তুমি জীবন দেখনি নারী
- ধীমানপূরবী ১০-০৫-২০২৪

তুমি জীবন দেখনি নারী
ধীমানপূরবী
তুমি জীবন দেখনি নারী,তোমাকে পাবার জন্যে ঢালাইয়ের কাজ
করেছি, ব্যালছা ঠেলেছি, অনেক কষ্ট হয়েছিল নারী
ফোসা পরে পরে হাতে কড়া পরেছে নারী,
নারী তুমি জীবন দেখনি;ছেনি ধরেছি রড কেটেছি; হাম্বুলের মাইর
খেয়েছি নারী
গাজীপুর রেলস্টেশন,রতখোলা ভাদুন বাজার এখনো মরেনি
নারী; নারী তুমি জীবন জানো না, ভাদুন বাজার স্কুলের পাশে
কিছু দূরে সাতসকালে ঢালাইয়ের কাজ করেছি সন্ধ্যা করে ফিরি| প্রথমে দুইসূতি পরে চারসূতি রড কাটি বেলা ক্ষান্ত হয় কাজ
আর থামে না| ভাদুন বাজারের পাশেই বড় একটা সুটিং স্পোর্ট
আছে, রোজ নাটক সুটিং হয়, পাজারু;টয়েটা গাড়ি আসে যায়|
ওরা মনে হয় বিখ্যাত জীবন নিয়ে আসে; জীবন বানায়...
আমি প্রতিদিন মাথায় করে ভাত উবাই সঙ্গীদের জন্য; কখনও
শাবল মাটাম কুন্নি, টেপ,ব্যালছা, কড়াই তক্তা প্রভৃতি বহন করি
হাপিয়ে উঠি ভয় পাই আবার মনে হয় চার একের ঢালাই হবে|
নারী তুমি চার একের ঢালাই দেখনি; দেখনি জীবন,তুমি জানো না কয় কড়াই বালু কয় কড়াই খোয়া কয় কড়াই সিমেন্ট কয় কড়াই
নূড়ি পাথর দিতে হয়; তুমি জানো না নারী জীবনে কয়টি রড বাঁধতে হয়;সিঁড়িতে কতটা রড থাকে কতটা থাকে প্রতিটা পিলারে পিলারে...
পরসু যে বাড়ির ছাদ ঢালাই দিয়েছি আমরা, ভাইভ্যাটারে শব্দে
সমস্ত কণাগুলো আন্দোলিত হয়ে একটু পরে শক্ত হবে
কিন্তু আমরা আর ঐ ছাদে উঠতে পারি না নারী; আমাদের কোনো অধিকার নেই..
নারী তুমি জীবন দেখনি বেঁচে থাকার জন্য বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে
ভাত খেয়েছি! বন্ধুও উদর পূরন করেছে এভাবে কৎদ্দিন চলে
নারী তুমি জীবন দেখনি ভাতের মাড়ের ডাইল; কলার বাগুরার
তরকারী পচা ভাত গরম পানিতে ধুয়ে শুধু মরিচের গুড়া দিয়ে
ভাত খেয়েছি..
লোকে বলে মুন্নি সা'র বাড়ির নাকি গাজিপুরে,সেখানেও আমরা
ঢালাই করেছি, সে কথা জানে না রাষ্ট্র জানো না তুমি জানেনা আর কেউ. .; আমরা সেদিন ভাতের জন্য কেঁদেছিলাম স্বাধিনতার জন্য কাঁদিনি; সে কথা জানে না এন.টিভি কিংবা24 এর টি.ভির দর্শক স্রোতারা|
নারী তুমি জীবন দেখনি তোমাকে পাবার জন্যে জীবনে হয়রান
হয়েছি বন্ধুদের টাকা ধার করে কলেজের বই কিনেছি পাশ করতে পারিনি; নীলফামারীতে টেইলার্সের দোকানে থেকেছি|
যশোর কুমিলায় ভাড়া খেটেছি ধান কেটেছি, কাজ করতে পারিনা তবুও কাজ করেছি তোমাকে পাবার জন্যে নারী..
নারী তোমাকে পাবার জন্যে নাম বদল করেছি হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছি তবুও তোমাকে পাইনি
তেজগাঁও শহরের কলমিতা মার্কেটে নাজমা স্টোরে দিনের পর দিন কাজ করেছি কোনো টাকা দেয়নি শুধু ভাত খেয়েছি শুধু বাঁচার জন্য শুধু তোমাকে পাবার জন্যে; নারী
নভোথিয়েটার, কন্টিনেন্টাল গারমেন্টস, তেজগাঁও কলেজের পাশে নিউস গারমেন্টস, জিয়া উদ্যান সবাই আমার কথা জানে
জিয়া উদ্যানে তিন দিন উপবাস কেটেছি,লন্ড্রি জামা প্যান্ট পরে বড় হয়েছি বারগার খাইনি কোন দিন চাইনিজ রেস্তোরায় যাইনি খাইনি মোগোলাই পরোটা, কোনো দিন কোনো ভালো জিন্সপ্যান্ট পড়িনি কোনো দিন টি শার্ট পড়িনি আজ যখন কেউ আমাকে টি শার্ট দেয় আমি বারবার পড়ি আয়না সামনে দাঁড়াই; আমি তোমার কথা ভুলে যাই ভুলে যাই অতীত, কিছুখন পর তাড়াতাড়ি খুলে ফেলি যাতে না দেখে কেউ, না দেখ তুমি, কোনো দিন বাটা রাটা
যাই হউক জুতা ছ্যান্ডেল কিছু ছিলনা আজও নেই
মানুষের ফেলে দেওয়া সব কিছুতে আমার অধিকার ছিল প্রথমে
তাই তো ভালবাসা যায় এমন কাউকে না যায় না| তুমি বাড়ি আসলে আমার এখনে আসো প্রত্যেকবার আমাকে দেখছিলে, তুমি কেঁদেছিলে? যখন আমি বিড়ি খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকি যখন মানুষের বিড়ি খাওয়া শেষ হয় শেষটুকু নিয়ে খাই.....
হ্যাঁ এই মানুষটা তোমাকে ভালবেসেছিল; তুমি বাসনি
হ্যাঁ আমার বেঁচে থাকায় বেঁচে থাকো তুমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত, মৃত্যুর পরেও...

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।