একজন বিজয়ীর চিঠি
- শেখ রবজেল হোসেন ২৬-০৪-২০২৪

আয়েশা কেমন আছো তুমি?
আর আমাদের সন্তানেরা?
এখনও কি তোমরা সবাই মিলে আমাকে খুঁজে বেড়াও?
সেই যে সে রাতে তোমাকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম অনেক দিন পরে,
স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেয়ার পর তেমন আর একটি রাতও পাইনি।
ভেবেছিলাম যুদ্ধ তো শেষ হয়ে গেছে আমাদের,
তাই দীর্ঘ নয়টা মাস পরে তোমাকে জড়িয়ে ধরে একটা শান্তির ঘুম ঘুমাতে চেয়েছিলাম।
খোকনরাও পাশের রুমে নিশ্চিন্তেই ঘুমাচ্ছিলো,
মনে পড়ে তোমার সে দিনের কথা?
বিজয়ের আনন্দ তখনও পুরোপুরি পাইনি আমরা,
আমার আপন বড় ভাইটাকে আলবদর বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়েছিলো ;তাকেই খুঁজছিলাম ক'দিন ধরে।
সারারাত তুমি আমাকে আদর করে অনেক বুঝিয়ে শান্ত করেছিলে,
ফরজ গোসলটা সেরেই ফজরের নামাজে যাবো ভেবেছিলাম।
হঠাৎ দরজায় একটা পরিচিত মানুষের ডাকে তড়িঘড়ি করে কপাট খুলে দিলাম,
এক নিঃস্বাসে সে বলে দিলো আমার ভাইয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে।
তোমাকেও বলার সুযোগ হয়নি আমি কোথায় যাচ্ছি,
খোকন সোনাদের ঘুমন্ত মুখগুলোও এক পলক দেখে আসতে পারিনি।
আমার রক্ত আমাকে এতোসব ভাবার সময় দেয়নি,
আমার মা, ভাই,দেশ; সবার স্বাধীনতার জন্যইতো এতো রক্ত ক্ষয়।
আমি তড়িঘড়ি করে হাতের ঘড়িটা টেবিলেই ফেলে এসেছি,
জানিনা ঘড়ির কাঁটা কতটা পথ পাড়ি দিতে পেরেছে।
আমার জীবন ঘড়ির কাঁটা থেমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে,
হয়তো আর কিছুক্ষণ পরেই চিরকালের জন্য থেমে যাবে।
এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আর বুদ্ধিজীবীদের ফাঁকি দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে,
হানাদার বাহিনী তাদের দোসরদের সহযোগিতায় আমাদের গুলি করে চলে গেছে।
আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ওদের অস্ত্রের মুখে পেরে উঠিনি,
আমার বুকটাও ঝাঁঝরা করে দিয়ে গেছে ওরা।
আমি কোনমতে এখনও বেঁচে আছি,
আমার ভাইকে খুঁজেছি শত শত মৃত লাশের মাঝে কিন্তু পাইনি।
ওরা ফিরে যাওয়ার সময় আঁধারে একটা রাজাকারকে জাপটে ধরে ফেলেছি,
আমার পকেটে থাকা কলম দিয়ে ওকে খু্চিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছি।
রাজাকারের লাশটা আমার বুকের উপর পড়ে ছিলো,
আমি প্রানপনে ওটাকে সরিয়ে ফেলেছি আমার শরীরের উপর থেকে।
আল বদরের রক্তের ছিটেফোঁটা মেখে গেছে আমার শরীরে,
অনেক ঘৃণা লাগছে আমার;শরীরটা রি রি করছে।
আমারতো ফরজ গোসল করে পবিত্র হওয়ার কথা ছিলো,
তুমি কি বরই পাতা দিয়ে আমার জন্য পানি গরম করেছো?
আমি কি আরও নাপাক হয়ে গেলাম না রাজাকারের রক্তে?
আমাকে একটু গোসল দিয়ে যেতে পারো না তোমরা কেউ?

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।