঠাৎ করে আবার একা হয়ে গেছে।তবে অল্প দিনের মধ্যে সে রমেশ নামে একটা ছেলের প্রেমে পড়ে।রমেশ কে হয়ত কেকা অতীন বলেই ভুল করেছিল। পৃথিবীতে জীবন দর্শন তো আর এক প্রকার নয়। কারপে ডিয়েম(carpe diem) দর্শনে বিশ্বাসী মানুষের তো আর অভাব নেই। বছর দুই এর মধ্যে এক দিন হঠাৎ শোনা গেল ধনী ব্যবসায়ীর ছেলে রমেশ তার বাবার বন্ধুর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে গোয়ার একটা হোটেলে উঠেছে।পরদিন খবর এলো কেকা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। বিষের শিশি চাপা দেওয়া সুইসাইড নোটে দু'টো কথাই লেখা-"রমেশ,তোমাকে হানিমুলের সুভেচ্ছা রইল।বন্ধু,আমায় ক্ষমা করো,তুমি কাছে থাকলে হয়ত এবারও বেঁচে যেতাম।"পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে প্রকাশ, কেকা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল......

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।