অনামিকা কেমন আছো?
- শেখ রবজেল হোসেন ২৭-০৪-২০২৪

অনামিকা,
অনেক দিন হলো তোমাকে দেখিনা,
কেমন আছো তুমি?
আমাকে মনে পড়ে না তোমার?
নাহার টাওয়ারের একুশ নম্বর দোকানটা?
এখানেই তো সেলস গার্ল ছিলে তুমি।
দেশী বিদেশি কত কসমেটিক আর লেডিস ওয়্যার বেচতে।
একদিন আমি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সুন্দর সুন্দর পোশাকগুলো দেখতে ছিলাম,
হঠাৎ তুমি ডেকে বললে, কিছু নেবেন স্যার?
আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি তখন।
আমার নিজের প্রয়োজনীয় কিছুই ছিলো না তোমার দোকানে,
মানে পুরুষের কোন কিছু বেচতে না তোমরা।
তারপরও তুমি খুব কাছে এসে দাঁড়ালে,
একটা লেডিস ব্যাগ হাতে নিয়ে বললে, স্যার এটা নিন, খুব ভালো এটা।
অনেক নামী দামী ব্র্যান্ডের লিপস্টিকও দেখালে আমায়,
তারপর থেকে প্রতিদিনই আমি ছুটে আসতাম নাহার টাওয়ারে রাত দশটার দিকে।
সে সময় মহিলা ক্রেতাদের ভীড় অনেক কমে যেতো,
তুমি আমাকে একটা একটা করে সব পন্য দেখাতে।
আমি কোনদিনই কোনকিছু খরিদ করিনি,
তবুও তুমি একটা দিনও বিরক্ত হওনি।
সবসময়ই হাসিমুখে বলতে,কি নেবেন স্যার?
আমি চাইতাম তুমি আরও আমার গা ঘেঁষে দাড়াও।
তোমার শরীরের সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়ার জন্যই আমি কাছে যেতাম,
কি এক মিষ্টি সুবাস ছড়াতো তোমার পোশাক হতে।
কখনোই জিজ্ঞেস করার সাহস পাইনি,
তুমি নিজেও বলোনি আমায় সে সুগন্ধিটার নাম।
মনে পড়ে একবার তোমার প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একটা অন্তর্বাস হাতে নিয়ে বলেছিলাম এটার দাম কতো?
তুমি মুচকি হেসে বলেছিলে, স্যার কত সাইজ দেবো?
আমি বলতে পারিনি তখন ;তুমি কত সাইজ পরো?
অবশেষে তুমিই লজ্জা ভেঙে বললে, স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড দেখতে কেমন হবে?
আমি এটুকুই বলেছিলাম, আপনার মতোই।
তুমি হেসেছিলে অনেক মিষ্টি করে,
তারপর বললে, আমিতো থারটি ফোর পরি।
আমি ওটাই নিয়েছিলাম তোমার পছন্দে তোমারই জন্য,
তারপর ইচ্ছে ভুলেই ওটা তোমাদের ওখানেই ফেলে এসেছিলাম।
ওটা আজও কি তেমনই প্যাকেটে মোড়ানো তোমার শেলফে পড়ে আছে?
তুমি ছাড়া কেউ নেইতো আমার ওটা পরার।
আমি ফেলে যাওয়া অন্তর্বাস নিতে আসি না রোজরোজ,
তোমাকেই খুঁজতে ছুটে আসি আজও।
ওটা কার জন্য কিনেছিলাম তা তুমি জানতে না,
যদি জানতে তাহলে এভাবে ফেলে রাখতে পারতে না।
অনামিকা,
আজও দোকানে আসি প্রতিদিন,
কিন্তু তুমি আর ফিরে আসো না কোনদিন কখনোই।
এখনকার সেলস গার্লটা আমাকে দাঁড়াতে দেয় না এখানে,
মুখে ওর হাসি নেই, সুঘ্রাণও নেই।
আমার এখন ইচ্ছে হয় না এখানে আসতে,
তবুও তোমার অপেক্ষায় প্রতিদিন ছুটে আসি।
অনামিকা,
কেমন আছো তুমি?
তুমি কি আর কখনোই ফিরে আসবে না?
মনে মোর অসংখ্য প্রশ্ন জাগে অনামিকা।
মাঝে মাঝে অনেক ভয়ও হয় জানো?
মনে হয় তুমি বাড়ি ফেরার পথে এক্সিডেন্ট করোনি তো!
তুমি কি এখন হাসপাতালের বিছানায় অনামিকা?
তোমার কি জরুরী ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে?
কেনো যে তোমার ফোন নম্বরটা নিতে পারিনি আমি,
নিজের প্রতি অনেক ঘৃণা হয় অনামিকা।
রাস্তা থেকে কেউ তোমাকে তুলে নেয়নি তো?
তুমি কোন অমানুষের দ্বারা ধর্ষিতা হও নি তো?
না, না, এমন ভাবতেই পারিনা আমি।
অনামিকা,
তুমি বেঁচে আছো তো?
তুমি কি বিয়ে করে স্বামীর ঘরে আছো এখন?
তোমার স্বামী তোমাকে ভালোবাসে তো?
কারণ অকারণে কখনও কি গায়ে হাত তোলে?
শ্বশুরবাড়ির সবাই অনেক আদর করে?
অনামিকা,
তোমার ঠোঁটের কোণে তেমনই হাসি হোক অমলিন,
যদিও এখনও আমি তোমার অপেক্ষায় থাকি প্রতিদিন।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।