"কোটা_প্রথার_সংস্কার_চাই"( এক মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠে বেজে উঠা কোটা বিরোধী গান।
- আমির ফয়সাল ২৬-০৪-২০২৪

আমি এক মুক্তিযোদ্ধা বলছি,
আমি সকল মুক্তিযোদ্ধা ভাই এর পক্ষ থেকে বলছি।

আমি তো নিজের স্বার্থের জন্য,নিজের পরিবারের জন্য যুদ্ধ করি নি
আমি নিজের পরিবারের মায়া ত্যাগ করে দেশ জাতির মুক্তির জন্য লড়েছি।
আমি তো না খেয়ে না পড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি যুদ্ধের এক ময়দান থেকে অন্য ময়দান।

আমি আমার সন্তানের জন্য নয়, আমি বাংলার প্রতিটি সন্তানের ভবিষ্যৎ এর জন্য লড়েছি।
আমি বাংলার ধামাল ছেলেদের জন্য একটা মুক্ত আকাশের জন্য লড়েছি।
যে আকাশের তলে ওরা নিজের ইচ্ছে মত কাজ করবে কেউ বাঁধা দিবে না।
ওরা নিজেদের মেধাকে বিকশিত করবে। ওরা দেশকে সত্য আর ন্যায়ের পথে পরিচালিত করবে।
যেখানে কোন অন্যায় বৈষম্য নির্যাতন,নিপীড়ন,নিষ্পেষণ থাকবে না।
যেখানে সবাই পাবে সমান অধিকার। কার থেকে জোর করে হরন করা হবে না তার প্রানের স্বপ্ন।

আমি যুদ্ধ করেছি একটা সাম্যের সমাজের জন্য ,যেখানে বৃক্ষের মত জেগে উঠবে নবীন প্রাণ।
যেখানে থাকবে না কোন লাশের গন্ধ,যেখানে থাকবে না কোন রক্ত বা পুজ,যেখানে গাইবে সবাই সাম্যের গান।

আমি যুদ্ধ করেছি রক্ত ঝরিয়েছি,প্রাণ দিয়েছি জিন্নাহ, ইয়াইয়াহ,ভুট্টদের অত্যাচার থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য।
আমি যুদ্ধ করেছি রক্ত ঝরিয়েছি,প্রাণ দিয়েছি ২৫ই মার্চের কাল রাত আর ফিরে না আসার জন্য।
আমি তো বিদ্যুৎ বন্ধ করে মধ্যরাতে নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুন্ডা আর পুলিশ বাহিনীর বুলেট বোমা ছুড়ার জন্য যুদ্ধ করিনি।

আমি তো আমার নিজের ছেলে মেয়ের জন্য লড়ি নি।
আমি লড়েছি আগামীর প্রতিটি ছেলে মেয়েকে শান্তিপূর্ণ একটা সমাজ রাষ্ট্র দেবার জন্য।

আজ আমার মনে অনেক দুখ, ওরা আমাদের নাম আর আমাদের জীবন দিয়ে অর্জিত স্বধীনতার নাম ভাঙ্গিয়ে খাচ্ছে।
নিজের সার্থে ব্যাবহার করছে আমাদের আত্মত্যাগকে আমাদের বলিদানকে।

আমি কি কখনো আমার দেশের ধামাল ছেলেদের পথ রুদ্ধ করতে বলেছি।
আমি কি আমার পরিবারকে করুণা ভিক্ষা দিতে বলেছি।
যদি শ্রদ্ধাভরে, ময়া করে,দিবেই তবে অন্যের হক অন্যের অধিকার লুট করে কেন?
আমি তো এই লুটরাজের জন্য যুদ্ধ করি নি।

আমার সন্তানেরা তো সাম্যের কথা বলেছিল, ওরা তো সাম্যের গান গেয়েছিল।
আমি তো আমার ছেলেদের ভুরিভুরি সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার জন্য যুদ্ধ করি নি।
যোগ্যতা থাকা শর্তেও কোটা নামক কাটার আঘাতে আত্ম হত্যার জন্যে যুদ্ধ করি নি।

আমি তো লড়েছি একটা সোনার বাংলার জন্য যে বাংলায় আর কোন রক্ত ঝড়বে না।
সালাম, রফিক,শফিক, জাব্বারেরা আর মরবে না।

আমি তো আমার মেধাবী সন্তানদের পুলিশের গুলি খেয়ে মরার জন্য লড়িনি।

আমার সন্তানেরা কি দোষ করেছিলো? ওরা তো ওদের ন্যায্য দাবীটাই করেছিল।
ওরা ফুলের আন্দোলন করেছিলো আর পুলিশ সেই ফুলের জায়গায় ভুল করে ওদের বুলেট উপহার দিল।
সেই ভুলের জন্য সারা দেশের ছাত্র সমাজ এক কাতারে শামিল।
এদের চোখে বিজয়ের স্বপ্ন, এরা যেন নব্য যুগের সালাম, রফিক, শফিক।

আমি তো আমাকে ব্যবহার করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বলি নি।
ওরা আজ আমাকে আমার লড়াইকে আমার আত্মত্যাগকে আমার ভাইদের উৎসর্গকে কলংকিত করেছে।
ওরা আমার সাথে শহীদ লক্ষ লক্ষ ভাই এর আত্মাকে কষ্ট দিয়েছে।
রুহুল আমিন,মতিউর,হামিদুর, রউফ এরা সবাই আজ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে, রাগে ফেটে পড়ছে।
এত রক্ত দেবার পরেও নতুন মতিউরদের রক্ত এখনো বন্ধ হয় নি!

আমি তো আমার কোন সার্থ চাই নি, আমি তো আমাকে করুণা করতে বলি নি।

যদি রক্তই ঝড়েছে, যদি ফুলের বদল ভুলের বুলেটই উপহার দিয়েছে তাহলে বিজয় আসন্ন।
আমরা প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা তোমাদের বুকে ধারণ করে নতুন মুক্তির ডাক দিচ্ছি।
আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিচ্ছি।
অবশেষে বিজয় আমাদেরই হবে,বিজয় আসন্ন।

তোমরা তোমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যান্ত রাজপথ ছাড়বে না।
যদি জীবন যায় তবুও অন্যায় আর অসত্যের কাছে নিজের আত্মাকে সোপর্দ করবে না।
তাহলেই তোমাদের মাঝে আমরা বেঁচে থাকব, আমাদের আত্মত্যাগ বেঁচে থাকবে আর বেঁচে থাকবে আমাদের আদর্শ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।