সার্কাস
- নাছির রিয়াদ ২৬-০৪-২০২৪

দুর্ভিক্ষের মত তীব্র হাহাকার,
লেগে আছে স্বপ্নে
রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে গতিময় চিল
যেন মৃত্যু এলেই জীবনের ঘুম ভেঙ্গে যায় সুতীব্র চিৎকারে।

পৃথিবীর মলিনতম জামাটির আয়ু বেড়ে যায় পথকলির গায়।
কর্পোরেট ক্যালকুলেটরে গোনা যায়না যে ভাতের দানাটির দাম, সেই আধুলির পিছনেই ক্ষয়ে যাচ্ছে একটা জীবন।

আদালতের মাথায় পতপত করে ঊড়তে থাকা পতাকার মতই ভূভুক্ষের পেটে ছুঁচোর উড়াউড়ি। সাম্য,ন্যায় বিচার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যার সামনে। ঝুঁকে আছে মাথা।

চাকচিক্যের কাছে বেচে দিয়ে ভালোবাসা, সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা খুঁজি বর্ণে, তাইতো প্রেমের নামে লুট হয়েগেছে বিশ্বাস,
গভর্নরের স্বাক্ষর তলে বিনষ্ট আম-ছালা দুই।

ঈশ্বরের নামে যে শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলে তোমরা, নাম দিয়েছিলে ধর্ম৷
বিশ্বাসের মোড়কে পেছিয়ে বাজারজাত করেছ অন্ধত্ব, তাই শান্তির আগুনে পুড়ছে মানুষ... আহা!

রাজার কাছে নীতি বন্ধক রেখে জীবনের দাম কিনতে গিয়ে দেখি বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে সমস্ত অধিকার৷
গনতন্ত্রের স্ট্যাম্প মেরে সিলগালা করে দেওয়া কন্ঠস্বর বর্গাচাষির দখলে তবুও নিয়মিত খাজনা দিতে হয়।

বাদী-বিবাদী আর মতবাদী হয়ে উঠার দৌড়ে নিজেকে সমর্পণ করে আটকে গেছ জগতের নিকৃষ্টতম কালো মুখোশে৷ অনিবার্য সত্যের মুখোমুখি হতে তোমাদের ইতস্ততা দেখ হাঁসে শয়তান।

কালো মার্সিডিজের প্রগাঢ় কাঁচের ভেতরেও যে ময়লার স্তুপ দেখে তোমাদের ভ্রু-কুচকে উঠে, সেখান থেকে কুড়িয়ে নেয়া বাসি খাবারের খানিকটা মুখে পুরে দেয়ার দৃশ্য তোমাদের বমির উদ্রেক করে, দায়ের উদ্রেক করেনা

অধিকারের নামে বিলবোর্ডে ঝুলে আছে জগতের সুন্দরতম পায়রাটি, সাহসের পুঁজিবাদী সংজ্ঞায় বিকিকিনি হয়ে গেছে শরীরের ঘ্রান। পুঁজিপতি সোডিয়াম বাতি কিনে নিয়েছে পূর্ণযৌবনা জোছনা।

তোমাদের অরক্ষিত উচ্ছিষ্টে ডুবে গেছে যার ভিটেমাটি, তার হাত দুটিকে ভাবছ ভিক্ষের থাল। অথচ সে হাতের রেখায় ভাসছে তোমাদেরই কর্মফল। যেন ছিমনির মুখ বেয়ে ঊড়ে যাওয়া ধোঁয়ার মতই ঊড়ে গেছে বোধ।

যাবতীয় শরীরবৃত্তীয় ব্যাকরণে মোড়ানো সাহিত্যে প্রকৃতির সন্তানেরা থেকে গেছে আচ্ছুত। কারণ সেখানে নেই কোন রগরগে দৃশ্যপট যা তোমাদের কুলীন খায়েশে প্রলেপ দিতে পারে।

নিরাপত্তার নামে জীবন বাঁচাতে বানাচ্ছ মৃত্যুর ঔষধ। অথচ আকাশকে ছাদ বানিয়ে ঘুমিয়ে পড়া মানবশিশুটির নিরাপত্তা কি? প্রশ্ন করলেই বেরিয়ে পড়ছে তোমাদের ড্রাকুলার হিংস্র দাঁত।

উল্কাপিন্ডের লেজ খসে পড়ার যাবতীয় ইতিহাস তোমাদের নখদর্পনে অথচ জীবনযুদ্ধে খসে পড়া তারাটির খোঁজনেই তোমাদের ডাটাবেইজে। যেন জীবন বাগানের সে এক কাঁটাওয়ালা ক্যাকটাস।

ছিপি খোলা বোতলের মায়াবী জলে ধুঁয়ে তোমরা যে রঙিন ধোঁয়ায় সুখী হওয়ার অভিনয় করছ, তার নিচে চাপা হৃদয়ের বিচ্ছন্ন চরাচরে অন্তহীন শূন্যতার খবরে তোমরা গাফেল।

দুর্মূল্যের বাজারে মজুদদারী মহাজনের আড়তদারি ব্যাবসা। খাটিয়ার সামনে খয়রাতি আহাজারি ফুলেফেঁপে ওঠে । হাভাতে সমাজে পুষ্টিবিজ্ঞান কেবলই উচ্চশিক্ষার বিজ্ঞাপন।


এই সার্কাস শো দেখতে দেখতে কাকতাড়ুয়াদের মানুষ হতে ইচ্ছে করে ঠিক তখনই ক্ষমতার দাঁড়কাক মলত্যাগ করে তার মাথায়। বলে, চুপ!

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।